মোঃ আশিকুর রহমান: মা ইলিশের বংশবিস্তার ও সংরক্ষনের জন্য সরকার বেধে দেওয়া সময়সীমা শেষে গত ২৩ জুলাই মধ্যরাত হতে গভীর সমুদ্র মাছ শিকারে নেমেছে উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা। তাদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা মিলছে রুপালী ইলিশের। খুলনা জেলা শহরে বাইরের অঞ্চল হতে প্রচুর আমদানি হচ্ছে ইলিশের। মৎস শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর গত কয়েকদিনে খুলনা পাইকারী মৎস আড়ৎসহ স্থানীয় বাজারগুলোতে রুপালী ইলিশে ভরপুর খুলনার এখন বাজার।
সূত্রে জানা গেছে, মা ইলিশের সংরক্ষণের জন্য গত ২০ মে মধ্যরাত হতে সরকারি নিষেধাজ্ঞার দরুন ৬৫ দিন বন্ধ ছিল মাছ শিকার বন্ধ ছিল। যার দরুন খুলনা পাইকারিসহ স্থানীয় বাজার গুলোতে ইলিশের সরবরাহ ছিলই না বললে চলে। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে রুপালী ইলিশের নগরীর বাজারগুলোতে ব্যাপাক সরবরাহ শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে, খুলনার রুপসার নতুন বাজারে গিয়ে দেখা গেছে জেলেরা বিভিন্ন জেলা বিশেষ করে বরিশাল অঞ্চল হতে আসা ট্রলার হতে ভ্যান বা ইজিবাইকে করে নামাচ্ছেন ঝাকি ভর্তি রুপালী ইলিশ। বর্তমানে সমুদ্রে বা নদীর মোহনায় কেমন ইলিশ ধরা পড়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে একাধিক জেলেরা হাসিমুখে জানিয়েছে জালে প্রচুর পরিমানে মাছ ধরা পড়ছে। জেলে রফিকুল জানান, সরকারি বিধি নিষেধে পরে প্রচুর কষ্টে ছিলাম অনেকদিন। এখন আবার সমুদ্রে যাচ্ছি বোর্ড নিয়ে মাছ ধরতে। তিনি হাসি মুখে জানালেন বর্তমানে সমুদ্রে জাল ফেলে উঠানোর সময় মনটা ভরে যাচ্ছে। কারণ রোদের আলোতে ঝলমলিয়ে উঠছে ঝাল। প্রচুর পরিমানে ইলিশ ধরা পড়ছে। মাছ দেখে বিগত দিনের কষ্টের কথা ভুলে গেছেন তারা। এছাড়াও নগরীর ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজার, খুলনা জেলা আইনজীবি সমিতির সামনে, নিরালা বাজার, খালিশপুর চিত্রালী বাজার, দৌলতপুর বাজার, ফুলবাড়ীগেট বাজার, শিরোমনি বাজার, ফুলতলা বাজারসহ স্থানীয় বাজারগুলোতে ঢুকলেই দেখা মিলছে তরতাজা ইলিশের। তবে বিক্রেতারা মাছের দাম কম বললেও বাজারে আসা ক্রেতারা অনেকেই আমদানির তুলনায় দাম বেশি বলে মন্তব্য করেছেন।
রূপসা পাইকারি মাছ বাজারের একাধীক বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারে প্রচুর পরিমানে ইলিশের সরবরাহ শুরু হয়েছে। মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দু’দিন পর হতেই বাজারে আসা শুরু করে ইলিশ। বর্তমানে ইলিশের ব্যাপক আমদানি শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই বরিশাল, পাথরঘাটা, পটুয়াখালির মহিপুরসহ চট্টগ্রাম অঞ্চল হতে ইলিশ আসছে।
তিনি আরো জানান, নিষেধাজ্ঞার আগে মাছের আমদানি কম ছিল তবে চাহিদা ছিল প্রচুর। কয়েকদিন আমদানি বেশির কারনে বাজারে চাহিদা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইলিশের উপস্থিতির কারনে অন্যান্য মাছের চাহিদা কমে গেছে।
নগরীর স্থানীয় খুচরা মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে ১কেজি ২০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৪০০ হতে ১৫০০’শ টাকায়, ৭/৮’শ গ্রামের ইলিশ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০টাকায়, ৫/৬’শ গ্রামের প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায় এবং ৩পিসে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়।
বাজারে আসা ক্রেতারা একদিকে আমদানির তুলনায় ক্রেতা চাহিদা থাকার কারণে দাম বেশি অভিযোগ করছেন। অপরদিকে বিক্রেতারা মাছের দামে ন্যায্য রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। তবে প্রান্তিক জেলে, যারা গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছ শিকার করছেন তারা জানিয়েছেন তাদের নিকট হতে মুকামে খুব কম দামে মাছ কেনা হচ্ছে। সমুদ্রে বেশি মাছ ধরা পড়লেও দামের বেলা বেশ কম পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
দৌলতপুর খুচরা বাজারের ইলিশ মাছ বিক্রেতা জয়নাল জানান, আমি খুলনার নতুন বাজার হতে ভোরে গিয়ে মাছ কিনে নিয়ে আসি। বাজারে প্রচুর মাছের সমাগম হচ্ছে। কয়েকদিনে ইলিশের চাহিদার তুলনায় ঘাটতি থাকলেও বর্তমানে আমাদানি প্রচুর। বাজারে বরিশাল ইলিশের ব্যাপক কদর বেড়েছে। অনেকেই বলছে ইলিশের দাম বেশি। আমি পাইকারি বাজার হতে যে দামে কিনি খরচ খরচা বাদ দিয়ে কেজি প্রতি ১০/১৫টাকা লাভ করি।
ক্রেতা সালেহা আক্তার জানান, বাজার অনেকদিন পর ঝুড়ি ভর্তি ইলিশ দেখতে পেলাম। টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকায় দেখছি সমুদ্রে নামি জেলেদের জালে ঝাকে ঝাকে ইলিশ ধরা পরছে এবং প্রচুর ইলিশের আমদানি। দামও নাকি নাগালে। তবে বাজারে এসে দেখলাম মাছ বেশি হলেও দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। মাঝারী সাইজের মাছ ৬০০ টাকা কেজি হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি, তবে সেই মাছ ৮০০ টাকা কেজি।
এড. আব্দুল মান্নান জানান, প্রতিদিনই খুলনা বার কাউন্সিলের সামনে বেশ ভালো মানের মাছ বিক্রি হয়। অনেক সময় বাড়ীতে যাওয়ার সময় মাছ কিনে নিয়ে যায়। বর্তমানে ইলিশের দাম কম ও আমদানি বেশি শুনেছি। তবে কোর্ট চত্ত্বরে মাছের দাম বরাবারই আমার কাছে একটু বেশি মনে হয়। গতকাল ইলিশের দাম শুনলাম। কেজির ইলিশ বিক্রেতা চাচ্ছেন ১২০০ টাকা। তবে ৯’শ হতে ১ হাজার টাকা কেজি হলে মনে হয় ঠিক হতো। ্আমার কাছে দাম বাড়তি বলে মনে হয়েছে।