ঊষার আলো রিপোর্ট : ভোজ্য তেল নিয়ে আবার কারসাজির ছক আঁকছেন ব্যবসায়ীরা। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ১৯০০ থেকে ১১০০ ডলারে নেমে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে আবারও সয়াবিনসহ ভোজ্যতেলের দাম প্রতি লিটারে ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে ভোজ্যতেল আমদানিকারক মিল মালিক সমিতি। সম্প্রতি ডলারের মূল্য বৃদ্ধিকে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ব্যবসায়ীরা। অবশ্য কিছু দিন আগে মূল্য সমন্বয় করে কিছুটা কমানো হলেও বাজারে সেই দামে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন কৌশলে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, বিশ্ববাজারেও তেলের দাম কমার পথে, সেখানে আবার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অপ্রত্যাশিত। সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর সয়াবিনের দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন ভোক্তারা।
এদিকে সরকারও ভোজ্যতেলে দাম বাড়ানোর বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি ।
জানা গেছে, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম যখন বাড়তি ছিল, তখন আমদানিতে সরকারের পক্ষ থেকে ভ্যাট ছাড়, এলসি কমিশন ও এলসি মার্জিন প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব সুবিধা নিয়ে আমদানিকারকরা দেশের বাজারে তেল আনলে দাম কমার কথা। লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষ কম দামে সয়াবিন তেল কেনার সুযোগ পাবেন। কিন্তু দেখা গেছে, প্রকৃতপক্ষে তার বিপরীত ঘটেছে এবং ভোক্তারা এর কোনও সুফলই পাচ্ছেন না।
দাম কমানোর সময়ে ব্যবসায়ীদের কণ্ঠেও ছিল উল্টো সুর। তারা যুক্তি হিসেবে বলেছেন, ভোজ্যতেলের এফওবি দাম কমলেও বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দেশে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়া এবং ডলারের উচ্চ মূল্যসহ বিভিন্ন কারণে ভোজ্যতেলের দাম কোনোভাবেই আগের অবস্থায় নেওয়া যাবে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ আগস্ট বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। মিল মালিকদের দেওয়া প্রস্তাবে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা, এক লিটারের বোতল ২০৫ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৯৬০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। গত ৩ আগস্ট বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে (বিটিটিসি) চিঠি দিয়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন মিল মালিকরা।
দেশের ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বিপণনকারী শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়ার কারণে সয়াবিন তেল আমদানির ব্যয় বেড়ে গেছে। এ কারণে সয়াবিনের দাম নতুন করে সমন্বয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমদানিতে আমাদের খরচ বেড়েছে। ডলারের দাম বেড়েছে, এসব বিবেচনা করে আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দাম সমন্বয় করার জন্য সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’ দাম সমন্বয় না করলে তারা লোকসানের কবলে পড়বেন বলেও জানান বিশ্বজিৎ সাহা।
তবে ট্যারিফ কমিশন এই মুহূর্তে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর পক্ষে নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মিল মালিকরা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিলেও তা চূড়ান্ত করা হয়নি, বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। মিল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে তেলের দাম পুনর্র্নিধারণ করা হবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ জুলাই ট্যারিফ কমিশনের মধ্যস্থতায় সয়াবিন তেলের দাম কমানোর ঘোষণা আসে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, এক লিটারের বোতল ২০৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১৮৫ টাকা, আর ৫ লিটারের বোতলের দাম হওয়ার কথা ছিল ৯১০ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ১৬৬ টাকা, আর পাম অয়েল বিক্রি করার কথা সর্বোচ্চ ১৫২ টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, স্থানীয় বাজারে গত এক বছরে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে (খোলা) ৪৭ শতাংশ, (বোতল) পাঁচ লিটার ৪১ শতাংশ, (বোতল) এক লিটার ৩৩ শতাংশ, পামতেল ৩৯ শতাংশ এবং পাম অয়েল সুপার ৪১ শতাংশ। আর গত জুন ও জুলাই মিলে কমেছে যথাক্রমে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ, ২ দশমিক ১২ শতাংশ, ৪ শতাংশ, ১৫ শতাংশ ও ১১ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, দেশে মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, টি কে গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি ও পরিশোধন করে বাজারজাত করে। আবার কেউ কেউ সয়াবিন বীজ আমদানি করে দেশে সয়াবিন তেল উৎপাদন করে।
বিশ্বব্যাংকের হিসাব ও কয়েকটি তেল ক্রয়-বিক্রয় ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, বিশ্ববাজারে জুলাই মাসে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দর কমে ১ হাজার ৫৩৩ ডলারে নেমে এসেছে। গত ৪ আগস্ট সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল গড়ে ১ হাজার ৪০৬ দশমিক ৬৫ ডলারে বিক্রি হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হিসাব ধরে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে ট্যারিফ কমিশনের তৈরি করা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২৩ মে’র তুলনায় ৩১ জুলাই সয়াবিন তেলের দাম ৩১ শতাংশ কম ছিল।
তথ্য সূত্র : অনলাইন পোর্টাল