মো. আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা, খুলনা : পাইকগাছা পৌর সদরের জনগুরুত্বপূর্ণ জিরোপয়েন্ট এলাকায় যানজট লেগেই আছে। ৩ দিকের সড়কে যানজটের এমন দৃশ্য প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দেখা যায়। সড়কের পাশে বাস পার্কিং করে রাখায় এমন যানজট সৃষ্টি হয়। যানজটের ফলে চলাচলে যেমন ভোগান্তি হয় তেমনি প্রতিদিন ঘটে ছোট খাটো দুর্ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন জনপ্রতিনিধি সহ স্থানীয় প্রশাসন। এখানকার যানজটের বিষয়টি উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির প্রায় প্রতিটি সভায় উত্থাপিত হলেও এখনো পর্যন্ত তেমন কোন প্রতিকার মেলেনি। টার্মিনাল না থাকায় সড়কে বাস রাখতে বাঁধ্য হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন বাস মালিক কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে যানজট নিরসন এবং টার্মিনালের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিকল্প স্থানে বাস রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, প্রায় ৩০ বছর আগে বাস রাখার জন্য পৌর সদরের টাউন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশে জায়গা ক্রয় করে উপজেলা পরিষদ থেকে বাসস্ট্যান্ড করা হয়। সময়ের ব্যবধানে একদিকে যেমন এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বহুমুখীকরণ করা হয়েছে, অপরদিকে বাসও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে পাইকগাছা থেকে খুলনা রুটে এবং পাইকগাছা থেকে কয়রা রুটে বাস চলাচল করে থাকে। এই দুটি রুটে বর্তমানে দুই শতাধিক বাস রয়েছে। কিন্তু পুরাতন যে বাসস্ট্যান্ড রয়েছে সেখানে সামান্য কিছু সংখ্যক বাস রাখা যায়। বাকি সব বাস জিরোপয়েন্ট থেকে শিববাটী ব্রিজ অভিমুখে, জিরোপয়েন্ট থেকে তেলপাম্প পর্যন্ত এবং জিরোপয়েন্ট থেকে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। এদিকে শিববাটী ব্রিজ চালু হওয়ার পর থেকে জিরোপয়েন্ট অধিক জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে। এখান থেকে ৩ দিকে যানবাহন এবং সাধারণ মানুষ চলাচল করে থাকে। এক দিকে খুলনা অভিমুখে, অপরদিকে কয়রা অভিমুখে, অন্যদিকে উপজেলা সদর ও সোলাদানা, দেলুটি এবং গড়ইখালী অভিমুখে মানুষ চলাচল করে থাকে। ফলে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জিরোপয়েন্ট এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। অনেক সময় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। জিরোপয়েন্ট এলাকা পার হতে কখনো কখনো আধাঘন্টা থেকে এক ঘন্টা পর্যন্ত লেগে যায়। দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। যানবাহন চলাচল থেকে শুরু করে পথচারী এমনকি ওই এলাকার বাসিন্দারাও চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে।
উপজেলা বন কর্মকর্তা প্রেমানন্দ রায় বলেন, জিরোপয়েন্টের পাশে আমার বাসায় যাওয়ার রাস্তা। এ রাস্তার সামনে বাস এমনভাবে রাখে আমরা যেতেই পারিনা। অপরদিকে লোনাপানি কেন্দ্রের সামনে এমনভাবে বাস রাখা হয় গবেষণা কেন্দ্র থেকে বাইক চালিয়ে বের হওয়ার সময় দুর্ঘটনার সম্মুখিন হতে হয়। ভ্যান চালক আজুবর গোলদার জানান, আমরা পৌর সদর কেন্দ্রীক ভ্যান চালিয়ে থাকি। জিরোপয়েন্টের পৌরসভার দুই সীমান্তে স্বাভাবিক থাকলেও জিরোপয়েন্ট আসলেই যানজটের কবলে পড়তে হয়।
পথচারী মিনারুল ইসলাম জানান, মাঝে মধ্যে জিরোপয়েন্টে এমন যানজটের সৃষ্টি হয় পায়ে হেটেও রাস্তা পার হওয়া যায় না।
বাস মালিক সমিতির স্থানীয় কমিটির অন্যতম নেতা কাউন্সিলর আব্দুল গফফার মোড়ল জানান, জিরোপয়েন্ট এলাকার যানজট নিয়ে আমাদেরকেও বেশিরভাগ সময় নানা সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। এখানে যাতে যানজট সৃষ্টি না হয় এ জন্য আমাদের শ্রমিকরা সব সময় কাজ করে। সড়কে বাস রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টার্মিনাল না থাকায় আমরা বাধ্য হয়ে সড়কে বাস রাখি। আমাদের এখানে টার্মিনাল নির্মাণ অনেক জরুরী হয়ে পড়েছে।
নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর জানান, টার্মিনাল এবং যানজট দুটো বিষয় একই সুঁতোই গাথা। টার্মিনাল নির্মাণ করলে সড়কের উপর আর বাস থাকবে না, আর বাস না থাকলে যানজট এমনিতেই কমে যাবে। এ জন্য যত দ্রæত সম্ভব টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে।
মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর জানান, পৌরসভা থেকে টার্মিনাল নির্মাণ করার জন্য আমরা অনেকদিন যাবত চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে সিআরপি নামে একটি প্রকল্পে আমাদের পৌরসভা অন্তভর্‚ক্ত হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় বাসস্ট্যান্ডের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা ভ‚মি অধিগ্রহণ করা সহ বাস টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম জানান, জিরোপয়েন্ট এলাকার যানজট নিয়ে সংসদ সদস্যসহ আমরা সবাই বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছি। এখানকার যানজট নিরসন সহ সড়কের বাসগুলো বিকল্প স্থানে নেওয়ার জন্য সংসদ সদস্য মহোদয়ের পরামর্শ এবং সহযোগিতায় আমরা বিকল্প একটি স্থান নির্ধারণ করেছি। নির্ধারিত স্থানে বাসগুলো রাখা গেলে আশা করছি এখানকার যানজট নিরসন হবে। সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এলাকার দীর্ঘদিনের অন্যতম প্রধান সমস্যা জিরোপয়েন্ট এলাকার যানজট দ্রæত নিরসন হোক এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।