UsharAlo logo
মঙ্গলবার, ২২শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ভাদ্রের তপ্ত গরমে নাজেহাল মানুষ

koushikkln
আগস্ট ৩০, ২০২২ ৯:৩৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ আশিকুর রহমান : ষড়ঋতুর পালাবদলে আষাঢ়-শ্রাবণ গড়িয়ে ভাদ্র মাস চলছে। ভাদ্দুরে তাপপ্রবাহের যাতাঁকলের পিষ্টে মানুষসহ জীব-প্রকৃতি অস্থির হয়ে উঠেছে। অস্থির গরমের মধ্যে আবার দীর্ঘ সময়ের লোডসেডিংয়ের বিড়ম্বনা আরো ভোগান্তি বাড়িয়ে তুলছে। শিশু হতে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত অস্থির গরমে ছটফট করছে। সকলে আকাশের দিকে তাকিয়ে একফোটা স্বস্তির বৃষ্টির জন্য। কিন্তু আকাশে মেঘের ঘনঘটা না থাকার দরুন দেখা নেই বৃষ্টিরও।

খুলনা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত ষড়ঋতুতে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসকে বর্ষা হিসাবে বলা হয়ে থাকে। তবে আবহাওয়া অফিসের ভাষায়, জুন হতে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল। অন্য বছরের তুলনায় এবার বৃষ্টিপাত কম। কারন খুলনা অঞ্চলে এবার মৌসুমী বায়ু এবার বেশি সক্রিয় হয়নি। যদি মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হতে তবে বৃষ্টিপাত বেশি হতে। এছাড়া এ অঞ্চলে এবার নি¤œচাপ ও লঘুচাপের প্রভাব কম। নি¤œচাপ বা লঘুচাপ হলেও বৃষ্টিপাত বেশি হতো বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট অফিস।

বর্তমানে প্রকৃতি যেন বেমানান! বর্ষাকালের বিপরীতে গ্রীষ্মের মতো তীব্র তাপদাহসহ ভ্যাপসা গরমের অনুভূতিতে অস্থির হয়ে উঠেছে চারিদিক, চারপাশ। অসহনীয় গরমে নাজেহাল মানুষসহ জীব ও প্রকৃতি। সেই সাথে বর্তমানে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকার ঘোষিত সিডিউল আকারে এলাকাভিত্তিক লোডসেডিং এই তীব্রতাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। হুটহাট নেই বিদ্যুৎ, দিন কিবা রাত। দিনজুড়ে অস্থির গরমের অনুভূতি আর ঘন ঘন লোডসেডিং। দেখা নেই কাংখিত বৃষ্টির। উত্তপ্ত রোদের তপ্ত গরমে নাজেহাল শহরমুখি ছুটে চলা কর্মব্যস্ত মানুষ। তপ্ত গরমে দিশেহারা মানুষ। প্রখর রোদের তাপে অস্থির জনজীবন তবুও জীবন-জীবিকার তাগিদে গরমকে উপক্ষে করেও নি¤œ আয়ের মানুষ তথা দিনমুজুর, সাধারণ শ্রমিক, ভ্যান-রিক্সাচালকসহ রাস্তায় খেটে খাওয়া মানুষের থেমে নেই জীব-জীবিকার যুদ্ধ। বাতাসে ভ্যাপসা গরমের অনুভূতি, স্বস্তি নেই দিনে বা রাতে, ঘরে বা বাইরে, কোথাও! সেই সাথে আবার নতুন করে এলাকা ভিত্তিক লোডশেডিংয়ের বিড়ম্বনা আরো ভোগান্তি বাড়িয়ে তুলছে।

নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বিশেষ করে ডাকবাংলা, শিববাড়ি, সোনাডাঙ্গা, গল্লামারী, নিরালা, জিরোপয়েন্ট, রুপসা, বয়রা, বাস্তহারা, বৈকালী, রায়েরমহল, নতুনরাস্তা, খালিশপুর, দৌলতপুর, রেলিগেট, মানিকতলা, ফুলবাড়ী, শিরোমনির এলাকার বিভিন্ন ফ্যাক্টরী , ওয়ার্কসপ, কারখানা, বাজারঘাট, মিলের শ্রমিকসহ মহাসড়কে চলাচলকারী যানবহনের যাত্রী-চালকসহ স্থানীয় এলাকার বাসিন্দারা অস্থির গরমে ক্লান্তিতে ছটফট করছেন। সকলের মুখে একটাই কথা বৃষ্টির দরকার।

গৃহিনী নাসরিন আক্তার জানান, টিনের ঘর। ভেতরে প্রচুর গরম। দিনের বেলায় তো কথা নেই। মনে হয় ঘরের ভেতর যেন কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে এমন বেতাল গরম লাগছে। তারপর আবার বর্তমানে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে, গেল তো গেল ঘন্টার আগে আসার নাম নেই। বিদ্যুৎ চলে গেলে তো আর রক্ষা নেই। ঘরের ভেতর দরদর করে ঘাম ছাড়ে। ছোট্ট বা””া নিয়ে গরমে খুবই কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। এমন সময় তীব্র বৃষ্টির দরকার।

পথচারী মামুন জানান, এ কেমন রোদ্দুর! বাবা রে, বাইরে বের হওয়া যাচ্ছে না। চোখ মুখ পুড়ে যাচ্ছে। চাকুরি করি বাইরে তো আসতেই হবে। গরমে এতো অস্থির করে তুলেছে যে ঘনঘন পানি, লেবুর শরবত খেতে হচ্ছে।

চাষী তৈয়েবুর জানান, পানির অভাবে পাটে জাক দিতে পারছিনা। পাট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একই সাথে আমন ধান চাষেও বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়েছি। এমন অবস্থায় বৃষ্টির বিকল্প কিছুই নেই। বাধ্য হয়ে পানি অভাবে সেচের মাধ্যমে পুকুর ভরে পাট জাক দিচ্ছি, দিচ্ছি ধানক্ষেতেও পানি। তিনি আরো জানান, আষাঢ়ের শুরুতেই রোপন করা হয় আমন ধানের। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি না হওয়াতে আমন চাষে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। পানির অভাবে অনেকে জমি ফেলে রেখেছে অনেক কৃষক, কারন খরচ বেশি।

খুলনা আঞ্চলিক আওহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ূর জন্য আমরা যে বর্ষাকাল বলি, সেই মৌসুমি বায়ূ এবার বেশি সক্রিয় হয়নি। যদি বেশি পরিমানে সক্রিয় থাকতো হবে বেশ বর্ষার দেখা মিলতো। একই সাথে লঘুচাপ, নি¤œচাপ সৃষ্টি হতো, যা আমাদের উপকূলীয় এলাকার দিকে আসতো তা হলে বৃষ্টির পরিমান বাড়তো। যা বিগত বছরে হয়েছে, এ বছরে এ ধরনের নি¤œচাপ বা লঘুচাপের তেমন সৃষ্টি হয়নি। যা সৃষ্টি হয়েছে তার অধিকাংশ ভারতে উড়িষ্যা দিয়ে চলে যাচ্ছে। আকাশে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা কম রয়েছে, যে কারনে বৃষ্টি না হওয়ার দরুন ভ্যাপসা গরমের অনুভূত হচ্ছে।