UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শহরজুড়ে অনিয়ন্ত্রিত শব্দ দূষণ

koushikkln
সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২ ১০:২৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ আশিকুর রহমান : শহরে শব্দ বাড়ছেই! খুলনার ব্যস্ততম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মোড় ও স্থানীয় পাড়া-মহল্লার চলা যানবাহনের উচ্চমাত্রার শব্দ যেন নগরবাসীর চরম সহ্যযন্ত্রণাসহ ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসহনীয় উচ্চশব্দ বাড়াচ্ছে নগরবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকিও। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, উচ্চশব্দ বা গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবাদে চলাচলতর যানবহনের উচ্চমাত্রার হর্ন শিশু, অন্তঃসত্ত¡া ও হৃদরোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ।

খুলনার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক তথা, হেলাতলা রোড, বড় বাজার, স্টেশন রোড, কোর্ট চত্ত¡র, হাদিস পিকচার প্যালেস, আহসান আহমেদ রোড, শামসুদ্দিন আহম্মেদ রোড, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, গগনবাবু রোড, ডাকবাংলা শিববাড়ি, পাওয়ার হাউজ, ফেরিঘাট, ডাকবাংলা, শান্তিধাম, ময়লাপোতা মোড়, পিটিআই মোড়, টুটপাড়া কবরখানা মোড়, সাতরাস্তা মোড়, গল্লামারী, জোড়াগেট, বয়রা, বৈকালী, খালিশপুর, দৌলতপুর, ফুলবাড়ীগেট, শিরোমণি সড়ক দিয়ে প্রতিদিনই বাস, ট্রাক, পিকাপসহ হালকা হতে ভারী যানবহনের চলাচল অনিয়ন্ত্রিত হারে চলাচল সেই সাথে ইজিবাইক, মোটরচালিত রিক্সা, বেপরোয়া মাহেন্দ্রা-থ্রি হুইলারের মতো যানবাহন যা দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে গোটা শহর। পাশাপাশি একই সাথে শহরের মধ্যে লাগামহীন ভাবে ছুটে চলা যানবহনের সৃষ্ট উচ্চশব্দের হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার, অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচল ও উচ্চ স্বরে বিভিন্ন কোম্পানীর প্রচার-প্রসার ও সামজিক অনুষ্ঠানাদীতে মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম উচ্চমাত্রার শব্দের অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করছেন নাগরিক নেতারা।

শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা অনুসারে নীরব এলাকায় দিনে ৪৫ ডেসিবল এবং রাতে ৩৫ ডেসিবলের মধ্যে শব্দের মাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। একই সাথে জানানো হয়েছে আবাসিক এলাকায় এই মাত্রা দিনে ৫০ ও রাতে ৪০ ডেসিবল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ ডেসিবল, শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ডেসিবল ও রাতে ৭০ ডেসিবল এবং মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০ ডেসিবল শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু শহরে অনেকাংশ শব্দের মাত্রার বিধিমালা লংঘন হচ্ছে।

খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর স‚ত্রে জানা যায়, শব্দের মানমাত্রার দিকদিয়ে যদি সিএনজিকে যদি মোটরযানে অর্ন্তভ‚ক্ত করা হয় এবং বিআরটিএ যদি সিএনজিকে মোটরযান বলে অনুমোদন দেয় সেক্ষেত্রে শব্দের মানমাত্রা হবে ৮৫, নির্বামন নলটিকে সাড়ে ৭ মিটার দ‚রাত্বে মাপতে হবে। শব্দের মানমাত্রা ৮৫ বেশি হলে তা হাইড্রেলিক বা উচ্চশব্দ বলে বিবেচিত হবে যার ব্যবহার সম্প‚র্ন অবৈধ বলে জানায় সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ এস এম আব্দুল ওহাব জানান, উচ্চমাত্রার শব্দ মানবদেহে রক্তচাপ ও হৃৎকম্পন বাড়িয়ে মৃত্যুঝুঁকি পর্যন্ত তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া এবং বধির হওয়ার মতো অবস্থারও সৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি শিশুদের উপরও পড়ে বিদ্রæপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। একই সঙ্গে সড়কের কালো ধোঁয়ার সঙ্গে বস্তুকণা, সালফার ডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাইড, সিসাসহ অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। কালো ধোঁয়ায় থাকা বস্তুকণা ও সালফার ডাই অক্সাইডের প্রভাবে ফুসফুস, কিডনি জটিলতা ও হৃদরোগে আক্রান্তু হয়ে থাকে। এছাড়া নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ও সিসার কারণে শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস ও শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তি ব্যাহত হয়।

বাংলাদেশ মানবধিকার কমিশন খুলনা জেলা সমন্বয়কারী এড. মোঃ মোমিনুল ইসলাম জানান, পরিচ্ছন্ন খুলনা এখন নগরবাসীর কাছে বসবাসের অনুপযোগী বলে আমি মনে করি। পরিচ্ছন্ন শহরের সুনাম ক্ষুন্ন হতে চলেছে প্রতিনিয়ত যানজটের কারণে। শহরে প্রচুর পরিমানে অনুমোদিত যানবহনের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। যানজটের কারণে শব্দ দূষণের মাত্রাও বেড়ে চলেছে। উচ্চমাত্রার শব্দের কারণে হৃদরোগ ও জটিল রোগের প্রকোপ বেড়েছে। শব্দদূষণ বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ করলে সুফল মিলবে বলে আমি মনে করি।

মোটরসাইকল আারোহী শাহীন জানান, শহরে প্রচুর পরিমানে ইজিবাইক বেড়েছে। যেখানে সেখানে দাড়িয়ে পড়ে, শত হর্ন দিলেও নড়ে না। একই সাথে রাস্তার মাঝে হুটহাট করে অসচেতন ব্যক্তিদ্বয় নেমে পড়ে। শতবার হর্ন বাজারে তাদের কানে শব্দ পৌচ্ছে না। কেবলমাত্র সুন্দর ও সাবলীল পরিকল্পনার মাধ্যমেই কেবল উচ্চ শব্দ মাত্রা নিয়ন্ত্রন সম্ভব বলে আমি মনে করি।

মাহেন্দ্রা যাত্রী শামিম জানান, শহরে প্রচুর পরিমানে অনুমোদনহীন যানবহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যানবহনের শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। জ্যামে পড়ে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ন ফোন আসলে রিসিভ করে কথাও শোনা যায় না।

কেএমপি ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মনিরা সুলতানা জানান, খুলনা শহরকে পরিচ্ছন্ন যানজটমুক্ত এবং সকল ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইন-কানুন বাস্তবায়নই তার বড় চ্যালেজ্ঞিং বলে তিনি মনে করেন। সড়কে উচ্চমাত্রার শব্দ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, মহাসড়কে হাইড্রোলিক হর্ন, দ্রæত গতির যানবহন, বেপরোয়া গতি, উল্টো পথে চলাচল, মোটরসাইকেল আরোহীদের হেলমেটসহ দুইজন বাইকে আরোহন অমান্যের ব্যাপারে নিয়মিত অভিযান ও মামলা অব্যাহত আছে।