UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

খুলনা ‘চোখ ওঠা’ রোগের প্রকোপ বাড়ছেই

koushikkln
অক্টোবর ১৬, ২০২২ ১১:৫২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ আশিকুর রহমান: সারাদেশসহ খুলনাতেও ভাইরাস কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগটি মহামারী আকারে ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা একটি মারাত্বক ছোঁয়াচে রোগ। পাশাপাশি রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ হিসাবে চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে যাওয়া, চোখের পাতা ফুলে যাওয়া, ঘুম হতে ওঠার পর চোখের দুই পাতা একসঙ্গে লেগে থাকা, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখের প্রদাহ বাড়া, চুলকানো ও জ্বালপোড়া করা, দেখতে সমস্যা হওয়া, আলোতে কষ্ট অনুভূত করা ও চোখে হলুদ বা সাদা অংশে ময়লা জমা। ওই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থেকে দূরে থাকারও পরামর্শও দিয়েছেন তারা। পাশাপাশি রোগের প্রতিষেধক হিসাবে চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্রে (প্রেশক্রিপশনে) অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহারের পাশাপাশি কালো চশমা পড়া, চোখে হাত না দেওয়া, ধূলাবালি, আগুন ও রোদ হতে দূরে থাকা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া, পুকুর বা নদী-নালায় গোসল না করা, রুমাল ব্যবহারের পরিবর্তে নরম ও পরিষ্কার টিসুৎ ব্যবহার করারও পরামর্শ দিয়েছেন।

নগরীর খুলনার স্থানীয় এলাকাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে শিশু, বয়স্কসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ এই ভাইরাল ইনফেকশন বা চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হয়ে ব্যক্তিগত চিকিৎসকসহ নগরীর হাসপাতালগুলোতে ভীড় জামাচ্ছেন। পাশাপাশি রোগ আক্রান্ত অনেকেই চিকিৎসকের চিকিৎসাপত্র ছাড়াই স্থানীয় পাড়া-মহল্লার ফার্মেসী হতে ড্রপ কিনে ব্যবহার করছে রোগ নিরময়ের জন্য।

জানা গেছে, বর্তমানে ভাইরাস কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে অত্যন্ত ছোঁয়াচে। রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ার ফলে প্রতিদিনই কেউ না কেউ আক্রান্ত ব্যক্তির সস্পর্শে গিয়ে নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্ত হয়ে অনেকে কালো চশমা পড়ে বাইরে বের হচ্ছেন, অন্যদিকে অনেকেই খালি চোখে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নগরীর বিভিন্নস্থানে।

আক্রান্ত জুয়েল জানান, প্রথম অবস্থায় চোখ চুলকায় এবং পরবর্তীতে চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে, সেই সাথে পানিও ঝড়ছে। এছাড়া বাইরের আলোতে তাকানো যাচ্ছে না। চোখ দিয়ে পেচুটি বের হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আক্রান্ত গৃহিনী জোছনা জানান, রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম, সকালে ওঠে দেখি চোখ ফুলে গেছে। চোখ টেনে মেলতে পারছিনা। প্রচুর ব্যাথা, বাইরে তাকাতে পারছিনা। তাকালে চোখে ঝাঁঝাঁলো দেখছি। ডাক্তারের কাছে যাবো।

অভিভাবক সীমা জানান, আমার ৩ বৎসরের বাচ্চাটির চোখ ওঠেছে। চোখে প্রচুর ব্যাথা। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছি। ডাক্তার চোখের ড্রপ লিখে দিয়েছেন। ডাক্তার বলেছেন, ভয়ের কিছু নেই চোখ ওঠার ৫/৭ দিনের মধ্যে আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যাবে। চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হলে বড় ধরনের কোন সমস্যার না হলেও সচেতন থাকা জরুরী বলে জানান।

খুলনা শিশু হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এস আরেফিন টুটুল জানান, বর্তমানে ভাইরাস কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগের বেশ বিস্তার বেড়েছে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, দরকার সচেনতা। বিশেষ করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়া, আক্রান্ত ব্যক্তির সস্পর্শে আসলে সর্তক থাকা। আর আক্রান্ত হয়ে গেলে কালো চশমা পড়া। তবে ওই রোগে জন্য তেমন মেডিসিন প্রয়োগ প্রয়োজন নেই বলে আমি মনে করি, তবে দরকার বাড়তি সর্তকতা। মেডিসিন প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমে দেখতে হবে ব্যাকটেরিয়া না ভাইরাস সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে জানান।

খুলনা বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসক খান নাহিদ মুরাদ অনিক জানান, মূলত চোখ ওঠাকে চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় বলা হয়ে থাকে ভাইরাস কনজাংটিভাইটিস। বর্তমানে সারা দেশে মহামারী আকারে বিস্তার লাভ করেছে। ওই রোগে আক্রান্ত হলে আক্রান্ত ব্যক্তির কি করণীয় এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, প্রথমত করনীয় চোখে হাত লাগাবেনা, পানি লাগাবেন না, চোখে কালো চশমা পড়বে এবং তার ব্যবহৃত জিনিসপত্রসহ সবার হতে আলাদা থাকবে। কারণ রোগটি প্রচন্ড পরিমানে ছোঁয়াচে।

আক্রান্ত ব্যক্তি কি ধরণের চিকিৎসা নিবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, আক্রান্ত ব্যক্তি যে কোনো একটি চোখের অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করবে, তবে অবশ্যই চক্ষু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়া নয়।