UsharAlo logo
শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নগরীর ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি: বেড়েছে শিশু রোগ

koushikkln
নভেম্বর ১, ২০২২ ১০:৪৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

এম এ রহমান : গরম, বর্ষা শেষে শীতের আগমনী সুর বাজছে। বেশ কয়েকদিন রাতে হালকা শীতের পরশ বুলাচ্ছে। ফলে সন্ধ্যার পর নগরবাসীকে হালকা কাপড় ছেড়ে বেশ মোটাসোটা কাপড় পড়তে দেখা যাচ্ছে। প্রকৃতি জানান দিচ্ছে, সামনে শীতকাল। ইতোমধ্যে দিন ও রাতের আর্দ্রতা বেশ করে এসেছে। হঠাৎ আবহাওয়া বা মৌসুম পরিবর্তনে নগরী জুড়ে বেড়েছে শিশু রোগ। রাতে ঠান্ডা ও দিনে গরম, এই দু’য়ে মিলে নগরীতে বেড়ে চলেছে শিশুরোগ। শিশু বিশেষজ্ঞদের বলছেন, প্রতিবছরই মৌসুম পরিবর্তনের কারণে শিশু রোগে বেশ প্রকোপ বাড়ে। আবহাওয়ার বা মৌসুম পরিবর্তন (দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডা)’র ফলে শিশুরা শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকে।

০১ নভেম্বর (মঙ্গলবার) দুপুরে শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখাগেছে, সকাল হতে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত খুলনা ও খুলনার বাইরের এলাকা হতে মোট ২০জন রোগী ভর্তি হয়েছে। স্বাভাবিকের তুলনায় প্রতিদিনই রোগী সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে সিট সংকলণ হচ্ছে না। মৌসুম পরিবর্তণের কারণে শিশুরা শিশুরা শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন।

এছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মৌসুম পরিবর্তনের কারণে যেন ঘরে ঘরে শিশুরোগ তথা জ্বর-সর্দি বা শ্বাস কষ্টের প্রবণতা লেগেই আছে। হঠাৎ মৌসুম পরিবর্তণে শিশু রোগ বেড়ে যাওয়ার কারণে নগরীর সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ শিশু বিশেষজ্ঞদের ব্যক্তিগত চেম্বারে অসুস্থ শিশুকে নিয়ে হাজির হচ্ছেন অভিভাবকদের। একই সাথে নগরীর হেরাজমার্কেটসহ নগরীর স্থানীয় এলাকার পাড়া-মহল্লার ফার্মেসীগুলোতে শিশুদের জ্বর-সর্দি কাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়েও হাজির হচ্ছেন অসুস্থ রোগীর অভিভাবকগণ। শীত আসতে না আসতে মৌসুম পরিবর্তনে পড়ে শিশুদের এমন অসুস্থ হওয়ায় বেশ শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকেরা।

শহর হতে গ্রামের মধ্যে সন্ধ্যা হতে না হতে বেশ ঠান্ডা পড়ছে। রাত যত গভীর হয় হতেই যেন ঠান্ডা নামছে। ঠান্ডার প্রকোপে পড়ে শিশুরোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় চিন্তার শেষ নেই অভিভাবকদের।

দুই মাসের শিশু মাবিয়া জ্বর-সর্দি কাশি নিয়ে গত ৩১ অক্টোবর ভর্তি হয়েছে খুলনা শিশু হাসপাতালে।

খুলনার কৈয়া বাজার হতে আসা রোগী মাবিয়ার মা জানান, বাচ্চার গায়ে প্রচুর জ্বর, শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল, অবশেষ আর দেরী করেনি, সরাসরি শিশুহাসপাতালে নিয়ে এসেছি। বাবুকে এখন নেবুলাইজেশন করছে। আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ।

গত ২৬ অক্টোবর বাচ্চাকে নিয়ে খুলনা কয়রা হতে বাচ্চাকে নিয়ে শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সুমি। তিনি জানান, আমার বাচ্চা মাহিয়াকে গেল ২৬ তারিখে হাসপাতালে ভর্তি করি। বাচ্চার নিউমুনিয়া হয়েছে। এখন অনেটাই সুস্থ।

অভিভাবক হিরা জানান, মেয়ের শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করি। সেবার মান খুবই ভালো। মেয়েকে প্রতিদিনই ডাক্তার সাহেবরা কয়েকবার করে এসে দেখে যান। এখন সে অনেকটাই সুস্থ।
একইদিনে সন্ধ্যায় নগরীর বিভিন্ন শিশু বিশেষজ্ঞদের ব্যক্তিগত চেম্বার ও ফার্মেসীগুলো ঘুরে মৌসুম পরিবর্তনে আক্রান্ত শিশুদের দেখা গেছে চিকিৎসকের সরণাপন্ন হতে। কথা হয় অভিভাবক সালেহার সাথে।

তিনি জানান, মেয়ের দু’দিন ধরে জ্বর-সর্দি কাশি। কাশির মাত্রা বেশি থাকায় নেবুলাইজার দিয়েছি দিনে দু’বার। সাথে কাশি-জ্বরের সিরাপ খাওয়াচ্ছি। থেকে থেকে জ্বর চলে যাচ্ছে আবার আসছে। তাই ডাক্তারের কাছে এলাম। পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন ফার্মেসীগুলোর ফার্মাসিস্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে শিশু রোগ প্রতিষেধক এন্টিবায়োটিক, এন্টিহিস্টামিন, মন্টিলুকাস্ট, কিটোটোফেনসহ লিভোসালভিটামল ওষুধের চাহিদা বেশ বেড়েছে।

কাজী মেডিকেল হলের সত্ত্বাধিকারী কাজী লুৎফর রহমান মুকুল জানান, শীত আসার আগে মৌসুমের পরিবর্তণের কারণে জ্বর, সর্দি, কাশি ডায়েরিয়াতে ভুগছে অধিকাংশ শিশুরা। বর্তমানে শিশুদের জ্বর-সর্দি কাশি, শ্বাস কষ্টসহ ডায়রিয়ার ওষুধের চাহিদা বেশ বেড়েছে।

খুলনা শিশু হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. কামরুজ্জামান জানান, প্রতিবছরই মৌসুম পরিবর্তনে (দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডা) কারণে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কিছুটা শিশু রোগের প্রবণতা বাড়ে। বিশেষ করে শিশুদের জ্বর-সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ ডায়রিয়ার দেখা দেয়। এ সময় শিশুদের বাড়তি যত্ন আর খাবারের দিকে বিশেষ খেয়ালসহ অভিভাবকদের আরো বেশি সচেতন থাকা উচিত।