পলাশ কর্মকার, কপিলমুনি(খুলনা): সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ির হঠাৎ দরপতনে হতাশ হয়ে পড়েছেন কপিলমুনি অঞ্চলের চিংড়ি চাষীরা। তাদের কপালে এখন চিন্তার ভাজ। কিভাবে এ চাষে তারা টিকে থাকবেন ভেবে পারছেন না। ফলে এলাকায় চিংড়ী চাষ নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চিয়তা।
জানাযায়, খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি অঞ্চলে ৮০’র দশক থেকে চিংড়ি চাষ শুরু হয়। এ এলাকায় মোট চিংড়ী ঘেরের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার, যার আয়তন ৮ হাজার হেক্টর। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে সরকার প্রতিবছর মোটাংকের রাজস্ব আয় করে থাকে, যা থেকে এ অঞ্চলের অর্থনীতির ভিত মজবুত হয়। চিংড়ি খাত থেকে ভালো আয় হলে এ জনপদের সকল ব্যবসা ও জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পায়, খুব জোরেসোরে সচল হয় অর্থনীতির চাকা। এ বছরের শুরু থেকে অনাবৃষ্টি ও লবনাক্তার ফলে চিংড়ি উপাদন অনেকটা ব্যাহত হয়েছে। তারপরও কোন রকমে চাষীরা খুড়িয়ে খুড়িয়ে চললেও হঠাৎ বিক্রির দর পতনে একবারেই আশাহত হয়েছেন তারা। চাষীরা এ চাষে বিনোয়োগ করে বছর জুড়ে লাভের স্বপ্ন দেখলেও সে স্বপ্নটা যেন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
ঘেরে হারি ও ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে চিংড়ি চাষ করে বছর শেষে লোকসানের পাল্লাটাই ভারী হবে বলে মনে করছেন তারা। পোনা সংকট, পোনার দাম বেশি, ভাইরাসজনিত মড়ক, জমির অধিক হারি ও ঘের কর্মচারীর খরচ সামলে যখন কৃষকের উঠেছে নাভিশ্বাস, ঠিক তখনই অনেক কমে গেছে বাগদা চিংড়ির দাম। ৯‘শ টাকার চিংড়ি এখন ৬‘শ টাকা, আর ৬‘শ টাকার চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪‘শ টাকায়। এমন অবস্থাতে ভালো নেই বৃহত্তর এ জনপদের সাদা সোনা খ্যাত ‘চিংড়ি’র চাষীরা।
মৎস্য চাষী হরিদাশকাটী গ্রামের পলাশ কুমার মজুমদার বলেন, ‘তেঁতুলতলা মৌজায় আমার ৪‘শ বিঘা ঘের। বাগদা চিংড়ির দাম কমে যাওয়ায় মারাত্মকভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছি। এরপরেও যদি আমরা কাঙ্খিত দাম না পাই তাহলে বছর শেষে হারির টাকা, আর ব্যাংক ঋণ শোধ করতে পারবো না।’
কপিলমুনির চিংড়ি ডিপো ব্যবসায়ী মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইউক্রেন ও রাশিয়া প্রচুর পরিমানে চিংড়ি রপ্তানি হয়ে থাকে, কিন্তু যুদ্ধ চলামান থাকায় ওই দেশগুলোতে চিংড়ি রপ্তানী হচ্ছে কম, যার ফলে দাম কমে গেছে। এখন আমাদের ব্যবসা ভীষণ মন্দা।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ টিপু সুলতান বলেন, ‘করোনা মহামারী, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে নেতিবাচক প্রভাব ও বিভিন্ন দেশ থেকে ভেনামী চিংড়ি রপ্তানী হওয়ায় দাম কমে গেছে।’