ঊষার আলো রিপোর্ট : সরবরাহ ঠিক থাকলেও তেল ও চিনি বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বৃদ্ধির চেষ্টা করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ফলে খুচরা বাজারে তেল ও চিনির সংকট দেখা দিচ্ছে। বাজার পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বুধবার (১৬ নভেম্বর) সরেজমিনে রাজধানীর কাওরান বাজারে যান এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে সাংবাদিকদের বিষয়টি স্বীকারও করেন।
তিনি বলেন, তেল ও চিনি দুটোরই সংকট আছে খুচরা পর্যায়ে। শুধু খুচরা বাজারেই নয়, ডিলারদের কাছেও নেই চিনি। মিল থেকে চিনি দিচ্ছে না, আবার মিলাররা ক্রয়াদেশও বাতিল করছেন, এমন অভিযোগ করছেন ডিলাররা। তবে ভোক্তার মহাপরিচালক জানিয়েছেন মিল থেকে সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।
তিনি জানান, বাজারে তেল-চিনি দুটোরই সরবরাহ কম দেখেছি। আমাদের একটা টিম মিল এলাকায়ও গেছে একই সময়ে। তারা তথ্য নিচ্ছে। উৎপাদন হচ্ছে কিন্তু বাজারে আসছে না। কোথাও না কোথাও তো যাচ্ছে। সেটি আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। কোন পর্যায়ে স্টক হচ্ছে সেটি বের করতে হবে।
এদিকে পাইকারি ব্যবসায়ী ও ডিলারদের অভিযোগ, মিল থেকে তেল ও চিনি দিচ্ছে না। তবে দাম বাড়ালে সরবরাহ মিলবে বলে আশ্বাস পাচ্ছেন তারা। কোথাও কোথাও চিনির দেখা মিললেও প্রতি কেজির দাম ১৮ থেকে ২০ টাকা বেশি পড়ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের সরবরাহ থাকলেও দাম বেশি। খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬৫ থেকে ১৭০ এবং পাম অয়েল ১৩০ থেকে ১৩২ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তবে বেশিরভাগ জায়গায় প্যাকেটজাত চিনি মিলছে না। খোলা চিনি মিললেও বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।
খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে। গত রমজান মাসেও এ ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছিল। দাম বাড়ার পর তেলের আর অভাব দেখা যায়নি। গত ৩ অক্টোবর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৮, পাঁচ লিটারের বোতল ৮৮০ এবং খোলা সয়াবিন তেল ১৫৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ১ নভেম্বর আবারও সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেন ভোজ্যতেল আমদানিকারকরা। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে এখনও সায় দেয়নি। গত ৬ অক্টোবর প্রতি লিটার পাম অয়েলের দাম নির্ধারণ করা হয় ১২৫ টাকা। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩২ টাকা দরে। যদিও এ দফায় দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে পাম অয়েলের বিষয়ে উল্লেখ করেননি ব্যবসায়ীরা।
গত ১ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এ প্রস্তাব জমা দিয়েছে মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম মোল্লা সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও ডলারের বিপরীতে টাকার অস্বাভাবিক দরপতনের ফলে অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত সদস্যরা বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৯৩ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। তাতে বোতলজাত সয়াবিনের বর্তমান বাজারদর ১৭৮ টাকা হিসাবে লিটার প্রতি দাম বাড়বে ১৫ টাকা।
একই সঙ্গে সংগঠনটি ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন ৯৫৫ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। বর্তমানে বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বাজারমূল্য ৮৮০ টাকা। বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিনের দাম ৭৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি। এ ছাড়া প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রস্তাব করা হয়েছে ১৭৩ টাকা। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৫৮ টাকা। তাতে খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।