ঊষার আলো ডেস্ক : খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা বলেছেন, স্বাধীনতার ৫১ বছর পরে এসে আজকের বাংলাদেশে কোন নাগরিকই তার রাষ্ট্রপ্রদত্ত সংবিধান স্বীকৃত কোন অধিকার ভোগ করতে পারছেন না। নাগরিকদেরকে শুধু অধিকারহারা করা হয়নি, গোটা রাষ্ট্রকাঠামোকে ভয়ংকর ভাবে তছনছ করে দিয়ে দেশকে একাত্তর পূর্ববর্তী ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে। একটি ফ্যাসিবাদী চরিত্রের মাফিয়া সরকার নিজেদের ক্ষমতাকে নিস্কন্টক করতে প্রশাসনকে লেলিয়ে দিয়ে গোটা দেশটাকে একটা বৃহত্তর কারাগারে পরিণত করেছে।
বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় বিএনপি কার্যালয়ে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি আয়োজিত ডিসেম্বর মাসজুড়ে পুলিশের বিশেষ অভিযানের নামে
গণগ্রেফতার ও গায়েবী মামলা দায়েরের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব
কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বিএনপি’র সম্মানিত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটি সদস্য মির্জা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারের ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি জানিয়ে খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা বলেন, মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বর চলছে।
মনা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, জ¦ালানি তেল সহ অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম কমানো, জনদূর্ভোগ লাঘব করা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার তথা জনগনের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ জনসমর্থিত রাজনৈতিক সংগঠন বিএনপি গত অক্টোবর মাস থেকে ধারাবাহিকভাবে দেশের সকল বিভাগীয় সদরে গণসমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, খুলনার করিৎকর্মা পুলিশ প্রশাসন চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে গায়েবী, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, অবাস্তব ও কল্পনাপ্রসূত অভিযোগে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মোট ১৪ টি মামলা দায়ের করেছে। খুলনা মহানগরীর ৮ টি থানার প্রতিটিতে একটি করে মামলা হয়েছে। জেলার রূপসা থানায় দুটি, ডুমুরিয়া থানায় দুটি, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা থানায় একটি করে। মহানগরীর ৮ মামলায় এজাহারনামীয়সহ অজ্ঞাত পরিচয় আসামী করা হয়েছে ৪৪৫ জন নেতাকর্মীকে। আজ জেলার ৬ মামলায় এজাহারনামীয়সহ অজ্ঞাত পরিচয় আসামী হয়েছেন ৩৯০ জন। মোট আসামী হয়েছেন বিএনপি এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের প্রায় সাড়ে ৮শ’ জন। বানোয়াট গায়েবী এসব মামলায় মহানগরীর ৪২ জন এবং জেলার ৪৭ জন নেতাকর্মী কারাবন্দী রয়েছেন। ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে খুলনার ১০ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। যাদের মধ্যে পাইকগাছার ৪জন, ডুমুরিয়ার ২, দাকোপের ২ এবং মহানগর যুবদলের ২জন রয়েছেন। আসামীর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সদর থানার মামলায় ৮০ জন, সোনাডাঙ্গা থানার মামলায় ৬০ জন, খালিশপুর থানার মামলায় ৫৫জন, দৌলতপুর থানার মামলায় ৪৫ জন, খানজাহান আলী থানার মামলায় ৩০জন, আড়ংঘাটা থানার মামলায় ৫০ জন, হরিণটানা থানার মামলায় ৪৫ জন এবং লবণচরা থানার মামলায় ৮০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অপরদিকে পাইকগাছা থানার মামলায় ৭০জন, বটিয়াঘাটা থানার মামলায় ৮০জন, ডুমুরিয়া থানার প্রথম মামলায় ৬০ জন ও দ্বিতীয় মামলায় ৭৫ জন এবং রূপসা থানার প্রথম মামলায় ৬০ জন ও দ্বিতীয় মামলায় ৪৫জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে ১১০ জন হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়েছেন। এছাড়া খুলনার আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন ৩১ জন। পুলিশের দায়ের করা মামলার এজাহারের কপি পড়লে স্পষ্টভাবেই বোঝা যায়, প্রতিটি মামলাই দায়ের করা হয়েছে অভিন্ন অভিযোগে। সরকার উৎখাতে নাশকতা সহিংসতা সৃষ্টি। সেজন্য বিএনপি নেতাকর্মীরা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় লাল টেপে মোড়ানো কথিত ককটেল, লোহার রডের টুকরা, লাঠি ও ইটের টুকরো নিয়ে হামলার পরিকল্পনা করছিল। অথবা ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গিয়ে নাশকতা সৃষ্টি করে সরকার উৎখাতের লক্ষ্যে গোপন বৈঠক করছিল। অথবা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত করতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। অত্যন্ত দূর্বল হাস্যকর ও বাস্তবতা বিবর্জিত এসব এজাহার নামের স্ক্রীপ্টকে আমরা চ্যালেঞ্জ করছি। কারণ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার চারপাশে একাধিক সিসি ক্যামেরা থাকে। এ ধরনের কোন স্থাপনার আশপাশ থেকে বিএনপির নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন বা হামলা চালিয়েছেন এমন কোন ভিডিও ফুটেজ কি পুলিশ প্রশাসন দেখাতে পারবেন?
সরকার ও আওয়ামী লীগের শত উস্কানি ও নানামুখি অপতৎপরতার পরেও বিএনপি ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতির মোকাবেলা করছে। আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিয়ে রাজনীতির চর্চ্চা করছি এবং এই তৎপরতা অব্যাহত রাখতে চাই।
তিনি আরো বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙ্গে দেয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা সহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা দাবিতে ২৪ ডিসেম্বর শনিবার খুলনায় গণমিছিল করবে বিএনপি। বিকেল ৩টায় কে ডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণের পর শিববাড়ি মোড়ে গিয়ে শেষ হবে। খুলনার গণমিছিলে নেতৃত্ব দেবেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বর্ষিয়ান জননেতা ড. মঈন খান। আমাদের এই কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে পুলিশ প্রশাসনের কাছে সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছি।
প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির আহবায়ক আমীর এজাজ খান ও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শেখ আবু হোসেন বাবু, স ম আব্দুর রহমান, সৈয়দা রেহানা ঈসা, কাজী মাহমুদ আলী, আবুল কালাম জিয়া, বদরুল আনাম খান, চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, শেখ সাদী, হাসানুর রশিদ চৌধুরী মিরাজ, এ্যাড, মাসুম রশিদ, শেখ আসগর আলী, কে এম হুমায়ুন কবির, এ্যাড. তৌহিদুর রহমান চৌধুরী তুষার, একরামুল কবির মিল্টন, এস এম মুর্শিদুর রহমান লিটন, নাজিরউদ্দিন নান্নু, শেখ ইমাম হোসেন, গাজী আফসারউদ্দিন, মোল্লা ফরিদ আহমেদ, আনসার আলী, নাসির খান, রাহাত আলী লাচ্চু, আব্দুর রহমান ডিনো, তারিকুল ইসলাম, মিজানুর রহমান মিলটন, শামসুল বারিক পান্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিকুল ইসলাম শাহিন, মহিলা দলের এ্যাড. কানিজ ফাতেমা আমিন,নিঘাত সীমা, শ্রমিক দলের খান ইসমাইল হোসেন, তাঁতী দলের আবু সাঈদ শেখ, ছাত্রদলের ইসতিয়াক আহমেদ ইস্তি প্রমুখ।