রাহাদ সুমন,বানারীপাড়া(বরিশাল) : বরিশালের বানারীপাড়ায় দারিদ্রতাকে জয় করে রাজশাহী মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় অদম্য মেধাবী সাদিয়া আফরিন হারিছাকে তার শিক্ষা জীবনের প্রথম হাতেখড়ি দেওয়া বিদ্যাপিঠ জাতীয় শ্রেষ্ঠ পুরস্কারপ্রাপ্ত বানারীপাড়া বন্দর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
৯ এপ্রিল শনিবার দুপুর ১টায় বিদ্যালয় মিলনায়তনে বানারীপাড়া প্রেসক্লাব ও বন্দর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাহাদ সুমনের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন,বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্র শেখর,বানারীপাড়া প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখার ইংরেজী শিক্ষক কাওসার হোসেন,প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের আহবায়ক শফিক শাহিন,উপজেলার আলতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্বপন মাঝী,বন্দর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হুসনুল বেদারী,নাসিমা বেগম ও হুমায়ুন কবির,সংবর্ধিত সাদিয়া আফরিন হারিছার বাবা মিজানুর রহমান হাওলাদার প্রমুখ।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাদিয়া আফরিন হারিছা দারিদ্রতাকে জয় করে তার ধারবাহিক সাফল্যের গল্প আবেগঘন বক্তৃতায় ফুটিয়ে তুললে উপস্থিত সবাইকে অশ্রুসজল করে। অনুষ্ঠানে সাদিয়া আফরিন হারিছা ও তার বাবা-মাকে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করা হয়। এদিকে সাদিয়া আফরিন হারিছাসহ তার চার বোনের লেখাপড়া ও গোটা পরিবারের সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। ইতোমধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে হারিছার পরিবারকে ইফতার সামগ্রীসহ একমাসের বাজার উপহার দেওয়া হয়েছে।
৯ এপ্রিল শনিবার সকালে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষে ইস্টওয়েষ্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ও প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন মুঠোফোনে সাদিয়া আফরিন হারিছা ও তার বাবা রিকশা শ্রমিক মিজানুর রহমান হাওলাদারকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে সর্বদা তাদের পরিবারের পাশে থাকার কথা জানান। এসময় হারিছা ও তার বাবা মিজানুর রহমান হাওলাদার বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান,ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ইস্টওয়েষ্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালকের প্রতি অনিঃশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনা করে দোয়া করেন।
উল্লেখ্য হারিছা বানারীপাড়া বন্দর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে ৫ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ সহ গোটা উপজেলায় সেরা শিক্ষার্থী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল। এরপর সে বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসি এবং বরিশাল মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে ও সর্বশেষ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়ে ধারাবাহিক সাফল্যের স্বাক্ষর রাখে। তবে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির চান্স পেয়েও লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহনের দুঃশ্চিন্তায় হারিছা ও তার পিতা-মাতার মনে এতটুকু স্বস্তি ছিলোনা। ‘মেডিক্যালে ভর্তির চান্স পেয়েও অদম্য মেধাবী হারিছার চোখে অমানিশার অন্ধকার’ শিরোণামে ঊষার আলো ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় হতদরিদ্র এ পরিবারের সংগ্রামী জীবনের দুঃখ গাঁথার করুন কাহিনী নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরে মানবতার হাত প্রসারিত করে অন্ধকারে আলো জ্বালিয়ে তাদের পাশে এসে দাঁড়ায় বসুন্ধরা গ্রুপ। ফলে হারিছার পরিবারে স্বস্তি ফিরে এসে সবার চোখে-মুখে ফোটে হাসির ঝিলিক।