বিদ্যুৎ আমদানির নামে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিগত সরকারের অসম চুক্তির বিষয়টি এখন আর অজানা নয়। শুধু তাই নয়, শুল্ক ও কর অব্যাহতির মাধ্যমে এই গ্রুপকে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকির সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগও এখন উঠেছে। শুক্রবার খবর প্রকাশ-জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) পাশ কাটিয়ে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে আদানিকে এই সুযোগ করে দেয়। বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধানে নেমেছে। অভিযোগ আছে, বড় ধরনের এই কর ফাঁকির ঘটনার নেপথ্যে মূল ভূমিকায় ছিলেন পতিত সরকারের প্রভাবশালী দোসর সাবেক এক মুখ্য সচিব (চুক্তির সময় যিনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সচিব ছিলেন)। এ কাজে তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও।
জানা গেছে, শুল্ককর ছাড়ের বিষয়ে এনবিআর অনুমতি দিয়েছিল কিনা, দেওয়া হয়ে থাকলে এ সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র বা তথ্যাদি এবং আদানি গ্রুপের সঙ্গে পিডিবির চুক্তি খতিয়ে দেখার জন্য শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কর্তৃক ৯ সদস্যের কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের ফটোকপি চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। পাশাপাশি আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র এবং ক্রয় চুক্তিতে সরকারি নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে কিনা, তা জানতে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পিডিবিকে গত ১৬ এপ্রিল চিঠি দিয়েছে দুদক। সেখানে তথ্য পাঠানোর জন্য পাঁচ কার্যদিবস সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু এই সময় পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেয়নি পিডিবি। ফলে দুদকের অনুসন্ধান কাজের স্বাভাবিক গতি চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বিষয়টি যেহেতু তদন্তসাপেক্ষ, তাই এখনই কোনো মন্তব্য করা সমীচীন নয়। তবে আদানি গ্রুপকে সাগরচুরির সুবিধা দিতে বিগত সরকার যেসব অপকর্ম করেছে, সেই ধারাবাহিকতায় কর ফাঁকির এ অভিযোগের সত্যতা মিললে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। করের চাপে যেখানে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ, সেখানে আদানিকে কর ফাঁকির সুযোগ করে দিয়ে উলটো জনগণের কাছে বাড়তি দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করাটা বিগত সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রকেই আরও স্পষ্ট করে দেয়। এর মাধ্যমে শুধু জনগণকে অন্যায়ভাবে শোষণই করা হয়নি, রাজস্ব ফাঁকির মাধ্যমে দেশকে আয় থেকে বঞ্চিতও করা হয়েছে। একটি রাজনৈতিক দল শাসকের ভূমিকায় থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে কীভাবে জনগণকে পদে পদে অধিকারবঞ্চিত করে উলটো শোষণ করেছে, ইতিহাসের পাতায় তা উদাহরণ হয়ে থাকবে নিশ্চয়ই।
একদিকে ভারতের এই শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে অসম চুক্তির মাধ্যমে বাড়তি দামে বিদ্যুৎ ক্রয়, অন্যদিকে কর ফাঁকির সুযোগ করিয়ে দিয়ে দেশকে রাজস্ববঞ্চিত করা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলেই মনে করি আমরা। দুদকের তদন্ত যাতে ব্যাহত না হয়, সেজন্য পিডিবিসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর উচিত সর্বাত্মক সহযোগিতা করা। পাশাপাশি কাদের হস্তক্ষেপে এ তদন্তকার্যে ব্যাঘাত ঘটছে, সে প্রশ্নেরও উত্তর মেলা জরুরি। আমরা বারবার বলে আসছি, শর্ষের ভেতর ভূত থেকে গেলে কোনো সংস্কারকার্যই শতভাগ সফলতার মুখ দেখবে না।
ঊষার আলো-এসএ