ঊষার আলো রিপোর্ট : রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে মঙ্গলবার রাতে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তিনি বাসায় ফেরেন।
এর আগে শনিবার মধ্যরাতে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখেন চিকিৎসকরা। ফুসফুসের পানি অপসারণের পর এক্স-রে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফিসহ কিছু পরীক্ষা করানো হয়।
প্রাথমিকভাবে পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে মেডিকেল বোর্ড তাকে বাসায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
খালেদা জিয়া বাসায় পৌঁছার পর সেখানে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের পরামর্শক্রমে বিএনপি চেয়ারপারসনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসাপাতালে নেওয়ার পর উনাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। পরে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়, যা বাসায় করা সম্ভব নয়। সেখানে চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করেন। এ কারণে উনি অসুস্থতার মাঝেও কিছুটা সুস্থতাবোধ করছেন। পরে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে আবার বাসার আনা হয়। আপাতত বাসায় রেখে মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা চলবে।
তিনি আরো বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি রোগী। হার্টে রিং পড়ানো, আর্থ্রাইটিসসহ আরো কিছু রোগ রয়েছে। শারীরিক সীমাবদ্ধতাও আছে। মেডিকেল বোর্ড সুপারিশ করেছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়া গেলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন। ম্যাডাম খালেদা জিয়া শারীরিক সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
এদিকে দলীয় প্রধানের হাসপাতালে থেকে বাসায় যাওয়ার খবরে বিএনপি ও অঙ্গ- সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বাসা ও হাসপাতাল এলাকায় ভিড় করেন। বাসায় যাওয়ার পথে নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সঙ্গে থেকে তার মুক্তি চেয়ে নানা স্লোগান দেন। সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে হাসপাতাল থেকে রওনা দিয়ে রাত আটটার দিকে গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজায় পৌঁছান। এ সময় তার গাড়ী বহরের সঙ্গে ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক, বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, বর্তমান কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান প্রমুখ।
শনিবার মধ্যরাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তার মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা ওই রাতে গুলশানের বাসভবনে গিয়ে স্বাস্থ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে শনিবার রাতেই তাকে হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর খালেদা জিয়াকে ওইদিন দিবাগত রাত তিনটার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এর আগে চলতি মার্চ মাসের ১৩ তারিখ খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর ফুসফুসের পানি অপসারণের পর কিছু পরীক্ষা করানো হয়। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে পরদিন মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে বাসায় ফেরেন।
গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসনের রক্তনালীতে অস্ত্রোপচার করা হয় গত বছরের ২৭ অক্টোবর। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে তার রক্তনালীতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। খালেদা জিয়া হার্টের সমস্যা, লিভারসিরোসিস ছাড়াও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতা রয়েছে তার। কারাগার থেকে বেরোনোর পর চিকিৎসার জন্য কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি।
দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুরুয়ারি কারাগারে নেওয়া হয়। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দী ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেয়। তখন থেকে ছয় মাস পর পর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার।
ঊষার আলো-এসএ