বানারীপাড়া(বরিশাল)প্রতিনিধি : বরিশালের উজিরপুরে হাতুড়ে ডাক্তারের ভূল চিকিৎসায় নিখিল সরকার (৩৬) নামের এক কাঠ মিস্ত্রির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে রবিবার (২৫ জুলাই) ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডের পীড়েরপাড় গ্রামের মৃত নিত্যানন্দ সরকারের ছেলে কাঠমিস্ত্রি নিখিল সরকার গত কয়েকদিন ধরে জ্বর ও এলার্জি জনিত রোগে ভুগছিল। তার চিকিৎসার জন্য শনিবার (২৪ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫ টায় একই এলাকার মৃত যোগেশ মহুরির ছেলে পল্লী চিকিৎসক বাসুদেব মহুরি (৩৭) কে খবর দিয়ে বাড়ীতে আনা হয়। ওই চিকিৎসক নিখিলকে ৪টি ইনজেকসন পুশ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ বিষয়টি উজিরপুর মডেল থানা পুলিশকে অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই দিন রাতে লাশ উদ্ধার করে পরের দিন রবিবার সকালে ময়না তদন্ত’র জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠায়। এ ব্যাপারে নিখিল মিস্ত্রির বৃদ্ধা মা পুতুল রানী সরকার (৭০) বলেন, আমার ছেলেকে ইনজেকশন দিতে বারবার নিষেধ করার পরেও তা না শুনে বাসুদেব মহুরি এক সঙ্গে ৪টি ইনজেকশন দেয়। একারনেই তাৎক্ষনিক ভাবে আমার ছেলে মারা যায়। বাসুদেব আমার ছেলেকে ভুয়া চিকিৎসা দিয়ে মেরে ফেলেছে। নিখিল মিস্ত্রির স্ত্রী উর্মিলা সরকার বলেন- আমার স্বামীকে ভূয়া চিকিৎসা দিয়ে মেরে ফেলেছে বাসুদেব। এখন আমি আমার ২ শিশু নিলয় আর নিশীথকে কোথা থেকে খাবার এনে দেবো। আমাকে বিধবা ও সন্তানদের পিতৃহারা করেছে ওই খুনি চিকিৎসক। তার বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত পল্লী চিকিৎসক বাসুদেব মহুরি বলেন আমি খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ভাবে ঘটনাস্থল গিয়ে নিখিলের জ্বর, এলার্জি ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ থাকায় কটসন, ইমিস্টাট ও ইজরোলসহ ৪টি ইনজেকশন পুশ করি। আমি কোন ভূল চিকিৎসা করিনি। ইনজেকসন পুশ করার পরে কিছুক্ষন সুস্থ ছিল। এরপরে মারা গেলে আমার কি করার আছে। তার ডাক্তারের সনদ আছে কিনা তা জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে বলেন- আমি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় চিকিৎসা দিয়ে আসছি। আমার কাছে প্রতিদিন বহু রোগী আসে। সবাই উপকৃত হয় তাই আমি এই পেশায় থেকে মানুষকে সেবা দিচ্ছি।
এদিকে, স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সনদ ছাড়া হাতুড়ে ডাক্তার বাসুদেব মহুরী স্থানীয় লোকনাথ বাজারে ফার্মেসী দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ চিকিৎসার নামে সহজ সরল মানুষকে ধোকা দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ ব্যপারে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শওকত আলী বলেন- বাসুদেব নামে রেজিস্ট্রীকৃত কোন ডাক্তার নেই। তার চিকিৎসা দেয়ার কোন অধিকার নেই। বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ প্রসঙ্গে উজিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) আলী আর্শাদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পুলিশ পাঠিয়ে লাশ উদ্ধার করে বরিশাল মর্গে পাঠানো হয়েছে । ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
(ঊষার আলো–আরএম)