#ফেসবুকে অপপ্রচারে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত
উষার আলোঃ খুলনা মহানগরের তালতলা পূজা মন্দির সংলগ্ন ৪৬নং উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মনিরুল ইসলামের বদলীর দাবীতে খুলনা জেলা প্রশাসক ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
গত ৬ আগষ্ট মহাপরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও গত ৩ আগষ্ট জেলা প্রশাসক, খুলনা বরাবর এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি বীরেন্দ্রনাথ ঘোষ, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এড. প্রহ্লাদ ঘোষ, আইন সহায়তা কেন্দ্র আসক’র সভাপতি মোঃ আঃ কাইয়ুম খানসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ স্বাক্ষর করেছেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বিভিন্ন সময় সাম্প্রদায়িক উস্কানি, হিংসা বিদ্বেষ ও অসন্তোষ সৃষ্টির মতো গুরুতর অপরাধ করছেন যা কোনক্রমেই একজন শিক্ষকের কাজ হতে পারে না। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ইতোপূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে “হিন্দু মেয়েরা কিভাবে শিব লিঙ্গ পূজা করে”- শীর্ষক অশ্লীল ছবিযুক্ত ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করে হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে অপপ্রচার করেন। এছাড়াও সাবেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রমেন্দ্রনাথ পোদ্দার সম্পর্কে অশ্লীল মন্তব্য ফেসবুকে পোস্ট করে অপপ্রচার করেন।
এই বিষয় দু’টি অভিযোগের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ আমলে নিয়ে তদন্তে সত্যতা পেয়ে প্রাথমিক শিক্ষার খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোঃ মোসলেম উদ্দিন গত বছর ৮ জুলাই ওই শিক্ষকের একটি বার্ষিক বেতন এক বছরের জন্য স্থগিত করে বিভাগীয় মামলায় লঘু শাস্তি দেন। যাতে স্মারকলিপি প্রদানকারী নেতৃবৃন্দ অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
ওই বিভাগীয় শাস্তি প্রত্যাখান করে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, তিনি যে অপরাধ করেছেন তাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত। যাতে এ অপরাধের জন্য “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮” এর ধারা ২৮ ও ২৯ মোতাবেক অনধিক ৫ বছর কারাদÐ বা অনধিক ১০ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং ক্ষেত্রমত অনধিক ৩ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। অথচ বিভাগীয় উপ-পরিচালক ২টি গুরুতর ডিজিটাল অপরাধের জন্য প্রচলিত আইন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় গুরুদণ্ড প্রদানের বিধান উপেক্ষা করে লঘুণ্ড প্রদান করে ওই শিক্ষককে প্রশ্রয় দিয়েছে। তালতলা মন্দির সংলগ্ন উদয়ন স্কুল ও তার আশপাশ এলাকায় সহস্রাধিক হিন্দু পরিবারের বসবাস। এমতাবস্থায় ওই এলাকায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বাচন ভঙ্গি ও কর্মকাণ্ড সাম্প্রদায়ীকতাকে উসকিয়ে দিতে পারে।
স্মারকলিপিতে ওই শিক্ষকের আরও বিতর্কিত কর্মকাণ্ড তুলে ধরে উল্লেখ করা হয়, ওই প্রধান শিক্ষক ইতোপূর্বে বিদ্যালয়ে ব্যতিক্রমী পদ্ধতিতে দীর্ঘদিন যাবত হিন্দু শিক্ষক দিয়ে শ্রেণিতে ইসলাম ধর্ম পাঠদান করান এবং মুসলমান শিক্ষক দিয়ে হিন্দু ধর্ম পাঠ করাতেন। তৎকালীন ডিপিইও এ.এস.এম সিরাজুদ্দোহা বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে বিষয়টি নিজেই প্রত্যক্ষ করেন এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। এছাড়াও ওই প্রধান শিক্ষক ধর্মীয় বিদ্বেষমূলকভাবে ওই বিদ্যালয়ের এক হিন্দু শিক্ষককে উদ্দেশ্য করে “মাতা-পিতার ত্যাজ্য সন্তান” আখ্যা দিয়ে অশালীন ভাষায় দরখাস্ত লিখে সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা অফিসে দাখিল করেন।
এছাড়াও চলতি বছরে ওই বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত খুলনা সদরের ১২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হিন্দু শিক্ষকদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সরস্বতী পূজা বন্ধ করার জন্য হুমকি প্রদান করেন। এসব বিষয়ে বিভিন্ন মহলে ও সাধারণ জনগণের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
এর আগে ২০১২ সালে ওই বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম ও বিধি বহির্ভূত কার্যকলাপের জন্য ওই প্রধান শিক্ষকসহ ৩ শিক্ষকের বিভাগীয় মামলায় শাস্তি প্রদান করা হয়। বিভিন্ন অপরাধের জন্য ওই শিক্ষককে এপর্যন্ত দু’ বার বিভাগীয় মামলায় শাস্তি প্রদান করা হলেও একই বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। এর ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, সাবেক বিভাগীয় উপ-পরিচালক মাহবুব এলাহী গত ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারী মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর ওই শিক্ষকের প্রশাসনিক বদলীর জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করেন। অজ্ঞাত কারণে আজ পর্যন্ত ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে।
স্মারকলিপিতে অনতি বিলম্বে ওই প্রধান শিক্ষককে খুলনা মহানগরের বাইরে প্রশাসনিক বদলীসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানানো হয়েছে। অন্যথায় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন, মানবন্ধনসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণের কথা স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়।
ঊআ-বিএস