ঊষার আলো প্রতিবেদক : দীর্ঘ এক যুগ পর খালিশপুর থানাধীন ১২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন আগামী ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় যেন উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রায় এক ডজন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। দোয়া চেয়ে প্রার্থীদের প্যানা হাউজিং বাজার ও আশপাশ এলাকা ছেয়ে গেছে। চলছে দফায় দফায় বৈঠক। তবে একজন ছাড়া সবাই একমত-গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করতে হবে। না হলে তারা সাংগঠনিকভাবে প্রতিবাদ করবেন বলে প্রার্থীরা জানান। সভাপতি প্রার্থী হলেন প্রবীন আ’লীগ নেতা মোঃ তাজুল ইসলাম, শিল্পপতি জুবায়ের হোসেন, সাবেক ছাত্র নতো শেখ মনজুরুল আলম মনজু ও ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ মনিরুজ্জামান। সাঃ সম্পাদক প্রার্থীরা হলেন সাবেক ছাত্র নেতা মিরাজ হোসেন, এসএম লুৎফর রহমান, নুর তালাত মাহমুদ পাভেল, শহিদুল ইসলাম, ইলিয়াস হোসেন ও দারইন। প্রার্থীদের মধ্যে সবাই বিগত দিনে আ’লীগের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। হয়েছে নির্যাতিত, মামলা-হামলায় ছাড়া হয়েছে বাড়ি। তবে একজন বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে আসা প্রার্থী হয়েছেন। তিনি হলেন কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান।
দলীয় সূত্রে প্রকাশ, আগামী ১৫ অক্টোবর বিকেল ৩টায় খালিশপুর প্রভাতী স্কুল মাঠ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে বহু কাংখিত ১২নং ওয়ার্ড আ’লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। ৩০৬ জন কাউন্সিলর ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করবেন। এমনই প্রস্তুতি চলছে সবার মাঝে। ২০১২ সালে এ ওয়ার্ডে সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে মোস্তাফিজুর রহমান ফিরু সভাপতি ও আসলাম খান মুরাদ সাঃ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ নানা কারণে এ ওয়ার্ডে সম্মেলন হয়নি। সর্বশেষ ২০১৭ সালে সম্মেলনের জন্য ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হলেও তা শেষ পর্যন্ত স্থগিত হয়। যদিও ওই সময় খালিশপুরের বাকী ৮টি ওয়ার্ডে সম্মেলন হয়। সকল ওয়ার্ডে সবাই ভোটের মাধ্যমেই নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১২নং ওয়ার্ডে ভোটের মাধ্যমেই নেতা নির্বাচিত হোক এটা প্রার্থীদের চাওয়া।
১২নং ওয়ার্ডে প্রবীন আ’লীগ নেতা মোঃ তাজুল ইসলাম। তিনি এ ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি ছিলেন। তিনি ৪০ বছর ধরে রাজনীতি করছেন। অন্য দল থেকে আসা মাত্র তাকে বড় পদ দিতে হবে এ নজির বিগত দিনে দেখেননি। যা এবার দেখছেন। এরশাদ-খালেদা বিরোধী আন্দোলনে তার সক্রিয় অংশ গ্রহণ ছিল। তিনিসহ সবাই নির্বাচন চান। এর বাইরে তিনি কিছু ভাবছেন না। এর বাইরে সিলেকশনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দিবেন। একই সাথে এ প্রক্রিয়ার কারণে কাউন্সিলরা হতাশ হবে বলে তিনি মনে করেন। এ জন্য তিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচন করার জোর দাবি জানান।
সভাপতি প্রার্থী জুবায়ের হোসেন। তিনি মুহসিন কলেজ ছাত্র সংসদের সাঃ সম্পাদক ছিলেন। কালিয়া উপজেলা যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন। ৮০ সালে ঢাকায় যে অবরোধ হয় তিনি সেই অবরোধে অংশ নেন। তার সামনেই নুর হোসেন নিহত হন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচিত হলে তাকেই তিনি মেনে নিবেন। তা না হলে তিনি সাংগঠনিকভাবে প্রতিবাদ করবেন। তৃণমূল ভোটাররা চায় নির্বাচন। দলের শীর্ষ নেতারাও তৃণমূলের চাওয়াকে মূল্যায়ন কবরে বলে তিনি আশাবাদী। বিগত দিনে যেভাবে শৃংখলাভাবে দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করেছেন মনি দলে আসার পর সেভাবে পারছেন না। দলের ভিতরে একটা বিশৃংখা সৃষ্টি করছে এই মনি। এক সময় যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন এই মনি আ’লীগ নেতা-কর্মীদের নির্যাতন করেছে। নির্যাতিত সেসব নেতা-কর্মীরা মনিকে সহজভাবে মেনে নিবে না। ইলেকশনের মাধ্য নেতা নির্বাচিত হোক এটা তারা মনি বাদে সব প্রার্থীরা চায় বলে তিনি জানান।
আলোচিত সভাপতি প্রার্থী ও ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ মনিরুজ্জামান সম্মেলন উপলক্ষে প্যানা দিলেও সেখানে নিজেকে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেননি। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে বিএনপি থেকে আ’লীগে যোগদান করি। দীর্ঘ পাঁচ বছর এ দলেন নেতা-কর্মীদের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। এ সেবার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে তিনি এবার সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এলাকায় কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছেন। এ সময় তিনি এলাকাবাসীর সেবা করার সুযোগ পেয়েছেন। সে সুযোগ তিনি কাজেও লাগিয়েছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের গত পাঁচ বছর ধরে সেবা করে আসছেন। দলকে সংগঠিত করে আসছেন। দলীয় নেতা-কর্মীরা তাকে বিমুখ করবে না বলে তার বিশ্বাস।
সভাপতি প্রার্থী মনজুরুল আলম মনজু। তিনি ৭৫ পরবর্তী সময়ে খালিশপুরে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। পোড় খাওয়া এ নেতা ইলেকশনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের পক্ষে জোড়ালো মতামত দেন। তিনি বলেন, ইলেকশন হলে কাউন্সিলর মনি পাবে মাত্র ১৫ ভোট। এই ভরাডুবির কথা চিন্তা করে মনি সিলেকশনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হওয়ার জন্য বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাপ করছেন। তিনি কাউন্সিলরদের দ্বারে দ্বারে না গিয়ে নেতাদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। যাতে তারা সিলেকশনের মাধ্যতে তাকে সভাপতি নির্বাচিত করুক। এটা অন্য প্রার্থীরা হতে দিবে না। যদি শীর্ষ নেতারা তাদের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয় তবে তা সাংগঠনিক ভাবে মোকাবেলা করা হবে বলে তিনি জানান।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মিরাজ হোসেন। তিনি বলেন, ২০১২ সালে সম্মেলন হয়। ওই কমিটি ২০১৮ সালে বাতিল করা হয়। এরপর ১০টি সেন্টার কমিটি নিয়ে থানা কমিটির নেতারা এই ওয়ার্ড কমিটি পরিচালনা করতেন। সেন্টার কমিটির আহবায়ক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে শুরু করে এখনও রাজনীতি করে চলেছেন। দুঃসময়ে মহানগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। অনেকে দুঃসময়ে বিদেশে পারি জমিয়েছে, অনেকে রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় ছিলেন। এখন আবার সুসময়ে নেতা হওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন। কিন্তু তিনি দুঃসময়ে দলে ছিলেন আর এখনও আছেন। ভবিষ্যতেও থাকবেন। তিনি নির্বাচনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হোক এটা চান।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী লুৎফর রহমান। তিনি মুহসিন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক জয়েন্ট সেক্রেটারি ছিলেন। ১২নং ওয়ার্ড আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে জয়েন্ট সেক্রেটারি ছিলেন। রাজনীতির ১১ মামলার আসামী হয়ে বাড়ি ছাড়া হন। প্যানাই তিনি ইলেকশনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের পক্ষে প্রচারণা করেছেন। একই সাথে তিনি বলেন, ইলেকশনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হলে তাকে তিনি মেনে নিবেন।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী পাভেল। তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতি থেকে মুল দলের রাজনীতির সাথে কর্মী হিসেবে কাজ করেন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নেতা নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, উপর থেকে কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হলে তা মেনে নেয়া হবে না। ওই সিদ্ধান্ত বয়কট করা হবে বলে তিনি জানান।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বলেন, ১২ বছর এ ওয়ার্ডে কোন নেতা নেই। বিগত একবার কাউন্সিলর ইলেকশন করেন। তিনি ব্যবসার সাথে জড়িত। তিনি নির্বাচনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হোক এটা চান। যদি তা না হয় তবে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি বলেন। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে কাউন্সিলর মনি আওয়ামী লীগে আসার পর থেকে দলের কোন কাজ কর্মসঠিকভাবে করা যাচ্ছে না। তিনি শৃংখলা কাজ কর্মে বাধা সৃষ্টি করছেন। এ বাধা থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করার জন্য কাউন্সিলরদের প্রতি আহবান জানান।
১২নং ওয়ার্ডের প্রভাবশালী আ’লীগের কাউন্সিলর তাহিদুল ইসলাম ঝন্টু। তিনি বলেন, দেশে আ’লীগই হলো একমাত্র দল যারা তৃণমূলের সিদ্ধান্তকে মূল্যায়ন করে। তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচনের পক্ষে কাজ করে। এছাড়া খালিশপুর থানার বাকী ৮টি ওয়ার্ডে সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এই ওয়ার্ডেও ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হবে বলে তিনি আশাবাদী।