ঊষার আলো রিপোর্ট: সরকারি কর্মকাণ্ডে সাফল্যের পাশাপাশি জনগণের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ নতুন নয়। রাস্তা ছাড়াই সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ কিংবা পুকুর খনন শিখতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ সফরের মতো অনেক ঘটনাই রয়েছে। সংবাদমাধ্যমে সেসব কর্মকাণ্ডের খবর প্রকাশের পর নানা মহলে আলোচনা-সমালোচনাও হয়; কিন্তু অজাযুদ্ধের মতো এসব কর্মকাণ্ড কমছে না। এভাবে রাষ্ট্রের বিপুল অঙ্কের অর্থ গচ্চা যাচ্ছে। বুধবার প্রকাশ, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ও মধ্যপাড়া পাথর খনির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে জরিপ শেষ হওয়ার ছয় বছর পরও উন্নয়নকাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। অথচ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নামে এরই মধ্যে ১২০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, উন্নয়নকাজের আগেই বিপুল অর্থ খরচ হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এর পেছনের কারণ হচ্ছে, যে জরিপ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে, তার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। জানা যায়, নামসর্বস্ব ও কালো তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে দিয়ে ২০১৭ সালে প্রথম দফায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছিল। এরপর সেটি আন্তর্জাতিক মানের তৃতীয় একটি কোম্পানিকে দিয়ে মূল্যায়ন (রিভিউ) করা হয়। দেখা যায়, তৈরি করা রিপোর্টটি ছিল ভুলে ভরা, কপি-পেস্ট ও দায়সারা গোছের। এরপর ওই রিপোর্টটি ধামাচাপা দেওয়া হয়; কিন্তু সবকিছু জেনেশুনেও একই মানের কোম্পানিকে ফের মধ্যপাড়া পাথর খনির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। পরের বারও কোম্পানিটি যে রিপোর্ট দেয়, তা ছিল আগের চেয়েও খারাপ। এ দফায়ও সেই রিপোর্টটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ।
অতীতেও অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এমন সম্ভাবনাময় নানা প্রকল্পের কাজ হয় আটকে গেছে, নয়তো নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রম করে বাজারমূল্যের চেয়ে অধিক ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। আমরা সেই নির্মাণকেই দেখে বাহবা দেই; কিন্তু জনগণের অর্থ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহারকে আমলে নেই না। শুধু বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ও মধ্যপাড়া পাথর খনির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে জরিপ কাজে নিয়োজিত ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই নয়, অন্যান্য প্রকল্পেও এমন নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান জড়িত রয়েছে কিনা, তা খুঁজে বের করতে হবে। যাদের এরই মধ্যে এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে, তাদেরও ব্যাকগ্রাউন্ড খতিয়ে দেখতে হবে। নয়তো সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রীয় এসব সম্পদের অপব্যবহার হতেই থাকবে, আর গচ্চা যাবে জনগণের টাকা।
ঊষার আলো-এসএ