# সন্ত্রাসীদের ধারালো চাপাতি কোপে ব্যবসায়ীর পা বিচ্ছিন্ন
কামরুল হোসেন মনি : খুলনায় সন্ত্রাসীদের ধারালো চাপাতির কোপে রেজা শেখ (৩৮) নামে এক ব্যবসায়ীর গুরুত্বর আহত হয়েছেন। তাদের অস্ত্রের আঘাতে রেজা শেখের বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার মাথায়ও গুরুত্বর জখম হয়। গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে খুলনা লবণচরা থানাধীন জিরোপয়েন্ট এলাকার মেসার্স সিকদার ফিলিং স্টেশনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। গুরুত্বর আহত রেজা শেখ লবণচরা থানাধীন কৃষ্ণনগর এলাকার জনৈক সুলতান শেখের ছেলে। তার অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে। তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই রাতে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। মাদক বেচা কেনা কে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটতে পারে প্রাথমিকভাবে ধারনা পুলিশের।
লবণচরা থানার অফিসার ইনচার্জ মো: তৌহিদুজ্জামান গতকাল শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে এ প্রতিবেদককে বলেন, ঘটনার দিন রাতে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তবে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। রেজার ওপর কারাা হামলা চালিয়েছে সে বিষয়ে আমাদের কাছে রেজা দুইজনের নাম প্রকাশ করে গেছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম এই মুহুর্তে প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত রেজার পরিবার থেকে কেউ থানায় মামলা করতে আসেননি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
একটি গোয়েন্দার সূত্র মতে, চিৎড়ি পলাশ নামে কিছু দিন আগে জেল থেকে জামিনে বের হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক, অস্ত্রসহ ১৮টি মামলা রয়েছে। চিংড়ি পলাশ, ঢাকাইয়া শামীমসহ কয়েকজন মিলে রেজার ওপর এই হামলা ঘটাতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে।
রেজাও এক সময়ে বেপরোয়া ভাবে চলাফেলা করতো। তার নামে মাদক ও অস্ত্রসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা রয়েছে। রেজার বন্ধু কিল্লু ছিলো। সে চিহিৃত সন্ত্রাসী ছিলো। কয়েক বছর আগে কিল্লু ক্রশফায়ারে নিহত হয়। দীর্ঘদিন পলাতক ও জেলে থাকা চিহ্নিত কিছু সন্ত্রাসী জামিনে বেরিয়ে এসব সন্ত্রাসী কর্মকা- ঘটাচ্ছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে কিশোর গ্যাং, বখাটে ও উঠতি সন্ত্রাসীরা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আগের মতো দেখা যাচ্ছে না টহল ও অভিযান। এই সুযোগে সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রায় দিনে ও রাতে কোথায় না কোথাও চলছে হামলা, সংষর্ষ ও খুন। সেই সাথে এলাকায় ফিরছে এমন জানান দিতে চলছে অস্ত্র মহড়া। গত তিন মাসে খুলনায় বিভিন্ন জায়গায় ৮টি হত্যাকা- ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া হামলা-সংঘর্ষ তো আছেই।
জানা গেছে, গত ২৯ নভেম্বর রাতে নগরীর টুটপাড়া এলাকায় সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এর পর তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আমিন মোল্লা বোয়িংকে গুরুতর আহত করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আশিক বাহিনীর প্রধান আশিক, তার ভাই সজীবসহ ৯ জনের নাম উলে¬খ করে খুলনা সদর থানায় মামলা করেন নিহতের ছোট ভাই মো. আবদুল¬াহ। কিন্তু তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
নিহতের ভাতিজা ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সালাউদ্দিন মোল¬া বুলবুল বলেন, শত শত মানুষের সামনে সন্ত্রাসীরা গুলি করে ত্রাস সৃষ্টি করে কুপিয়ে চলে গেল, মামলা হলো, অথচ পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে পারল না!
গত ২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর বাজারে সন্ত্রাসীদের গুলিতে সবজি বিক্রেতা নাঈম সানা গুলিবিদ্ধ হন। ৩ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে নগরীর নিরালা এলাকায় ১০-১৫টি মোটরসাইকেলে এসে একদল সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে পথচারী ইউনুস শেখ গুলিবিদ্ধ হন। এর পর সন্ত্রাসীরা চাঁনমারি এলাকায় গিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ ছাড়া ওই এলাকার আব্দুল আহাদ হাওলাদার নামে এক যুবককে কুপিয়ে আহত করে।
৬ ডিসেম্বর বিকেলে রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইমরান হোসেন মানিক নামে এক যুবক আহত হন। এর আগে ২ নভেম্বর রাতে নগরীর আলকাতরা মিল এলাকায় সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও কুপিয়ে পঙ্গু রাসেল নামে এক সন্ত্রাসীকে হত্যা করে। এ সময় সজীব ও ইয়াসিন নামে দুই যুবককে কুপিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। একই রাতে নগরীর বাবু খান রোডে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান বেলালকে আহত করে।
নগরীর বসুপাড়া এলাকায় গত ৫ নভেম্বর রাতে অস্ত্রধারীরা রফিকুল ইসলাম মুক্তা নামে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে। গত ২৮ অক্টোবর দুপুরে সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নগরীর দৌলতপুর থানার কালীবাড়ি বাজারের দত্ত জুয়েলার্সে ডাকাতি করে। তারা জুয়েলার্স থেকে স্বর্ণালংকার ও নগদ ২ লাখ টাকা লুট করে পালিয়ে যায়।
গত ২১ অক্টোবর রাতে কয়রা উপজেলার কাটাখালী গ্রামে পুলিশের ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা অপহরণ মামলার আসামি হারুন গাজীকে ছিনিয়ে নেয়। তাদের হামলায় পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন।
গত তিন মাসে জেলা ও নগরীতে আটটি হত্যাকা- ঘটেছে। মোটরসাইকেলে সন্ত্রাসীদের মহড়ার ঘটনা ঘটেছে ১০-১১টি। নগরবাসীর অভিযোগ, নগরীতে আগের মতো পুলিশের টহল ও অভিযান দেখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া কারাগারে থাকা বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী জামিনে বেরিয়ে এসেছে। পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা এলাকায় ফিরেছে। সক্রিয় হয়ে উঠেছে তিন-চারটি কিশোর গ্যাং।
মহানগর বিএনপি গত ২৬ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পুলিশ কাজে ফিরলেও তাদের আচরণ ও ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে নগরীতে চুরি-ডাকাতি বেড়েছে।
খুলনা গোয়েন্দা বিভাগের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ডিব্)ি মো: তাজুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনার সাথে জড়িতদের ধরতে আমাদের ডিবির একাধিক টিম মাঠে সক্রিয় রয়েছে। সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত রেজা আমাদেরকে জানিয়েছে তার ওপর হামলার সাথে জড়িত দুইজনকে সে চিনতে পেরেছে। আমরা সেই দুইজনকে চিহিৃত করেছি। তাদের ধরতে খুলনা মহানগহর গোয়েন্দা বিভাগের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, মূলত মাদক বেচাকেনা-সংক্রান্ত বিরোধ এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এসব ঘটনা ঘটছে। আমরা নিয়মিত চেকপোস্ট বসিয়ে তল¬াশি চালাচ্ছি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অস্ত্রধারীদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করছি।