UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খুলনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ৮ দফা দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

koushikkln
আগস্ট ১১, ২০২৪ ৮:৪১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : খুলনার শিববাড়ী মোড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা, নির্যাতনের প্রতিবাদ ও ৮ দফা দাবী আদায়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সনাতন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
রোববার (১১ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে শিববাড়ী মোড়ে জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ একে একে মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে হাজির হন। এসময় পুরো শিববাড়ী এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ‘তুমি কে আমি কে, বাঙ্গালী বাঙ্গালী’, ‘হিন্দুদের ওপর হামলা কেন, জবাব চাই, জবাব চাই’, ‘আমার মাটি আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ’সহ নানা শ্লোগানে প্রকম্বিত হয় সমাবেশ স্থল। বিভিন্ন জেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে ভাঙচুর, মন্দিরের জায়গা দখল এবং অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সনাতনী মা-বোন, ভাইদের নির্যাতন, হত্যা ও দেশ ত্যাগের হুমকিসহ নানাবিধ নির্যাতনের প্রতিবাদ জানানো হয় সমাবেশে।
এসময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে সনাতন শিক্ষার্থীরা তাদের আট দফা দাবী তুলে ধরেন। দাবীগুলো হলোঃ ১। সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। ২। অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে। ৩। সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রনালয় গঠন করা। ৪। হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে, পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা। ৫। দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষন আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন আইন যথাযথ বাস্তবায়ন করা। ৬। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা কক্ষ বরাদ্দ করা। ৭। সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন করা। ৮। শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিন ছুটি দেয়া।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের খুলনা জেলার সভাপতি বিমানবিহারী রায় অমিত বলেন, ‘গত ৫ তারিখে একদল দুষ্কৃতিকারী আমার তিন তলা বাড়ীতে এসে হামলা করে। তারা বাড়ীর প্রধান ফটক ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে। ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে তারা বাড়ীর বাইরের অংশে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে।’ ত্রিশ নম্বর ওয়ার্ডের জোড়াকল বাজারের আশেপাশের অন্তত ২০টি বাড়ীতে আমরা চালিয়েছে তারা। অনেকের বাড়ীর সাথে লাগোয়া দোকান থেকে অনেকে মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, জেলার অন্যান্য জায়গা বিশেষ করে রূপসা, পাইকগাছাসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে হিন্দুদের বাড়ী-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-লুটপাট ও নির্যাতনের খবর পাচ্ছি।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া উজ্জল সাহা বলেন, ‘আমাদের হিন্দুদের বাড়িঘর, মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে নিরাপত্তা দেওয়ার মতো কেউ নেই। প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নেওয়ার জন্য অনেকে বর্ডারে গিয়ে বসে আছে। তাদের সম্মানের সঙ্গে বাড়িতে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।’
আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিকাশ বৈরাগী বলেন, ‘ এই দেশটা তো সবার। এখানে আমাদের নিরাপত্তা চাই। যেই ক্ষমতায় আসুক, আমাদের কোনও সমস্যা নেই৷ কিন্তু আমাদের বাসস্থান ও ধর্মীয় স্থাপনার নিরাপত্তা চাই।’
সরকারি ব্রজলাল কলেজের শিক্ষার্থী পূজা চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বাড়ীর পাশে একটা বাজার আছে। সেখানে কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন এলাকার লোকজন এসে আড্ডা দিচ্ছে এবং আমাদেরকে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। বাধ্য হয়ে আমি খুলনা শহরের ভাড়া বাড়িতে এসে অবস্থান নিয়েছি।’
“আমরা নিরাপত্তা চাই। সব সনাতনী হিন্দু সম্প্রদাঢের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’
এছাড়াও শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। আগামীকাল গোলকমনি পার্ক ও পিকচার প্যালেস মোড়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে।