এম এন আলী শিপলু : তালের শাসঁ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি খাবার। তালের শাসেঁ রয়েছে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। এর বেশির ভাগ অংশ জলীয় হওয়ার ফলে শরীরের পানির চাহিদা মেটাতে সক্ষম। আমাদের দেশে তাল সাধারণ ভাদ্র মাসে পেকে থাকে। পাকা তাল দিয়ে পিঠা পায়েস খাওয়ার প্রচলন অনেক আগে থেকেই। এছাড়াও তালের নরম শাসঁ খেতে কমবেশি সবাই পছন্দ করে। জৈষ্ঠ্য মাসে তালের শাসঁ খাওয়ার উপযোগী হয়। জৈষ্ঠ্য মাসের শুরুতেই গাছ থেকে তাল পেড়ে বাজারে বিক্রির ধুম পড়ে যায়। ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়েন তালের শাসঁ কিনতে। শুরুতে দাম একটু চড়া থাকলেও ধীরে ধীরে কমে আসে। শুরু দিকে স্বল্প আয়ের মানুষজন শাসঁ না কিনলেও দাম কমার পর সব শ্রেণির মানুষ তালের শাসেঁর স্বাদ নিয়ে থাকেন। এক মাসের জন্য এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে শাসঁ বিক্রির থাকেন। খুলনা শহরে অল্প কিছু থাকলেও উপজেলাগুলোতে তাল গাছ চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। উপজেলাগুলো থেকে তাল সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বিক্রি করেন শহরের বাজারগুলোতে। বিক্রিও হয় বেশ ভাল। ছোট বড় সবারই রয়েছে তালের শাসেঁর প্রতি দুর্বলতা।
এ বিষয়ে কথা হয় বটিয়াঘাটা উপজেলা থেকে আসা বিক্রেতা সেলিম মিয়ার সাথে। তিনি জানায়, বছরের অন্য সময়গুলোতে অন্যান্য পেশার সাথে জড়িত থাকলেও এক মাসের জন্য তালের শাসঁ বিক্রি করে থাকি। এক মাসে আয় প্রায় হাজার ৩০ টাকা হয়।
নগরীর ভ্রাম্যমান তাল ব্যবসায়ী সামসু জানান, গ্রামের তুলনায় শহরে তাল শাসেঁর চাহিদা বেশি। দামও ভাল পাওয়া যায় আর বিক্রিও সন্তোষজনক। তাই গত বিশ বছর ধরে গ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে কিনে তালের শাসঁ বিক্রি করে থাকি।
তালের শাঁস খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। তাই সবার হাতে পোঁছে যায় কঁচি তালের শাস। বর্তমানে এর চাহিদা অনেক বেড়েছে। বিক্রেতা শাস কেটে সারতে পারছেনা, ক্রেতারা দাড়িয়ে রয়েছে শাস নিতে। স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীসহ সকল বয়সী লোকের মাঝে এই তালের শাসের কদর দিন দিন বেড়েই চলছে।
বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা: মিজানুর রহমান বলেন, প্রচুর গরমে তালের কচি শাঁস এবং এর ভেতরের মিষ্টি পানি তৃষ্ণা মিটিয়ে শরীরে এনে দেয় আরামদায়ক অনুভূতি। তালে আছে প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৮ গ্রাম খাদ্যপযোগী খনিজ পদার্থ, ২০.৭ গ্রাম শর্করা, ০.৮ গ্রাম আমিষ, ০.৫ গ্রাম আঁশ। গরম শরীরের পানির অভাব পূরণ করতে এর মধ্যে আছে ৭৭.৫ ভাগ জলীয় অংশ। ০.৫ গ্রাম খাদ্য আঁশ থাকায় এটি হজমে সহায়ক। অবাক করার মতো খাদ্যশক্তি রয়েছে তালের শাঁসে। প্রায় ৮৭ কিলোক্যালোরি। ৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকায় তালের শাঁস হাড় গঠনেও দারুণ ভূমিকা রাখে।
খুলনা শহরসহ উপজেলাগুলোতে প্রচুর তাল গাছ রয়েছে। তবে কৃষি বিভাগে এর কোন পরিসংখ্যান নেই। তালের শাস অতি সু-স্বাদু হওয়ায় সকল শ্রেণীর মানুষের মাঝে তালের শাস একটি জনপ্রিয় ফল। এখন শহরের বিভিন্ন বাজার, বাসস্ট্যান্ডগুলোতে এবং অলিতে-গলিতে তালের শাস বিক্রি করে অনেক হত দরিদ্র মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন।
নগরীর দোলখোলা এলাকার আলম মিয়া জানান, তিনি প্রতিবছরই এ দিনে তালের শাস বিক্রি করে সংসার চালান। গ্রাম থেকে তাল ক্রয় করে ও গাছ থেকে পেরে এনে শাস বিক্রি করেন। বৈশাখ মাস থেকে জৈষ্ঠের অর্ধেক পর্যন্ত এ দেড় মাস চলবে তালের শাস বিক্রির কাজ। প্রতিদিন প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ শাস বিক্রি করা যায়। একটি শাস আকার ভেদে ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি করছি। এতে তার প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ হয়। তালের শাস বিক্রি করে চার জনের সংসার ভালই চলছে।
তালের শাসের ক্রেতা সরকারি চাকরিজীবী অনামিকা জেসমিন জানান, তালের শাস একটি সুস্বাদু ফল। গরম থেকে এসে তালের শাস খেতে ভালই লাগে। ফলে এর চাহিদা দিন-দিন বেড়েই চলছে। তবে তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে উকি মারে আকাশে, কবির সে কবিতার মতো সারি-সারি তাল গাছ রাস্তার দু’ধারে এমন দৃশ্য আর চোখে পড়েনা। কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আবাসন গড়ায় শহর থেকে তাল গাছ হারিয়ে যাচ্ছে।
(ঊষার আলো-এমএনএস)