‘রাজনীতি থেকে ক্ষমতা, ক্ষমতা থেকে রাজত্ব’ এভাবেই গড়ে উঠেছিল সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রীর মুহিববুর রহমানের দখল সাম্রাজ্য। পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন শত শত একর জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে মুহিববুর রহমান ও তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার রেখা কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় প্রায় ২০০ একর জমি দখল করেছেন। এসব জমির মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিমালিকানাধীন, সরকারি খাসজমি, জলাভূমি ও ঘের। এমনকি তার আপন ভাই, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের প্রকৌশলী তৌহিদুর রহমানের নামেও নথিভুক্ত হয়েছে কয়েক একর জমি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, যারা জমি দখলের প্রতিবাদ করতেন, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, এমনকি সরাসরি হামলা চালানো হতো। ফলে পটুয়াখালীর বিভিন্ন অঞ্চলে তার নাম একসময় আতঙ্কের সমার্থক হয়ে উঠেছিল।
কলাপাড়ার ধুলাস্বর ইউনিয়নের ভুক্তভোগী মাহাবুব আলম বলেন, আমার বাবা মসজিদে ইমামতি করতেন। কষ্ট করে জমি কিনেছেন, আমি ঢাকায় রিকশা চালিয়ে ও ঢালাই কাজ করে দুই একর জমি কিনেছি। কিন্তু মুহিববুর রহমান আমার জমি জোর করে দখল করেছে। জমির কাছে গেলেই পুলিশ দিয়ে আমাদের মারধর করা হতো। জমির কাগজপত্র আমাদের নামে থাকার পরেও এখন আমরা সেখানে যেতে পারি না।
আরেক ভুক্তভোগী প্রিন্স খলিফা বলেন, আমি বাবার একমাত্র সন্তান। বাবার ২ একর ৩৭ শতাংশ জমি মুহিববুর রহমান জোর করে দখল করে সেখানে তিন তলা বিশিষ্ট ভবন বানিয়েছেন। আমি নিজের বাড়িতে না এলেও আমার বিরুদ্ধে ৮টি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।
ধুলাস্বর ইউনিয়নের আরেক ভুক্তভোগী ছলেমান বিশ্বাস বলেন, আমাদের তিন একর ৩৩ শতাংশ জমি দখল করেছে। সেসময় সিকদার রিসোর্টে ডেকে নিয়ে জাকাত হিসেবে ৮০ হাজার টাকা ধরিয়ে দেয় আমাদের। রাজি না হলে আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে জেলে পাঠায়। আমাদের বাড়িঘর কুপিয়ে দেওয়া হয়েছে, ফলে আমরা পলাতক জীবনযাপন করছি।
পটুয়াখালী জেলা জজকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পি.পি.) অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান টোটন বলেন, মুহিববুর রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে জমি দখলের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা আইনের আশ্রয় নিলে সব ধরনের সহযোগিতা করবে সরকার।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মুহিববুর রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও জমি দখলের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। তবে প্রশাসন এখনো তার অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি। বর্তমানে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী স্বপরিবারে পলাতক রয়েছেন।
ঊষার আলো-এসএ