ঊষার আলো রিপোর্ট : শিল্পে গ্যাসের সংযোগ মিলছে না। জমি ক্রয় ও লিজ নিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। বিদেশি কর্মী ও উদ্যোক্তাদের ওয়ার্ক পারমিট এক্সটেনশন পেতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এতে হতাশায় ভুগছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর সঙ্গে রয়েছে এলসি খোলার জটিলতা। দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে এসব সমস্যার সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
শনিবার স্টেকহোল্ডার কনসালটেশন উইথ চাইনিজ ইনভেস্টরস : চ্যালেঞ্জেস, এক্সপেকটেশনস অ্যান্ড প্রসপেক্টস’ শিরোনামে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এ সুপারিশ করেছেন।
বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাস ও বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিসিআই) এর আয়োজন করেছে।
ওই সেমিনারে তিতাসের পক্ষ থেকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সাগত্তম কুমার শাহা বলেন, বিনিয়োগের জন্য শিল্পে গ্যাস সংযোগ পাওয়া খুবই জরুরি। কিন্তু গ্যাসের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের সরবরাহ সংকট রয়েছে। পেট্রোবাংলা সংকট দূর করতে এলএনজি আমদানি ও এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের চেষ্টা করছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই আমরা গ্যাস সংযোগ দেওয়া শুরু করতে পারব।
সেমিনারে বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) মহাপরিচালক শাহ মোহাম্মদ মাহবুব। তিনি বলেন, কোনো একটি দেশে বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার রাজনৈতিক ও পলিটিক্যাল স্থিতিশীলতা, ট্যাক্স অব্যাহতি সুবিধা ও অন্যান্য ইস্যু, যার সবকিছু বাংলাদেশে রয়েছে। ২০৪০ সালে উন্নত দেশ হতে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ৬০৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন। বর্তমানে দেশে মোট বিদেশি বিনিয়োগের ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ পুনরায় বিনিয়োগ (রিইনভেস্টমেন্ট) হচ্ছে। অর্থাৎ, এখানে যেসব বিদেশি উদ্যোক্তারা ব্যবসা করছেন, তারা মুনাফা করায় আবার পুনঃবিনিয়োগ করছেন।
সেমিনারে একজন উদ্যোক্তা বলেন, চীনসহ অনেক দেশের এলসি খুলছে না, ফেরত দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এটি আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এ সময় জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ ইনভেস্টমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এর উপপরিচালক আব্দুল্লা আল মামুন বলেন, আমরা এলসি খোলার ক্ষেত্রে কিছু প্রবলেম দেখতে পাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনা করব। আশা করছি, এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে।
রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে আয়োজিত সেমিনারে বিসিসিসিআই এবং চায়না এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (সিইএবি) সদস্যরা এভাবে নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
সেমিনারে একজন চাইনিজ উদ্যোক্তা প্রশ্ন করে বলেন, বাংলাদেশে এক বছরের ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট বেশ জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। এক্ষেত্রে ভিসা নীতি ও অনুমোদন নবায়ন প্রক্রিয়ার বিষয়টি বিডার হাতে রাখতে পারে।
এছাড়া বিদেশি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে জমি কিনতে বা লিজ নিতে সমস্যা হওয়ার বিষয় তুলে ধরা হয়। এর জবাবে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য বিডার গাইডলাইন পড়ার পরার্মশ দিয়ে বিডার ডিজি বলেন, সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্সের জন্য আমরা ম্যানুয়ালি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাই, সেখান থেকে ম্যানুয়ালি পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে পাঠানো হয়। এজন্য সময় বেশি লাগে। তবে আমরা ডিজিটালি ফাইল লেনদেনের উদ্যোগ নিয়েছি, এতে সময় কম লাগবে।
তিনি আরও বলেন, জমির জটিলতার বিষয়ে কোনো সমাধান আমার কাছে নেই। তবে উদ্যোক্তাদের বেজা’র অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বেপজার এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন, বিসিকের শিল্প নগরী কিংবা হাইটেক পার্ক অথরিটি থেকে জমি কেনার পরামর্শ দেন তিনি।
এছাড়া, জমি কেনা বা লিজ নিয়ে কোনো জটিলতা দেখা দিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভূমি আইন অনেক জটিল। ভূমি মন্ত্রণালয় এটি সহজতর করতে কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিডার নির্বাহী সদস্য অভিজিত চৌধুরী বলেন, আমরা জানি যে, বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধন করার পর জমি কেনা, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়াসহ ট্যাক্স, কাস্টমসে উদ্যোক্তাদের অনেক সমস্যা হতে পারে। সেসব সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা আফটার কেয়ার সার্ভিস চালু করেছি। ইতোমধ্যে আফটার কেয়ারের মাধ্যমে বিএসআরএম ও লাফার্স সিমেন্টসহ বিভিন্ন কোম্পানির অনেক সমস্যা সমাধান করেছি।
তিনি বলেন, ‘এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে বিপুল পরিমাণ চাইনিজ বিনিয়োগ প্রয়োজন। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসতে পারে নিরাপত্তার সঙ্গে।
বিসিসিসিআই এর সেক্রেটারি জেনারেল আল মামুন মৃদা বলেন, ২০১৯ সাল পর্যন্ত চীন বাংলাদেশে একক সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী ছিল। কোভিড ও চীনের জিরো কোভিড নীতির কারণে কয়েকবছর চীনা বিনিয়োগ কম এসেছে। তবে এখন অনেক বিনিয়োগ আসছে। চীনা বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে বিদ্যমান রিজার্ভ ক্রাইসিস মোকাবিলা করা সহজ হবে।
ঊষার আলো-এসএ