আগামী বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিলে মোট দেশজ উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হবে ব্যাংক খাতের বড় অঙ্কের ঋণগুলো।
পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে কৃষি উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ফলে ব্যাংক খাতে ঋণ শৃঙ্খলায় আঘাত আসতে পারে। এ কারণে জলবায়ুর প্রভাব সম্পর্কে এখনই ব্যাংক ও ঋণ গ্রহীতাদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রকাশিত ‘জলবায়ুর চাপ পরীক্ষা, বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের জন্য একটি গবেষণা’ প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এই প্রথম কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ধরনের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করল।
এদিকে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের আর্থিক খাতের ঝুঁকির মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি উলেখযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের অন্যতম একটি শর্ত হচ্ছে জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ।
প্রতিবেদনে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবের কারণে আগামীতে ব্যাংক খাত কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং সম্ভাব্য এ ক্ষতি মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসাবে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের মার্চ মাসের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে একটি ম্যাক্রো পদ্ধতি বিবেচনা করে জলবায়ুর চাপ ব্যাংক খাতে কীভাবে এবং কেমন পড়তে পারে সে বিষয়ে পরীক্ষার অনুশীলন গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ুর প্রভাবের কারণে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হলে জিডিপিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাধ্য হয়ে ব্যাংকের বড় অঙ্কের ঋণগুলোর পরিশোধ কমে যাবে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সব মিলে ব্যাংক খাতের ঋণ শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে পারে। ইতোমধ্যে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবের কারণে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। কখনো অতি বন্যা ও অতি খরার ঘটনাও ঘটছে। তাপপ্রবাহ যেমন বাড়ছে, কোনো কোনো দেশে শীতের তীব্রতাও বাড়ছে।
এতে কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর ঋণের একটি বড় অংশই দেওয়া হয়েছে কৃষি খাতে। জলবায়ুর নেতিবাচক পরিস্থিতিতে কৃষি উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটলে ঋণের টাকা ফেরত আসা একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে। যার আঘাত কমবেশি ব্যাংকগুলোর ওপর পড়বে।
প্রতিবেদনে কৃষি খাতে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনই জলবায়ুর পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় ব্যাংকগুলো বিকল্প তহবিল বা ক্ষতি মোকাবিলার কৌশল সম্পর্কে এখনই ভাবতে হবে।
গবেষণায় অর্থনীতিভিত্তিক স্যাটেলাইট মডেল প্রয়োগ করে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার কমলে ব্যাংকগুলোর ঋণ ঝুঁকির মধ্যে একটি সম্পর্ক বের করার চেষ্টা করা হয়েছে। এর প্রভাবে উৎপাদন কমলেও জিডিপি কমবে। তখন যেসব কারখানার উৎপাদন কমবে তারা ঋণ শোধে সক্ষমতা হারাবে। এতে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে যাবে। মূলধনে চাপ বাড়বে। যা ব্যাংকগুলোর ব্যালেন্স শিটের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এজন্য জলবায়ুর কারণে সম্ভাব্য ঝুঁকির প্রভাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে এখনই সব খাতে সতর্ক হতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি স্টেকহোল্ডারদের সচেতন করার পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কারণ এখনই অর্থনীতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এর প্রভাবে নেতিবাচক পরিস্থিতি ধারাবাহিকভাবে বৃহত্তর ঋণ ক্ষতির দিকে ধাবিত হবে। বড় অঙ্কের ঋণ ক্ষতির মুখে পড়লে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক আক্রান্ত হবে। এর নেতিবাচক প্রভাব পুরো ব্যাংক খাতের ওপর পড়বে। এ কারণে সম্ভাব্য ক্ষতি কমাতে এখনই জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
ঊষার আলো-এসএ