UsharAlo logo
মঙ্গলবার, ২২শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন পাস

koushikkln
আগস্ট ২৯, ২০২২ ১১:৪০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো ডেস্ক : রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা তৈরির বিধান রেখে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন পাস হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রীয়ভাবে রাজাকারদের তালিকা তৈরির পথে আইনি বাধা কাটলো।

সোমবার (২৯ আগস্ট) জাতীয় সংসদে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বিল-২০২২’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

গত ৫ জুন বিলটি সংসদে তোলেন মন্ত্রী মোজাম্মেল হক। পরে তা পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
বর্তমান সরকার স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা তৈরি করতে কয়েক বছর আগেই উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে, আইনি বাধায় সেই উদ্যোগে ছেদ পড়ে। বিলটি পাস হলে রাষ্ট্রপতির সন্মতি দেওয়ার পর গেজেট আকারে প্রকাশ হলে তা আইনে পরিণত হয়।
সংসদে উত্থাপিত বিলে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইনে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা’ এই আইনে গৃহীত হবে বলে উল্লেখ ছিল। তবে সংসদীয় কমিটি সেই সংজ্ঞা পূর্ণাঙ্গভাবে বিলে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
বিদ্যমান আইনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীদের তালিকা প্রকাশের বিষয়ে কিছু উল্লেখ ছিল না।

বিলে বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাহারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর সদস্য হিসাবে কর্মকাÐে লিপ্ত ছিলেন বা আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসাবে কর্মকাÐে লিপ্ত ছিলেন বা আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসাবে সশস্ত্র যুদ্ধে নিয়োজিত থাকিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করিয়াছেন বা খুন, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগের অপরাধমূলক ঘৃণ্য কার্যকলাপ দ্বারা নিরীহ মানুষকে হত্যার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করিয়াছেন অথবা একক বা যৌথ বা দলীয় সিদ্ধান্তক্রমে প্রত্যক্ষভাবে, সক্রিয়ভাবে বা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করিয়াছেন তাহাদের তালিকা প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করবে।’
বিলে বলা আছে, কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা ১২ জন করা হয়েছে। আগের আইনে ৯ জন ছিলেন। কাউন্সিলের প্রধান উপদেষ্টা হবেন প্রধানমন্ত্রী।

কাউন্সিলের আট সদস্য প্রদান উপদেষ্টা মনোনয়ন দেবেন। যারা বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কর্মকাÐে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনও ব্যক্তি বা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য হবেন।
উপদেষ্টা পরিষদে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকবেন। প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক মনোনীত পাঁচ সদস্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের ফোর্স কমান্ডার, সাব সেক্টর কমান্ডার অথবা কমান্ডারসমূহের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, এই বিষয়ক কর্মকাÐে সংশ্লিষ্ট কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তি বা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের সচিবও এই পরিষদে থাকবেন।
কাউন্সিল মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠনের নিবন্ধন প্রদান, সাময়িকভাবে স্থগিত ও বাতিল করতে পারবে।

২০১৯ সালে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধনের খসড়া তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ওই বছর ২৯ ডিসেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সুপারিশও নেওয়া হয়। ২০২০ সালের মার্চ মাসে আইনের ভাষা পরিমার্জনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষে পাঠানো হয়।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে দুটি সংশোধনী দিয়ে ওই খসড়ার নীতিগত অনুমোদন করা হয়। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা গত জুনে মন্ত্রিপরিষদ সভায় পাঠানো হয়। এ বছরের জানুয়ারি মানে খসড়া আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

রাজাকারদের তালিকা তৈরি করতে ২০২০ সালে একটি উপ-কমিটি করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটি প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করবে। পরে খসড়া আইনটি মন্ত্রিসভায় যাওয়ার পর তারা সিদ্ধান্ত পাল্টায়। গত এপ্রিল মাসে আগের কমিটি ভেঙে নতুন করে উপ-কমিটি পুনর্গঠন করা হয়।
বিলটির ওপর আলোচনায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও একটি পূর্ণাঙ্গ মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরি করা যায়নি। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি তারাও এখন মুক্তিযোদ্ধা। পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে, ২ হাজার মুক্তিযোদ্ধার বয়স ৫০ বছর। স্বাধীনতারও ৫০ বছর তাদের বয়সও ৫০ বছর সঠিকভাবে যাচাই বাছাই করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা করা উচিত।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, ‘একজন মন্ত্রী বলেছেন, খেলা হবে। খেলা শুরু হয়ে গেছে। সারা দেশে বিএনপির সভা সমাবেশে হামলা মামলা, ভাংচুর চলছে। এটা কি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের মধ্যে পড়ে? বিএনপির নেতা তরিকুল ইসলামের বাসায় তিন দিন হামলা হয়েছে। রাষ্ট্রকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?’

গুমের বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে হারুন বলেন, ‘মানুষ গুম করা হয়েছে। আর সরকার বলছে, নিখোঁজ। এভাবে চলতে পারে না, জোর যার মুল্লুক তার। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে দেশ চালাতে হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’