পলাশ কর্মকার : টিসিবি পণ্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ডিলার ও ট্যাগ অফিসারকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফাঁদে আটকা পড়ছে টিসিবির অপর এক ডিলার। সরকারের অগ্রগামী এই মহতী উদ্যোগকে ব্যাহত করার অপচেষ্টায় সরকারি কর্মকর্তা ও ডিলারকে নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করে ফায়দা লোটার কাহিনী প্রশাসনিক তদন্তে উঠে এসেছে।
জানা গেছে, গত ২৬ নভেম্বর শনিবার পাইকগাছা পৌরসভায় টিসিবির ১৬৪১ কার্ডধারী সুবিধাভোগীর মধ্যে টিসিবির মালামাল বিক্রি করার নির্দেশনা পায় মেসার্স কপিলমুনি ট্রেডার্স। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশ মতে পাইকগাছা টাউন স্কুল মাঠে সকাল সাড়ে ৯টা হতে শুরু হয় পণ্য বিতরণ কার্যক্রম। যথারীতি পণ্য বিতরণের পূর্বেই পাইকগাছা পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ মোঃ তৈবুর রহমান, কবিতা দাস (প্যানেল মেয়র) ট্যাগ অফিসার মোঃ ইমান উদ্দিন, ইন্সট্রাক্টরসহ যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ বাবলুর রহমান, ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল গাফফার মোড়ল, ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াহেদ গাজী, ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ আলাউদ্দিন গাজী এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর রাফেজা বেগম ও আসমা আহমেদ পণ্য বিতরণের স্থানে উপস্থিত হন।
মেসার্স কপিলমুনি ট্রেডার্স এর মালিক মোনওয়ার হুসাইন জানান, নিয়ম মেনেই ট্যাগ অফিসারসহ উপস্থিত কাউন্সিলরদের ১৬৪১টি কার্ডধারীর মাঝে পণ্য বিতরণের পূর্বেই তাদের বুঝিয়ে দেয়। পরবর্তীতে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত অন্যন্যদের সাথে অপর প্যানেল মেয়র-১ মোঃ মাহবুবুর রহমান রঞ্জুর উপস্থিতিতে কার্ডধারী ব্যক্তিদের মাঝে নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হয়। পণ্য বিক্রয়ে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোন স্বার্থান্বেষী মহল সরকারের এই মহতী উদ্যোগকে ব্যাহত করতে কাজটি করেছে।
এদিকে বিভিন্ন মাধ্যমে টিসিবির পণ্য না পেয়ে শূন্য হাতে ফিরলেন কার্ডধারী এমন সংবাদ প্রচারিত ও প্রকাশিত সংবাদ আমলে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট ডিলার, দুইজন ট্যাগ অফিসার, প্যানেল মেয়র, উপস্থিত কমিশনার সহ ঐদিন টিসিবির মাল গ্রহণ করতে পারেনি মর্মে উল্লেখিত নামীয় কিছু কার্ডধারীকে তদন্তের স্বার্থে হাজির করে তদন্ত কার্য সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। ০১ ডিসেম্বর ওই তদন্তে সুপরিকল্পিত ভাবে টিসিবি ডিলার মোনওয়ার হুসাইন ও ট্যাগ অফিসারদের ফাঁসিয়ে নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার হোতা জনৈক টিসিবি ডিলারের নাম উঠে এসেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সূত্রের দাবি, পাইকগাছা পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কার্ডধারী আব্দুস সাত্তার, মোঃ মনিরুল ইসলাম, ৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা লীজা সহ প্যানেল মেয়র, একাধিক কাউন্সিলর, ট্যাগ অফিসারবৃন্দ তাদের লিখিত বক্তব্য নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। তাদের লিখিত বক্তব্যে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট তথ্য প্রচারের অন্তরালে টিসিবির এক ডিলার ও সহযোগীর নাম এসেছে। বর্ণিত কার্ডধারী ব্যক্তিদের অভিযোগ, জনৈক সুভাষ ওই দিনের দায়িত্বে নিয়োজিত ডিলার মেসার্স কপিলমুনি ট্রেডার্স এর কোন নিয়মিত ব্যক্তি না হওয়া সত্বেও তাদের কার্ডের ও মোবাইল নাম্বার রেখে দেন।
অপরদিকে সূত্রটির দাবি, তদন্তে হাজির হওয়া প্যানেল মেয়রসহ একাধিক কাউন্সিলর তাদের লিখিত বক্তব্যে পণ্য বিক্রিকালীন সময়ে তাদের উপস্থিতি এবং কার্ডধারীদের মাঝে সুষ্ঠু ভাবে ঐদিন মাল বিতরণ করা হয়েছে স্বীকার করেন। কোন ব্যক্তি বা মহলের ইন্ধনে প্রশাসন তথা পৌর কর্তৃপক্ষকে হেয় করার জন্য মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম জানান, পৌরসভায় টিসিবির পণ্য না পেয়ে তিনশত জন কার্ডধারী ফিরে যাওয়ার ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা বাস্তবায়নে তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ডিলার ও প্রশাসনকে হেয় প্রতিপন্ন করতে কেউ ষড়যন্ত্র করেছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, ঘটনার দিন দায়িত্ব প্রাপ্ত দুইজন ট্যাগ অফিসার অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও সৎ এবং টিসিবি ডিলার মোনওয়ার হুসাইন একজন শিক্ষিত, সৎ ও বিনয়ী তার দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে।
উল্লেখ্য পাইকগাছা টিসিবির পণ্য বিতরণের সময় ইতোপূর্বে টিসিবি ডিলার পিংকি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর মালিক জনৈক সুভাষ এর বিরুদ্ধে ট্যাগ অফিসারকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। গত ২৬/১১/২০২২ তারিখের কথিত ঘটনাটি ঐ ঘটনার পূনরাবৃত্তির পূর্বাভাষ কিনা এ নিয়ে শঙ্কিত সংশ্লিষ্টরা।