ঊষার আলো ডেস্ক: ভারতীয় হাই কমিশন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ভারতীয় রুপিতে (আইএনআর) ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য চালু করতে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে। অনুষ্ঠানটিতে বাংলাদেশ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ব্যাংকিং/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সদস্যগণ, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও গণমাধ্যমসমূহের অভূতপূর্ব অংশগ্রহণ ছিল।
আজ মঙ্গলবার (১১ জুলাই) অনুষ্ঠানটির সহ-আয়োজক ছিলেন হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জনাব আবদুর রউফ তালুকদার। হাই কমিশনার তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে গত এক দশকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে রূপান্তরিত হয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে দৃশ্যত ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের সংযোগ ছিল সেই রূপান্তরের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বহিঃপ্রকাশ। তিনি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ এবং অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে নতুন উপায় খুঁজে বের করার জন্য উভয় দেশের সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টার উপরও জোর দেন। হাই কমিশনার আরও বলেন, ভারতীয় রুপিতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিষ্পত্তির জন্য এই নতুন পদ্ধতির সূচনা উভয় দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই প্রচেষ্টার চূড়ান্ত পরিণতি, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করতে, লেনদেনের ব্যয় ও সময় কমাতে, বাণিজ্য নিষ্পত্তির গতি, দক্ষতা ও সুবিধার উন্নয়ন ঘটাতে এবং সেই লক্ষ্যে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব ও সামগ্রিক বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা করবে। তিনি এটাও স্বীকার করেন যে, স্থানীয় ব্যবসার পক্ষ থেকে দীর্ঘদিনের চাহিদার প্রেক্ষিতে এই প্রক্রিয়াটি চালু করা হয় এবং বিশেষ করে কমপ্রিহেন্সিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা)-র প্রেক্ষাপটে, দীর্ঘমেয়াদে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে আরও বৃদ্ধি করার অসাধারণ সম্ভাবনা এর রয়েছে, যার জন্য শীঘ্রই আলোচনা শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক জটিলতায় বিশ্বের দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে লড়াই করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারতীয় রুপিতে (আইএনআর) ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের সূচনা এই জটিলতাসমূহকে হ্রাস করবে এবং বাণিজ্যিক উন্নয়নের জন্য নতুন পথ উন্মুক্ত করবে। গভর্নর এই নতুন ব্যবস্থাটির সুবিধাসমূহের ওপর গুরুত্ব দেন যাকে তিনি একটি নতুন যাত্রার সূচনা হিসাবে বর্ণনা করেন যা ব্যবসার জন্য একটি ইতিবাচক মানসিক বিকাশ ঘটাবে যাতে ভবিষ্যতে বাণিজ্যকে বহুগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়।
ভারত থেকে এই নতুন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের জন্য বর্তমানে নির্ধারিত ভারতীয় ব্যাংকগুলো হলো স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই ব্যাংক, এবং মনোনীত বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো হলো সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড। ভারতীয় রুপিতে (আইএনআর) দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিষ্পত্তির জন্য নির্ধারিত প্রতিটি বাংলাদেশি ব্যাংক-কে মনোনীত ভারতীয় ব্যাংকগুলোতে একটি স্পেশ্যাল রুপি ভোস্ট্রো অ্যাকাউন্ট (এসভিআরএ) খুলতে হবে৷আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় রুপিতে (আইএনআর) বাণিজ্য শুরু করার লক্ষ্যে, প্রথম রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকের মধ্যে তাদের ব্যাংকসমূহের মাধ্যমে একটি আনুষ্ঠানিক ‘লেটার অব ক্রেডিট, অর্থাৎ, এলসি নথিপত্রের বিনিময়’ করা হয়। বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় রুপিতে (আইএনআর) প্রথম রপ্তানি করে তামিম এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বগুড়া, বাংলাদেশ, যার মূল্যমান ১৬ মিলিয়ন ভারতীয় রুপি (আইএনআর)। ভারতে আইসিআইসিআই ব্যাংক এই আমদানি এলসি খোলে যেখানে এসবিআই বাংলাদেশ ছিল রপ্তানিকারকের ব্যাংক। বাংলাদেশে ভারতীয় রুপিতে (আইএনআর) প্রথম আমদানি করে নিটা কোম্পানি লিমিটেড, ঢাকা, বাংলাদেশ, যার মূল্যমান ১২ মিলিয়ন ভারতীয় রুপি (আইএনআর)। আমদানি এলসি-টি বাংলাদেশের এসবিআই ঢাকা শাখা, যার রপ্তানিকারকের (টাটা মোটরস) ব্যাংক হলো এসবিআই সিএজি শাখা, মুম্বাই। এই অনুষ্ঠানে ভারতীয় রুপিতে (আইএনআর) বাণিজ্যের পদ্ধতির ওপর এসবিআই-এর কান্ট্রি হেড কর্তৃক উপস্থাপিত একটি সংক্ষিপ্ত প্রেজেন্টেশান অন্তর্ভুক্ত ছিল। অনুষ্ঠানটিতে ভারতীয় রুপিতে (আইএনআর) বাণিজ্য করার জন্য নির্বাচিত চারটি মনোনীত ব্যাংকের প্রধানগণের কাছ থেকে সংক্ষিপ্ত ভিডিও বার্তার পাশাপাশি বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়িক চেম্বারসমূহের প্রধানগণের সংক্ষিপ্ত ভিডিও কোলাজ থেকে নেওয়া ভিডিও বার্তাও অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা এই নতুন ব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারাকে ব্যক্ত করেছে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন তপন কান্তি ঘোষ, সিনিয়র সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়; লোকমান হোসেন মিয়া, নির্বাহী চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা); এবং শেখ মোহাম্মদ সেলিম উল্লাহ, সচিব, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি), অর্থ মন্ত্রণালয়। এছাড়াও অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই, আইবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ডিসিসিআই, বিকেএমইএ-এর প্রেসিডেন্টগণ।
ঊআ-বিএস