ঊষার আলো ডেস্ক : দেশে করোনা (কোভিড-১৯) মহামারি মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্ত এদিকে ডেঙ্গুজ্বর সংক্রমণের মৌসুম একেবারেই নিকটে। ঢাকা সব সময়ই ডেঙ্গি সংক্রমণের একটি হটস্পট হিসাবে চিহ্নিত। এ বছরও ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতির কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে।
মূলত এডিস মশার প্রকোপ মানুষের অসচেতনতার কারণেই বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা জন্ম নেয়। ছাদে জমা বৃষ্টির পানি কিংবা নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন অংশে জমে থাকা পানি এই মশা জন্মের সবচেয়ে অনুকূল একটি স্থান। যত্রতত্র ফেলে রাখা প্লাস্টিক বর্জ্যেও বৃষ্টির পানি জমে সেখানে জন্ম নিয়ে থাকে এডিস মশা। ফুলের টবে বা ডাবের ফেলে দেওয়া খোসায় কিংবা ডাস্টবিনে জমে থাকা পানিতেও এ মশার বংশবিস্তার ঘটে থাকে। কাজেই এসব দিকে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে জানা যায় সবচেয়ে বেশি এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে নির্মাণাধীন ভবনের মেঝেতে জমে থাকা পানিতে। যার পরিমাণ ২০.২২ শতাংশের মত। তাছাড়া আরও বালতিতে ১১.২৪ শতাংশ, প্লাস্টিকের ড্রামে ১০ শতাংশ, পানির মিটারের গর্তে ৬.৭৪ শতাংশ, পানির ট্যাংকে ৭.৮৭ শতাংশ, প্লাস্টিকের বোতলে ৪.৪৯ শতাংশ, ফুলের টব এবং ট্রেতে ২.২৫ শতাংশ ও লিফটের গর্তে প্রায় ৩.৩৭ শতাংশ লার্ভা পাওয়া গেছে। বহুতল ভবনে সর্বোচ্চ ৪৩.৮২ শতাংশ ও একক বাড়িতে ১৫.৭৩ শতাংশ, নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে ৩৪.৮৩ শতাংশ ও বস্তি এলাকায় প্রায় ৫.৬২ শতাংশ এডিস লার্ভা পাওয়া গেছে।
অতএব উদ্বেগের বিষয় হলো করোনার মধ্যে যদি ডেঙ্গির প্রকোপ বৃদ্ধি পায়, তাহলে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে ভেঙে পড়বে। কাজে ডেঙ্গু প্রতিরোধে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ডেঙ্গি প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করাটাই আসলে শ্রেয়। তাই ডেঙ্গি সংক্রমণকারী এডিস মশার ডিম পাড়ার স্থানগুলোকে ধ্বংস করে ফেলতে হবে।
বাসা-বাড়ি কিংবা ভবনের আশপাশের জায়গা, ডাস্টবিন এবং এর আশপাশের স্থানসহ ঘরের পাতিল বা বদনা-এসব স্থানেও যেন ৪-৫ দিনের বেশি পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এডিস মশা কিন্তু দিনের বেলা কামড়ায় ফলে দিনে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে। বাসাবাড়ি কিংবা অফিসের আশপাশে মশার স্প্রে অথবা ওষুধ ছিটাতে হবে। ঘরের দরজা-জানালায় এবং ভেন্টিলেটরে মশানিরোধক জাল ব্যবহার করতে হবে। ফ্রিজ বা এয়ারকন্ডিশনারের তলায় যেন পানি জমে না থাকে সেদিকেও কঠোরভাবে লক্ষ রাখতে হবে। ঢাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ সবচেয়ে বেশি কাজে দুই সিটি করপোরেশনকে এই ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
সব স্থানে মশা নিধনে কার্যকর ওষুধ ছিটাতে হবে। একই সাথে সবাইকে ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতন করতে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, মানুষের ভুল এবং অসচেতনতার ফলেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। সুতরাং আমাদের সচেতনতাই পারে এ রোগ প্রতিরোধ করতে।
(ঊষার আলো-এফএসপি)