ঊষার আলো রিপোর্ট : পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বীভৎস দৃশ্যাবলির কথা আজও ভুলতে পারেনি এ দেশের মানুষ। কতিপয় বিডিআর সদস্য এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করতে পারে, এ কথা এ দেশের একটি মানুষও বিশ্বাস করে না। কারা এ হত্যাযজ্ঞের নির্দেশ দিয়েছে? কাদের প্ররোচনায় বিডিআর সদস্যরা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত হয়েছে? পর্দার আড়াল থেকে কেউ না কেউ এ ঘটনায় ইন্ধন জুগিয়েছে; সেই ইন্ধনদাতা কারা? তারা কি এ দেশেরই সন্তান? নাকি কোনো বিদেশি শক্তি জড়িত? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে ফিরছে মানুষ। বিগত পতিত সরকারের আমলেই এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষে মামলাও হয়েছে। চলমান দুটো মামলার একটির রায়ও হয়ে গেছে। কিন্তু দেশের মানুষ তা পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারেননি। কারণ, যে তদন্ত হয়েছে, সে তদন্ত মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। যে তদন্তের ওপর মানুষের আস্থা নেই, সেই তদন্তের ভিত্তিতে যে বিচার হয়েছে, মানুষ তা গ্রহণ করবে কী করে! এ দেশের জনগণ মনে করেন, এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যচারীদের স্বরূপ উন্মোচন না করা পর্যন্ত সুষ্ঠু বিচার সম্ভব নয়। আদালত যে রায় দিয়েছেন, সে রায়েও ঘটনার পেছনের স্বার্থান্বেষী মহলকে চিহ্নিত করতে পৃথক ‘তদন্ত কমিশন’ গঠনের জন্য শেখ হাসিনা সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার খুব সচেতনভাবেই তা উপেক্ষা করেছে। দেশের একাধিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, শেখ হাসিনা চাননি পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি হোক। এ বিষয়ের আরও গভীরে গেলে, রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। তার একক সিদ্ধান্তেই হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদ্ঘাটনে পৃথক ‘তদন্ত কমিশন’ আর গঠন করা হয়নি।
পিলখানা হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণার পরপর ২০২০ সালে ‘পিলখানা হত্যাযজ্ঞের নেপথ্যচারীদের শনাক্ত করা কি সম্ভব?’ নামে আমার লেখা নিবন্ধে ‘তদন্ত কমিশন’ গঠন করার অনুরোধ ছিল। তিন বছর পার হওয়ার পরও সরকার তদন্ত কমিশন গঠন না করলে ২০২৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘পিলখানা হত্যার পেছনের ঘটনা উদ্ঘাটনে তদন্ত কমিশন গঠিত হবে কি?’ শিরোনামে লেখা আমার আরেকটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সে লেখায় কিছু প্রশ্ন ছিল, ‘সরকার চাইলেই হাইকোর্টের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করতে পারে। এ দেশের মানুষ বিশ্বাস করে, এত বড় একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড কিছু বিডিআর সদস্য দ্বারা সম্ভব নয়। এ ঘটনার পেছনে কারও না কারও ইন্ধন থাকতে বাধ্য। যদি তাই হয়, তাহলে এসব ইন্ধনদাতাকে খুঁজে বের করতে সরকারের সমস্যা কোথায়’? নিবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার পর কিছু ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল; সে কথা এখানে নাইবা বললাম। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমি নিজেও একজন ভুক্তভোগী। ঘটনার সময় আমি ঢাকার বাইরের একটি বিডিআর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ছিলাম। কাজেই এ বিষয় নিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখা সম্ভব ছিল না। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি আমার সঙ্গে বিডিআর সদস্যরা যে ব্যবহার করেছিল, তা বর্ণনাতীত। আমরা যারা এখনো বেঁচে আছি, তারা কীভাবে নিজেদের রক্ষা করেছিলাম, তা কেবল আমরাই বলতে পারি। সবাই জানে, বিডিআর হত্যাকাণ্ড মানেই শুধু পিলখানার ঘটনা। কিন্তু ঢাকার বাইরের বিডিআর ব্যাটালিয়নগুলোতে সেদিন কী মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, তা দেশবাসীর কাছে অজানাই রয়ে গেছে। সেসব ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমগুলোও আগ্রহ দেখায়নি।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর পিলখানা হত্যাকাণ্ডের তদন্তের বিষয়টিও জোরালোভাবেই সামনে চলে আসে। সবাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ জঘন্যতম ঘটনার বিচার দাবি করছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিমকোর্টের দুজন আইনজীবী জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিটি বা তদন্ত কমিশন গঠন করতে রিট করলে উচ্চ আদালত ৫ নভেম্বর প্রাথমিক শুনানি শেষে আইনজীবীদের আবেদনের নিষ্পত্তির জন্য ১০ দিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন জমা দিতে রুল ও নির্দেশ জারি করেছিলেন। ১৫ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চলমান দুটো মামলার একটির রায় ঘোষণার পর আপিল বিভাগে শুনানি চলমান; অপরটি আদালতে বিচারাধীন থাকায় আবেদনকারীর চাহিদা অনুযায়ী প্রস্তাবিত কমিটি গঠন করলে আদালতের আদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে বলে খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে আপাতত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করা সম্ভব হচ্ছে বলে জানায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ অযৌক্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর চারদিকে বিক্ষোভে বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে শেষ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ১৭ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে বলে ঘোষণা দেন। এ লেখাটি যেদিন প্রকাশিত হবে, সেদিন পাঁচ কার্যদিবস শেষ হয়ে যাবে। এদিনই তদন্ত কমিশনের সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হবে বলে আশা করি।
এ হত্যাকাণ্ডে নেপথ্যে কারা আছেন, তা এ দেশের মানুষের জানার অধিকার আছে। ইতিহাসের এ নির্মম ঘটনার প্রকৃত সত্যের অনুসন্ধান, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্যও প্রয়োজন। শেখ হাসিনার অধীনে যে তদন্ত হয়েছে, তা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। আমরা যারা খুব কাছ থেকে তদন্ত পর্যবেক্ষণ করেছি, তাদের কাছেও তদন্ত যথাযথ হয়নি বলে মনে হয়েছে। তদন্তে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাদের নিয়েও সন্দেহ করার অবকাশ আছে। পুলিশের অপরাধ বিভাগের আওয়ামী ঘরানার বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা অতিরিক্ত ডিআইজি আবদুল কাহার আকন্দকে শেখ হাসিনা পিলখানার ঘটনার ঠিক সাত দিন আগে চুক্তির ভিত্তিতে পুলিশে নিয়োগ দেন এবং হত্যাকাণ্ডের পর তাকেই তদন্তের ভার দেওয়া হয়। তদন্ত চলাকালীন আরও একজনের নাম উল্লেখ না করে পারা গেল না। তিনি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। তদন্ত চলাকালে তিনি পিলখানায় কর্মরত ছিলেন। শেখ হাসিনার পক্ষে এ তদন্ত তদারকি করতেন তৎকালীন নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দিকী। তারেক সিদ্দিকীই আজিজকে তদন্তের আগে পিলখানায় বদলি করে নিয়ে আসেন। আজিজ এ তদন্তে কাহার আকন্দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। ২৫ ফেব্রুয়ারির ঘটনার প্রস্তুতি পর্ব, হত্যাকাণ্ডের দিন এবং পরবর্তী অনেক ঘটনা তদন্তে উঠে এলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত কিংবা ঘটনা সম্পর্কে আগে থেকে জানতেন, তদন্তে এমন অনেক আওয়ামী লীগ নেতার পরিচয় প্রকাশিত হয়ে পড়লে, ওপরের নির্দেশেই তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল।
যেসব বিডিআর সদস্যের লিখিত বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে গোপন মিটিংয়ের কথা উল্লেখ ছিল, সেই লিখিত বক্তব্য পরে পরিবর্তন করা হয়েছে। অভিযোগ আছে, হত্যা মামলার আসামি বিডিআরের তৎকালীন ডিএডি মির্জা হাবিবুর রহমান, ডিএডি জলিল, হাবিলদার মনির, ল্যান্স নায়েক শাহাবুদ্দিন, ল্যান্স নায়েক একরাম, ল্যান্স নায়েক তারেক, সিপাই মঈন, সিপাই আইয়ুব, সিপাই মেহেদী এবং সিপাই ক্লার্ক মো. সেলিম মিয়াসহ আরও অনেকে ১৩ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে আলাদাভাবে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন এবং শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে গোপন মিটিং করেছিলেন। মিটিংয়ে এসব বিডিআর সদস্য, ‘তাদের দাবিদাওয়া মানা না হলে তারা নিজেরাই ব্যবস্থা নেবেন’ বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের জানিয়েছিলেন। বিডিআর সদস্যদের এমন পরিকল্পনার কথা জানার পর আওয়ামী লীগ নেতারা নিশ্চয়ই শেখ হাসিনাকে জানিয়েছিলেন। তবে বিডিআরের তৎকালীন ডিজি মেজর জেনারেল শাকিলকে যে জানানো হয়নি, তা নিশ্চিত বলা যায়। তাছাড়া, হত্যাকাণ্ডের পরের দিন ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে তাপস তার কর্মীদের দিয়ে মাইকে পিলখানার তিন কিলোমিটার এলাকার অধিবাসীদের সরে যাওয়ার ঘোষণা প্রচার করেন, যাতে পিলখানার খুনিদের পালিয়ে যাওয়ার সেফ প্যাসেজ তৈরি হয় বলে অভিযোগ আছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি তোরাব আলীর মাধ্যমে বিডিআর সদস্যদের সঙ্গে তাপসের যোগাযোগ ঘটে। বিডিআরের ডিএডি মির্জা হাবিবুর রহমান, নায়েব সুবেদার মেডিকেল সহকারী ওয়ালিউল্লাহ্ এবং সিপাই ক্লার্ক মো. সেলিম মিয়াসহ অনেকেই আবদুল কাহার আকন্দের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে যে লিখিত বক্তব্য দিয়েছিলেন, তাতে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যে গোপন মিটিং হয়েছিল, সেসব তথ্য উঠে আসে। কিন্তু পরবর্তীকালে আদালতে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময় আওয়ামী লীগের এসব নেতার নাম বাদ দেওয়া হয়। শুধু আওয়ামী লীগের তোরাব আলীর নাম রয়ে যায়। তোরাব আলীর ব্যাপারেও কাহার আকন্দের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে ওঠে। কাহার আকন্দের পক্ষপাতিত্বের জন্য ২০১৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার একটি আদালত পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে আকন্দের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারপরও কোনো ফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত আদালত ২০১৭ সালের ২৮ নভেম্বর তোরাব আলীকে খালাস দেন। কথিত আছে, পরবর্তীকালে আবদুল কাহার আকন্দ তার কাজের পুরস্কারস্বরূপ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। যদিও সে নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন।
আগেই উল্লেখ করেছি, এত বড় একটি হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা গোটা কয়েক বিডিআর সদস্যদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ ঘটনায় উল্লিখিত রাজনৈতিক নেতারা ছাড়াও বিদেশি একটি স্বার্থান্বেষী মহল জড়িত আছে বলে জোর প্রচার আছে। অনেকেরই ধারণা, পিলখানা হত্যাকাণ্ডে তারাই ইন্ধন জুগিয়েছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের ধরনের সঙ্গে কোথাও যেন ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের মিল আছে। বিশ্লেষণ করলে মনে হবে, একই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এ দুটো ঘটনাতেই জড়িত। ১৯৮১ সালের ঘটনায়ও জেনারেল জিয়াকে হত্যার কোনো পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। কথা ছিল কিছু দাবি আদায় করার জন্য জেনারেল জিয়াকে সেনানিবাসে নিয়ে আসা হবে। ওই ঘটনায় অংশগ্রহণকারী প্রায় সবাইকে একথা বলেই অংশ নিতে রাজি করানো হয়েছিল। কিন্তু একজন শুধু জানতেন, জেনারেল জিয়াকে খুব কাছ থেকে গুলিতে হত্যা করা হবে। পরিকল্পনাকারীরা একজনকেই দায়িত্ব দিয়েছিল কাজটি সম্পূর্ণ করতে। তিনি ছিলেন তৎকালীন ৬ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিন এবং তিনিই গুলি করে জেনারেল জিয়াকে হত্যা করেছিলেন। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে তখন জিয়া হত্যাকাণ্ডে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার জড়িত থাকার কথা শোনা গিয়েছিল। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়ও কর্মকর্তাদের হত্যা করা হবে, সে কথা আগে প্রকাশ করা হয়নি। এখানেও দাবি আদায় করার সিদ্ধান্ত ছিল। এ ঘটনায় কিছুসংখ্যক সদস্যই হয়তো জানতেন কর্মকর্তাদের হত্যা করা হবে এবং তারাই প্রথমে কর্মকর্তাদের গুলি করা শুরু করে। তারপর পরিস্থিতি আর কারও নিয়ন্ত্রণে ছিল না। হত্যাকাণ্ডের কথা বললে যদি পিছিয়ে যায়, এ কারণে দুটো ঘটনাতেই কিন্তু অংশগ্রহণকারীদের শুধু দাবি আদায়ের কথা বলা হয়েছিল। এ দুটো ঘটনা বাস্তবায়নের বিষয় বিশ্লেষণ করে, দুটি ঘটনার পেছনে যে একই বিদেশি সংস্থার ইন্ধন থাকতে পারে, সে সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন নিশ্চয়ই সত্যানুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলবেন। পিলখানা হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণাকে মাথায় রেখে এবং বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত তথ্যাবলি বিচার-বিশ্লেষণ করে কাজ করবেন বলেও প্রত্যাশা করি। আশা করব, কাহার আকন্দের নেতৃত্বে সংঘটিত তদন্তে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের কথাও বিবেচনায় রাখবেন। সে সময় অনেক সামরিক কর্মকর্তা এ তদন্তে সহায়কের ভূমিকা পালন করেছিলেন। সে তদন্ত সম্পর্কে তাদের অনেকেরই পর্যবেক্ষণ থাকতে পারে, যা তারা এতদিন প্রকাশ করতে পারেনি। তদন্ত কমিশন তাদের সঙ্গেও কথা বলবেন আশা করি। তাদের কাছে যদি আটককৃত বিডিআর সদস্যদের প্রাথমিক লিখিত বক্তব্যের কোনো কপি থেকে থাকে, তদন্ত কমিশন তা সংগ্রহ করতে পারে। যাদের লিখিত বক্তব্যে হত্যাকাণ্ডের পেছনের ইন্ধনদাতা সম্পর্কে বলা আছে, যারা এখনো বেঁচে আছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত কমিশন চাইলেই বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করে নিতে পারবেন। আমরা আশা করি, তদন্ত কমিশন ঘটনার আরও গভীরে গিয়ে ইতিহাসের এ মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারবেন।
ঊষার আলো-এসএ