UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তেল-পেঁয়াজের পর এবার রসুনের দামও চড়ছে

koushikkln
মে ১৬, ২০২২ ৮:২৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আশিকুর রহমান : খুলনার বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁজ কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আসলেও এবার অস্থির রসুনের দাম। দুই দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে মানভেদে ৩৪ হতে ৩৬ টাকার পেয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ২৮ হতে ৩২ টাকা দরে।
প্রতিদিনের নিত্যপণ্যের তালিকায় চাল, ডাল, তেল, ডাল, আটা, পেয়াজ, রসুন অন্যতম। কয়েক দিনের ব্যবধানে নগরীর পাইকারী খুচরা বাজারে গড়াগড়ি খাওয়া রসুন এখন সোনায় সোহাগা। হঠাৎ করে যেন পাইকারী সহ খুচরা বাজারে চলন্ত গতিতে ছুটে চলা ট্রেনের মতো অস্বাভাবিক হারে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে রসুনের। ৪০ টাকার রসুন এখন খুচরা বাজারে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের কারিসাজিতে বেড়েছে রসুনের দাম, কারণ বর্ষাকে সামনে রেখে মজুদ বা রাখি করার জন্যই মূলত রসুনের দাম এমন আকাশ ছোয়া, হঠাৎ রসুনের এই লামহীন দামে ক্রেতারা অনেকটাই নির্বাক, দিশেহারা। অধিকাংশ ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং না করার দরুন একশ্রেনীর অসাধু মুজুদদারদের কারনে রসুনের এই অস্থিতিশীর অবস্থা।

ক্রেতাদের এই অভিযোগের বিপরীতে নগরীর পাইকারী বিক্রেতাসহ ব্যাপারীরা জানিয়েছেন, এলসি রসুনের আমদানী বন্ধ রয়েছে। নগরীর পাইকারি বাজারগুলোতে সাধারণত ফরিদপুর, শৈলকূপা, কুষ্টিয়া, বোয়ালমারী, কাজীর হাট, মাতবর চর, ব্রাক, রাজবাড়ী, শালতা, নগরকান্দা, নাটোর, ঈশ্বরদী, পাবনা সহ ওই সকল স্থানীয় অঞ্চলের প্রান্তিক চাষীর উৎপাদিত রসুন মোকামে ঘুরে বাজার গুলোতে আসে। ওই প্রান্তিক কৃষকদের নিকট হতে স্থানীয় ব্যাপারীরা মোকামের রসুন সরবরাহ করে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের পাইকারি বাজারে সরবরাহ করে থাকে।

নগরীর বাজার ঘুরে জানা যায়, এলসি রসুনের সরবরাহ বর্তমানে বন্ধ আছে। ঈদের আগেও পাইকারি বাজারে রসুন বিক্রি হয়েছে ৩০/৩৫ টাকা কেজি দরে আর খুচরা বাজারে ৪০ টাকায়। মাত্র দু’ সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে সেই রসুন মানভেদে এখন ৬০ টাকা হতে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কারণ খতিয়ে দেখতে গেলে দেখা যায় মোকামে আমাদানির ঘাটতি, ব্যাপারিরা বেশি দামে নাকি ক্রয় করছে, মজুদদারদের রাখি বা মজুদ করা প্রবণতা ইত্যাদি নয় ছয় কারণ, আর তারই প্রভাব পড়েছে পাইকারি বাজারের উপর। রসুনের যথেষ্ঠ সরবরাহ থাকলেও সামনের বর্ষার কথা চিন্তা করে অনেক প্রান্তিক কৃষকই রসুন সহ পেয়াজ রাখি বা মজুদ করে রেখে উৎপাদন কম বা আমাদানি কম দেখিয়ে কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি করছে, যে কারণে মোকামের স্থানীয় বাজারে অনেকটাই চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বা আমদানি কম বলে জানা যায়।

ব্যবসায়ী কাঞ্চন জানান, সাধারনত ঝিনাইদাহের শৈলকূপা, কুষ্টিয়ার লাঙ্গনবান, ফরিদপুর সহ ওই সকল জেলা শহরের স্থানীয় অঞ্চলের মোকাম হতে প্রান্তিক কৃষদের উৎপাদিত রসুন ক্রয় করে নগরীর বিভিন্ন পাইকারী বাজারে বিক্রি করে। মোকামেই রসুনের দাম বাড়তি, কৃষক সহ অনেক ব্যবসায়ী সামনের বর্ষার কথা চিন্তা করে রসুন রাখি বা মজুদ করেছে তার প্রভাব সরাসরি পড়েছে পাইকারি বাজারের উপর, আর পাইকারি বাজার ঘুরে খুচরা বাজারের সাধারণ ক্রেতাদের উপর। বর্তমানে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে রসুন, ভালো মানের প্রতি মণ রসুন বিক্রি হচ্ছে ৩৬০০ টাকায়।
দৌলতপুর বাজার মুদি ব্যবসায়ী আজাদ খান জানান, ঈদের আগেও পাইকারি বাজার হতে রসুন ৩০/৩৫ টাকায় কিনে খুচরা বাজার ৪০ হতে ৪৫ টাকায় বিক্রি করেছে, যা বর্তমানে পাইকারি বাজার হতে মানভেদে ৬০ হতে ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে, আর খুচরা বিক্রি করছি ১০০ টাকা কেজি। কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, বর্ষাকে সামনে রেখে মজুদদাররা রসুন মজুদ করে রাখার উদ্দেশ্য আমদানি কম দেখিয়ে কৃত্রিম সংকটের চেষ্টা করছে, এই কারণেই রসুনের দাম বাড়তি।

ক্রেতা নাসির উদ্দিন জানান, মানুষ বাচবে কি খেয়ে বাজারের প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তি। কয়েকদিনের আগের রসুন রাতারাতি ১০০ টাকা। এ যেন মগের মল্লুক। আমরা সাধারণ জনগন জিম্মি হয়ে পরেছি। বাজার মনিটরিং করে যারা অসাধু উপায়ে রসুনের যথেষ্ট সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন অজুহাতে রসুন মজুদ করে কৃত্রিম সংকটের চেষ্টা করছে তাদের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহন করলে রসুনের বাজার স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে বলে আমি মনে করি।

ইজিবাইক চালক শাহাজাহান জানান, আমরা সল্প আয়ের মানুষ খুবই কষ্টে আছি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যে ক্রয়ে হিমশিম খাচ্ছি। প্রতিনিয়ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে, এভাবে বাড়তে থাকলে স্বল্প ও মধ্যবিত্ত মানুষের র্দুঅবস্থা সৃষ্টি হবে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিকট জোর দাবি জানান তিনি।