UsharAlo logo
রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশি ফ্রিজে স্বপ্নপূরণ

usharalodesk
জুন ৪, ২০২৪ ১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ আর স্বল্প আয়ের মানুষের স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। এক যুগ আগেও ফ্রিজকে ভাবা হতো বিলাসী পণ্য, আভিজাত্যের প্রতীক হিসাবে। ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ খাতে সরকারের উন্নয়ন ও নীতি সহায়তার কারণে সেই চিত্র এখন পালটেছে। দেশের আনাচে-কানাচে নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষের ঘরে পৌঁছে গেছে ফ্রিজ। এখন এটি দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ও নিত্যব্যবহার্য পণ্য। সাশ্রয়ী দাম এবং প্রান্তিক পর্যায়ে কিস্তি সুবিধা, ক্রেডিট কার্ডে ইএমআই বা সহজলভ্য ব্যাংক ঋণের কারণে ফ্রিজ এখন ঘরে ঘরে। আর এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে।

বাংলাদেশে ১৩টি প্রতিষ্ঠান ফ্রিজ উৎপাদন করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-যমুনা ইলেকট্রনিক্স, ওয়ালটন, মার্সেল, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, মিনিস্টার-মাইওয়ান, ট্রান্সকম, ভিসতা ইলেকট্রনিক্স ও ওরিয়ন গ্রুপ। এসব প্রতিষ্ঠান চাহিদার ৮৫-৯০ শতাংশ জোগান দিচ্ছে। এছাড়া বিদেশি ব্র্যান্ড স্যামসাং, সিঙ্গার, ওয়ার্লপুল, সনি-স্মার্ট ও কনকার কারখানা গড়ে উঠেছে দেশে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নীতিসহায়তার কারণে চিত্র পালটে গেছে। এখন বাজারের মাত্র ১০-১৫ শতাংশ শেয়ার বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর দখলে।

প্রতিবছর দেশে কত ফ্রিজ বিক্রি হয়, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবে, বর্তমানে বছরে কমবেশি প্রায় ৩০ লাখ ফ্রিজ বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবছর ৭-১০ শতাংশ হারে ব্যবসা বাড়ছে। সব মিলিয়ে সারা বছর যে পরিমাণ ফ্রিজ বিক্রি হয়, তার ৬০-৭০ শতাংশ হয় কুরবানির ঈদের আগে। ২০২১ সালের মার্চে মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশ (এমডব্লিউবি) নামের একটি সংস্থার গবেষণার তথ্যমতে, ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশের ফ্রিজের বাজার বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো নিয়ন্ত্রণ করত। বর্তমানে দেশের ফ্রিজের বাজারের আকার প্রায় ৬৮ কোটি ডলার। এ বাজার হিস্যার ৭৭ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান।

মূলত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার কারণে দেশে ফ্রিজ শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। সরকার সাশ্রয়ী মূল্যে ভোক্তাদের কাছে ফ্রিজ পৌঁছে দিতে ২০১০ সালে রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়। এ সুযোগ নিয়ে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ফ্রিজ উৎপাদনে শিল্প গড়ে তোলে। বাহারি ডিজাইন, সাশ্রয়ী দাম, স্থায়িত্ব, বিদ্যুৎ সাশ্রয়, কম্প্রেসার ও বিক্রয়পরবর্তী সেবা দিয়ে বাজিমাত করেন দেশীয় উদ্যোক্তারা। একসঙ্গে সব সুবিধা পাওয়ায় ক্রেতারা বিদেশি ফ্রিজের পরিবর্তে দেশি ফ্রিজ কেনায় আগ্রহী হয়ে ওঠে। দেশের আনাচে-কানাচে নিজস্ব পণ্য পৌঁছে দিতে শহরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশীয় কোম্পানিগুলো নিজস্ব ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলে মফস্বল ও গ্রাম পর্যায়েও শোরুম স্থাপন করেছে। এতে প্রতিনিয়ত ফ্রিজের ব্যবহার বাড়ছে। বিশাল এই বাজার ধরতে এখন অনেক বিদেশি ব্র্যান্ড বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যৌথভাবে ফ্রিজ উৎপাদনে আগ্রহ দেখাচ্ছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বপ্নপূরণে কোম্পানিগুলো নিজস্ব বিক্রয় পলিসি নিচ্ছে। প্রায় সব কোম্পানিই কিস্তি সুবিধায় মানুষের হাতে ফ্রিজ তুলে দিতে ডিস্ট্রিবিউটরদের পরামর্শ দেয়। এ ছাড়া শহুরে মধ্যবিত্তের জন্য ক্রেডিট কার্ডে ইএমআই এবং ব্যাংক ঋণের সুবিধা রয়েছে। অবশ্য আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ফ্রিজ উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে আনার খবরে দেশীয় উদ্যোক্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এতে ফ্রিজ উৎপাদনে খরচ বাড়ার আশঙ্কা করছে উদ্যোক্তারা।

উদ্যোক্তারা বলছেন, সরকারের নীতি সহায়তার কারণে দেশ আজ ফ্রিজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশীয় কোম্পানিগুলো স্থানীয় চাহিদা মেটাতে সক্ষমতা অর্জন করেছে। কিন্তু বাজেটে ভ্যাট বাড়ানো হলে এ শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করবে। আবারও দেশ আমদানিনির্ভর হয়ে পড়তে পারে। সরকারের যেখানে উচিত, আমদানিকৃত ফ্রিজের শুল্ক বাড়িয়ে দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া, প্রণোদনা বহাল রাখার মাধ্যমে রপ্তানির নতুন পণ্য হিসাবে ফ্রিজকে প্রমোট করা। উলটো সেখানে ভ্যাট হার বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ সিদ্ধান্ত স্থানীয় শিল্পবিরোধী।

তথ্য বলছে, গ্রীষ্মকাল ও কুরবানির ঈদের আগে বেশি ফ্রিজ বিক্রি হয়। এ সময় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও নানা ছাড় দিয়ে থাকে।

এ বিষয়ে যমুনা গ্রুপের গ্রুপ পরিচালক মনিকা নাজনীন ইসলাম বলেন, আমাদের যাপিত জীবনযাত্রার এক অন্যতম অনুষঙ্গ রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ। শহর কিংবা গ্রাম, উচ্চবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত, এমনকি নিম্নআয়ের মানুষের ঘরেও স্থান করে নিয়েছে ফ্রিজ। দিন দিন ফ্রিজের ব্যবহার বাড়ছে, বছরে এ বৃদ্ধির হার প্রায় ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন, দেশব্যাপী বিদ্যুৎ সংযোগ ও ব্যস্ত জীবনকে সহজ করতে গৃহস্থালির নানা কাজে ফ্রিজসহ ব্যবহৃত হচ্ছে নানা ধরনের ইলেকট্রনিক্স হোম অ্যাপ্লায়েন্সেস। বেড়েছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা, তাছাড়া স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হওয়ায় দেশীয় ফ্রিজের দাম আমাদের ক্রেতাদের হাতের নাগালে।

ওয়ালটন বাংলাদেশের চিফ বিজনেস অফিসার তাহসিনুল হক বলেন, সব শ্রেণি-পেশার গ্রাহকের পছন্দ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ফ্রিজ উৎপাদন ও বাজারজাত করছি আমরা। দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ওয়ালটন রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন টিমের প্রকৌশলীদের মাধ্যমে ওয়ালটন ফ্রিজে সর্বাধুনিক সব প্রযুক্তি ও ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। ওয়ালটন ফ্রিজ যেমন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন, তেমনি দামেও সাশ্রয়ী। ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। পাশাপাশি রয়েছে আইএসও সনদপ্রাপ্ত দেশব্যাপী বিস্তৃত সর্ববৃহৎ সার্ভিস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবার নিশ্চয়তা।

ইলেক্ট্রো মার্ট গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আফছার বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে গ্রাহকদের চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে আমরা বেশ কিছু নতুন ডিজাইন ও মডেলের ফ্রিজ বাজারে সরবরাহ করেছি। এছাড়া ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে আমাদের রয়েছে বিশেষ স্ক্র্যাচ কার্ড অফার। এই অফারে একজন কাস্টমার কনকা ও হাইকো ব্র্যান্ডের ফ্রিজ, এলইডি টিভি, ওভেন ও ওয়াশিং মেশিন ক্রয় করলে পাবেন একটি স্ক্র্যাচ কার্ড, যা ঘষে তারা জিতে নিতে পারেন গোল্ড জুয়েলারি ও কনকার এলইডি টিভিসহ অসংখ্য আকর্ষণীয় পুরস্কার।

মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ রাজ্জাক খান রাজ বলেন, দেশের মার্কেটে এই বছর ফ্রিজের চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি। আবহাওয়া এবং ঈদ মৌসুমকে সামনে রেখে আমাদের বেচাকেনাও বিগত বছরের তুলনায় বেশ বেড়েছে। আশা করছি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ঈদের আমেজ শুরু হলে বিক্রি আরও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে।

ঊষার আলো-এসএ