ঊষার আলো রিপোর্ট : বৈশ্বিক ও দেশীয় সংকটের কারণে গত দুবছর ধরেই রিজার্ভ নিম্নমুখী। বর্তমানে দেশের বকেয়া ও মেয়াদ বাড়ানো বৈদেশিক ঋণ এবং আমদানির দায় পরিশোধের চাপে পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
জানা যায়, ঋণের বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অনুপাত কমে আসছে। ঋণ বৃদ্ধি ও রিজার্ভ কমার কারণেই এমনটি হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমলে ও বৈদেশিক ঋণ বাড়লে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ঝুঁকি বাড়তে পারে। গত মার্চে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স থেকে পাওয়া ডলার দিয়ে আমদানি ব্যয় মিটিয়ে উল্লেখযোগ্য অঙ্কের ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে এ খাতে ঘাটতি হতো। বর্তমানে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স থেকে পাওয়া ডলার দিয়ে আমদানি ব্যয় মিটিয়ে কিছু ডলার উদ্বৃত্ত থাকছে। মার্চের তুলনায় জুলাইয়ে উদ্বৃত্ত ১৫৩ কোটি ডলার বাড়লেও সংকট দূর হচ্ছে না; বরং আরও প্রকট হচ্ছে। এর কারণ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ বৃদ্ধি।
বর্তমান ঋণের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ৭ হাজার ৭৭২ কোটি ডলার। স্বল্পমেয়াদি ঋণ ১ হাজার ৮৫৩ কোটি ডলার। দীর্ঘমেয়াদি ঋণ লম্বা সময় ধরে পরিশোধের সুযোগ থাকে, যে কারণে এ ঋণে রিজার্ভের ওপর চাপ কম পড়ে। কিন্তু স্বল্পমেয়াদি ঋণ তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। এ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও এর বিপরীতে চড়া সুদ ও দণ্ড সুদ দিতে হয়, যে কারণে খরচ বাড়ে। জানা যায়, চলতি বছরে ১৬২ কোটি ডলারের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ শোধ করতে হবে। আগামী বছর শোধ করতে হবে ১৭৭ কোটি ডলার। ২০২৫ সালে শোধ করতে হবে ১০৮ কোটি ডলার। এরপর থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ শোধ বছরে ১০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে আসবে। এ তথ্য থেকেই স্পষ্ট ডলার সংকট কাটাতে কতটা জোর দেওয়া দরকার।
দেশে ডলার সংকটের প্রধান কারণ এবং সমাধানে কী করণীয় তা বহুল আলোচিত। কাজেই সংকট নিরসনে করণীয় নির্ধারণের পাশাপাশি তা যাতে কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থাকে সেজন্যও নিতে হবে পদক্ষেপ। আমদানি-রফতানিতে কারসাজি করে কেউ যাতে পার পেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থ পাচার রোধে নিতে হবে জোরালো পদক্ষেপ। একইসঙ্গে দুর্নীতি রোধেও পদক্ষেপ নিতে হবে। ডলার সংকট কাটাতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর পদক্ষেপ জরুরি। জনশক্তি রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও রেমিট্যান্স প্রবাহে এর প্রভাব পড়ছে না। নানা উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণে আগ্রহ বাড়ানো যাচ্ছে না। যারা রেমিট্যান্সের প্রেরক, তাদের একটি বড় অংশ স্বল্পশিক্ষিত। হুন্ডিতে রেমিট্যান্স প্রেরণ তুলনামূলক সহজ। এসব কারণে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স প্রেরণে প্রবাসীদের আগ্রহ কমছে না। ব্যাংকগুলো এসব মানুষের কাছে সহজে সেবা পৌঁছে দিতে পারলে রেমিট্যান্স প্রবাহে গতি আসবে। বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মী প্রেরণে জোর দিতে হবে।
ঊষার আলো-এসএ