করোনার মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখা বৃদ্ধি
আরিফুর রহমান, বাগেরহাট : বাগেরহাটে সুপেয় পানি সংকটের কারণে সর্বত্র ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার সুন্দরবন সংলগ্ন শরনখোলা উপজেলায় গত ১০ দিনে ৬২ জন মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। এদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। অনেকে বাড়ীতে বসেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার খবর পেয়ে শনিবার (১০ এপ্রিল) শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খোজ নিতে গেলে জানা যায়, গত ১ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল শনিবার সকাল পর্যন্ত উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৬২ জন। শনিবার (১০ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত ভর্তি আছেন ১২ জন রোগী। উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজার এলাকায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশী। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থান সংকুলন না হওয়ায় রোগীদের মেঝেতে বিছানা দিতে হয়েছে। এ সময় আক্রান্ত রোগীসহ তাদের স্বজন ও চিকিৎসকরা জানান, শরনখোলা উপজেলায় তীব্রভাবে সুপেয় পানি সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারনে এ প্রায় প্রতিদিনই ডায়রিয়ার রোগি বাড়ছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশী। অনেকে বাড়িতে থেকে পল্লী চিকিৎসকদের কাছ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ফরিদা ইয়াছমিন জানান, শরণখোলা উপজেলা এমনিতেই লবনাক্ত এলাকা। এর মধ্যে চৈত্র-বৈশাখ মাসে পুকুরগুলোর পানি তলানিতে নেমে যায়। যে কারনে বাধ্য হয়ে মানুষ ওই দুষিত পানি পান করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন ও আইভি স্যালাইন মজুত থাকায় রোগী সামলাতে কোন সমস্যা হবে না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নাসিং সুপারভাইজার রেবা রাণী দেবনাথ জানান, ভর্তি রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই উপজেলা সদরের রায়েন্দা বাজার, কদমতলা, ঝিলবুনিয়া ও পূর্ব খাদা এলাকার। এসব এলাকায় বর্তমানে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট চলছে। অথচ, ভয়াবহ সিডর পরবর্ত্তি সময়ে সরকারি ও বেসরকারিভাবে পানি সংকট সমাধানে কিছু পুকুর খনন ও পন্ড স্যান্ড ফিল্টার (পিএসএফ) স্থাপন করা হয়। এছাড়া বর্তমানে আরো উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। তবে উপকূলীয় এই এলাকার বিশুদ্ধ পানির সংকট সমাধানের জন্য টেকসই উদ্যোগ গ্রহনের জন্য সরকারের কাছে দাবী জানান এলাকাবাসি। এলাকার জালাল আহম্মেদ রুমী জানান, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট চলে আসছে। সরকারিভাবে বৃষ্টির পানি সংরক্ষনের টেংকি প্রদান নিয়ে নানা জটিলাতা চলছে। তাই নিম্ন আয়ের মানুষ পুকুরের দুৃষিত পানি খেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশী। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন জানান, বিশুদ্ধ পানির সংকট সমাধানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের চিকিৎসা ও প্রকোপ বৃদ্ধি পেতে না পারে সে ব্যপারে পদক্ষেপ নিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে কথা বলবেন বলে তিনি জানান।
(ঊষার আলো-এমএনএস)