খুলনা বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের মূলমন্ত্র আজ হুমকির মুখে। নিশিরাতের ভোটডাকাতির মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা জবরদখলকারী ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষের মৌলিক অধিকারপূরণে চরমভাবে ব্যর্থ। বাজার সিন্ডিকেটের মাধ্যমের নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্য-দ্রব্যের সীমাহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের মানুষের মধ্যে নিরব হাহাকার চলছে। মেগাপ্রকল্পের নামের গেল ১৫টি বছর সীমাহীন লুটপাটে শুধু সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, শেয়ার বাজার, হলমার্ক, পাট-গার্মেন্টস্ শিল্প, রাষ্ট্রীয় অর্থ ও জনগনের টাকা লুটপাট করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি; শেখ হাসিনার মাফিয়া সরকার বৈদেশিক রিজার্ভও নিঃশেষ করে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে দেওলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতোই সাজানো-পাতানো আরও একটি প্রহসনের একতরফা ‘ডামি’ নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসতে চায় জনদুশমন আওয়ামী লীগ। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা, জনগনের ভোটাধিকার ফিরিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বার্থে আগামী ৭ জানুয়ারি বিরোধী দলবিহীন আওয়ামীলীগের সাজানো-পাতানো নির্বাচনে ভোট বর্জনের আহবান খুলনা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ। গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে খুলনা তথা দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বিএনপি নেতৃবৃন্দ এ আহবান জানিয়েছেন।
বিএনপি নেতারা বিবৃতিতে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগ সীমাহীন অপপ্রচার ছড়াচ্ছে। তারা বলছে যে, ‘এবার ভোট না দিলে নির্বাচনের পর জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল হয়ে যাবে, রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে, বাড়ী-বাড়ী যেয়ে আঙ্গুলের অমোচনীয় কালি আছে কি না- না থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে; জোরপূর্বক ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধ্য করবে’ এসবই আওয়ামী অপপ্রচার মাত্র। বিরোধী দলবিহীন আওয়ামী লীগের সাজানো-পাতানো দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে জনগনের পছন্দের প্রার্থী না থাকায় ভোট দান থেকে বিরত থাকাও প্রতিটি ভোটারের সাংবিধানিক অধিকার। আর নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব, নাগরিক অধিকার- এটা কোন রাজনৈতিক দলের করুণার দান নয়। তাই সকল প্রকার অপপ্রচার রুখে দিয়ে নিজে ও পরিবার-পরিজনকে সাথে নিয়ে এবারের ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকুন। দেশের স্বার্থে অন্যদেরও ভোটবর্জনে উৎসাহিত করুন।
ইতিহাসের উদহারণ টেনে বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০০৮ সালে মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত একটি পূর্বপরিকল্পিত নির্বাচনের মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় চেপে বসে আওয়ামী লীগ। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের কিছুদিন পর ২৫ ও ২৬ ফেব্র“য়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে জনগনের ভরসার প্রতীক দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী চৌকষ ৫৭জন সেনা কর্মকর্তা ও ১৭জন নারী-শিশু নিহত হয়েছিল। অন্যদিকে, এ নির্বাচনের প্রায় আড়াই বছরের মাথায় ২০১১ সালের মে মাসে আদালতের (ঘাঁড়ে বন্দুক রেখে) রায়ের পর জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। যদিও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রেকর্ড পরিমাণ হরতাল পালন করেছিল ওই আওয়ামী লীগই। ২০১৪ সালেও একতরফা নির্বাচনের মধ্যদিয়ে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সরকার গঠন করে তারা। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পূর্বরাতেই ভোটডাকাতি করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিশিরাতের ভোটডাকাত খেতাবে ভূষিত হয় আওয়ামী লীগ। সেই থেকে উন্নতবিশ্বে বন্ধুহীন হয়ে পড়ে জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ। নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ-সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন হলে পরাজয় নিশ্চিত উপলব্ধি করেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগামীর রাষ্ট্রনায়ক জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একেরপর এক রাজনৈতিক প্রতিহিংসামুলক মামলার রায়ে সাজা দেওয়ায় আজ্ঞাবহ আদালতের মাধ্যমে। বর্তমানে বিএনপি’র সংগ্রামী মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সারাদেশের প্রায় ত্রিশ হাজার নেতাকর্মী জালিমের কারাগারে রাজবন্দী। বিনাচিকিৎসায় মৃত্যুর মুখোমুখী মহান স্বাধীনতার ঘোষক বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তম’র সহধর্মিনী দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ বেগম খালেদা জিয়া। জনগনের আশা-আকাঙ্খলার প্রতীক রাজপথের বিরোধী দল-বিএনপি বিহীন কোন নির্বাচন সর্বজন গ্রহনযোগ্যতা পায়নি, পাবে না। তাই ডামী ভোট বর্জন করুন।
খুলনা বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেছেন, দেশের স্বার্থ নিসর্জন ও জনমত উপেক্ষা করে এহেন কর্ম নেই যা ক্ষমতালিপ্সু আ’লীগ করিনি বা করছে না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দেয়নি। এবার বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলবিহীন সাজানো-পাতানো নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে নিতে ভোটারদের পা ধরছে; তবুও সাড়া মেলেনি। তাই ভয়-ভীতি দেখিয়ে ভোটকেন্দ্রে নেবার চেষ্টা করছে আ’লীগ। আ’লীগের এক হাত থাকে জনগনের পায়ে, অন্য হাত গলায়-তাদের হীনস্বার্থে জনগনের সাথে যখন-যেমন, তখন-তেমনিই ব্যবহার করে। সরকারের মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগীদের নিয়ে পূর্বনির্ধারিত সাজানো-পাতানো নির্বাচনে ভোটের নামে এবারও জনগনের সাথে তমাশা করছে; অন্যদিকে, দেশের প্রায় ১২ কোটি মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। এবারের নির্বাচনে জনগনের পছন্দের প্রার্থী না থাকায় ভোট বর্জন করুন। দেশ রক্ষায় বিএনপি’র অসহযোগ আন্দোলনে সকলেই নিজ-নিজ অবস্থান থেকে সহযোগিতা করার আহবান জানিয়েছেন খুলনা বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
ভোট বর্জনের আন্দোলন শুধু বিএনপি’র নয়, প্রতিটি সুনাগরিকের উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই নির্বাচন আমার-আপনার মৌলিক অধিকার কেড়ে নেবার নির্বাচন। এই নির্বাচন আমার-আপনার ভোট জালিয়াতি করে ক্ষমতাসীনদের সীমাহীন লুটতরাজ, জুলুম, খুন-গুম ও অনিয়ম অব্যাহত রাখার নির্বাচন। এই নির্বাচন দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করা, ব্যাংকগুলো শূন্য করা, চুরি করে কোটিপতি হওয়ার অবৈধ পদ্ধতিকে অব্যাহত রাখার নির্বাচন। এই নির্বাচন হল- ক্ষমতাসীনদের পারস্পরিক ক্ষমতা ভাগাভাগির নির্লজ্জ খেলা। ফলে এই নির্বাচনে ভোট দেয়ার মানে হল- ক্ষমতাসীনদের সকল অন্যায়, জুলুম ও দুর্নীতিকে বৈধতা দেয়া। যা কোনোভাবেই একজন সুনাগরিকের দায়িত্ব হতে পারে না। যাদের মধ্যে নূন্যতম স্বদেশপ্রেম আছে, যারা দুর্নীতি, জুলুম-লুটতরাজকে ঘৃণা করেন, যারা মানুষের অধিকারকে সম্মান করেন; তারা কেউ ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা এ জাতি, দেশ, অর্থনীতিকে বাঁচাতে চাই। লুটতরাজের অবসান চাই। মাফিয়া রানী শেখ হাসিনার একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান চাই। বিএনপি’র প্রতিটি নেতাকর্মী জীবনবাজী রেখে দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াই করছি। আমাদের ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রাম চলবে। পরম মমতাময়ী জন্মভূমির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় বিএনপি’র অসহযোগ আন্দোলনে প্রিয় খুলনাবাসী তথা বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকই নিজ-নিজ অবস্থান থেকে সহযোগিতা করার আহবান জানিয়েছেন খুলনা বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
বিবৃতিদাতারা হলেন বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আলহাজ¦ রকিবুল ইসলাম বকুল ও তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক এ্যাড. শফিকুল আলম মনা, জেলা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ আবু হোসেন বাবু, নগর বিএনপি’র সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন ও জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পী প্রমুখ।।