ঊষার আলো রিপোর্ট : জাতিগত সহিংসতায় আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুর রাজ্য। ৭ নভেম্বর মণিপুরের জিরিবাম জেলার জাইরন গ্রামের কুকি সম্প্রদায়ের একজন নারীকে পুড়িয়ে মারার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যজুড়ে। নৃশংসভাবে হত্যা করার আগে ভুক্তভোগী নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের আঙুল মেইতেই সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে। ঘটনার পরপর কুকি সশস্ত্রগোষ্ঠী জাইরন গ্রামের অন্তত ১৬টি বসতবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। এ ঘটনার ঠিক দুদিন পর ৯ নভেম্বর মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলায় মেইতেই সম্প্রদায়ের এক নারীকে গুলিতে হত্যা করে কুকিরা। ঘটনার এখানেই শেষ নয়, ১১ নভেম্বর এ জেলাতেই ভারতের সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) ওপর হামলা চালায় কুকিরা। ফলে শুরু হয় সংঘর্ষ। সংঘর্ষে ১১ কুকি ও দুজন সিআরপিএফের সদস্য নিহত হন। এ ঘটনার পর জিরিবামে কারফিউ জারি করা হয়। মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের কারণে এভাবেই মণিপুর রাজ্যজুড়ে পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সেপ্টেম্বর থেকেই এ সংঘর্ষ চলছিল মণিপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে। ফলে অক্টোবরের শুরুতেই মণিপুরে ‘ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন’-এর মেয়াদ আরও ছয় মাসের জন্য বাড়ানো হয়। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নাগরিকরা এ আইনটিকে নিবর্তনমূলক আইন হিসাবেই দেখে আসছেন। ১৯৫৮ সালের ২ সেপ্টেম্বর ভারতের পার্লামেন্টে এ আইনটি পাশ হয়। এ আইনের দ্বারা ওই অঞ্চলে সংঘটিত যে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য শাস্তি পাওয়া থেকে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের রেহাই দেওয়া হয়েছে। বলা হয়ে থাকে, প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড, এমনকি ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িত থাকলেও এ স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্টের কারণে ভুক্তভোগী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে আদালতে বিচার চাইতে পারবেন না।
গত সেপ্টেম্বরের গোড়াতেই ভারতের মাটিতে এযাবৎকাল যা ঘটেনি, তাই ঘটেছে মণিপুরে। বলা হচ্ছে, ১ ও ২ সেপ্টেম্বর কুকি সশস্ত্র বাহিনী মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলের পশ্চিমে দুটি এলাকায় ড্রোন আক্রমণ করেছে। এ ঘটনা ভারতকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। শুধু তাই নয়, গত কয়েক মাসে এ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগে মণিপুরের বেশ কয়েকটি পুলিশ স্টেশন থেকে লুট হয়ে গেছে অন্তত ৪ হাজার অস্ত্র। নতুন করে এ দুই সম্প্রদায়ের ছড়ানো সংঘর্ষে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে ভারত সরকার। দুই পক্ষের হাতেই দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মান, চীন ও রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক ক্ষুদ্রাস্ত্র। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগ জানতে পেরেছে, এসব অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ এখন কুকি ও মেইতেই উভয় সম্প্রদায়ের হাতে। শুধু ক্ষুদ্রাস্ত্রই নয়, তাদের হাতে আছে ড্রোন, ট্যাংকবিধ্বংসী রকেট লঞ্চার, হ্যান্ড গ্রেনেড, স্টান গ্রেনেড, স্টিংগার গ্রেনেড, স্থানীয়ভাবে তৈরি ‘পাম্পি’ নামে পরিচিত ইম্প্রোভাইজড মর্টার, মর্টারশেল ইত্যাদি। এসব অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর সশস্ত্র দল দুটোর হাতে পৌঁছাল কী করে, তা নিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগ অনুসন্ধান করছে। ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সিকে দেওয়া হয়েছে ড্রোন হামলার তদন্ত কাজ। যদিও কুকি সশস্ত্রগোষ্ঠী বলছে, তারা যে ড্রোন ব্যবহার করে, তা কেবল গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কাজে ব্যবহার করা যায়। তাদের এলাকায় কারা প্রবেশ করছে, আর কারা বেরিয়ে যাচ্ছে, তা নিরীক্ষণের জন্যই এ ড্রোন ব্যবহৃত হচ্ছে। তাদের এ ড্রোন বোমা বহন করতে সক্ষম নয়।
ব্রিটিশ আমলে মণিপুর ‘প্রিন্সলি স্টেট’ হিসাবে মর্যাদা পেত। কাশ্মীরের মতো মণিপুরও ভারত স্বাধীন হওয়ার পরপরই ভারতে যুক্ত হয়নি। ১৯৪৭ সালে যখন ব্রিটিশ প্রভাব শেষ হয়, তখন মনিপুর স্বাধীন রাজ্য হিসাবে আত্মপ্রকাশের ইচ্ছা প্রকাশ করে। এমনকি মণিপুর রাজ্য ১৯৪৭ সালের ২৭ জুন নিজেদের জন্য সংবিধানও প্রণয়ন করেছিল; কিন্তু মণিপুর কংগ্রেস, যারা রাজ্যের মাত্র আট শতাংশ মানুষের মতামতের প্রতিনিধিত্ব করে, তারা রাজ্য সংবিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং মণিপুরকে ভারতের সঙ্গে একত্রীকরণে আন্দোলন শুরু করে। মণিপুরের মহারাজা বোধচন্দ্র এ একত্রীকরণ আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিলেন। পরবর্তীকালে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লবভাই প্যাটেল, ইম্ফলে ভারতীয় বাহিনী পাঠিয়ে রাজপ্রাসাদ ঘেরাও করে, টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ লাইনগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মহারাজাকে তার জনগণ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে দেয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৪৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মহারাজা একত্রীকরণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। এভাবেই বলপ্রয়োগ করে মণিপুরকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। মণিপুরবাসী কখনো সেই একত্রীকরণ মেনে নিতে পারেনি বলেই সশস্ত্র সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসের সূত্রপাত হয়। মণিপুরের মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ মেইতেই জনগোষ্ঠী। বাকি ৪৭ শতাংশ নাগা, মিজো ও কুকি তফসিলি জনজাতি। ধর্মে মেইতেইরা হিন্দু। অপরদিকে তফসিলি জনজাতির লোকরা অধিকাংশই খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী।
সাধারণত কুকি ও নাগা সম্প্রদায়ের লোকরা রাজ্যের ৯০ শতাংশ জমি নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করে, অপরদিকে মেইতেই জনগোষ্ঠীর বসবাস রাজ্যের মাত্র ১০ শতাংশ জমি নিয়ে ইম্ফল উপত্যকায় সীমাবদ্ধ। মণিপুর ভূমি সংস্কার আইন অনুযায়ী, রাজ্যের মেইতেইদের পাহাড়ি অঞ্চলে বসতি স্থাপন করা নিষিদ্ধ, অথচ উপত্যকা অঞ্চলে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর বসতি নিষিদ্ধ নয়। মণিপুরে মেইতেইরা ‘তফসিলি জাতিগোষ্ঠী’ হিসাবে বিবেচিত নয়। তারা সরকারি চাকরি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থায় ‘সংরক্ষণ সুবিধা’র সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। এ কারণে মেইতেইরা কয়েক বছর ধরেই তফসিলি জাতিগোষ্ঠী হিসাবে শ্রেণিভুক্ত হওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল। মেইতেই সম্প্রদায়ের দাবি, মণিপুরের অন্য উপজাতিদের মতোই তাদেরও সুযোগ-সুবিধার সংরক্ষণ দিতে হবে। যুক্তি হিসাবে তারা জানিয়েছে, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংরক্ষণের সুবিধা না থাকায় তারা পিছিয়ে পড়ছে। ভারতে সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করতে সে দেশের সংবিধানে এ ‘তফসিলি জাতিগোষ্ঠী’র স্বীকৃতির বিধান রাখা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ৩ মে হাইকোর্ট একটি রায়ে মেইতেই জনগোষ্ঠীকেও ‘তফসিলি উপজাতি’ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখার জন্য রাজ্য সরকারকে সুপারিশ করে। এ রায়ের পরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মেইতেইদের তফসিলি জাতিগোষ্ঠীর স্বীকৃতি দেওয়া হলে অন্যান্য সংখ্যালঘু আদিবাসী গোষ্ঠীর জন্য প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে। এ আশঙ্কা থেকে কুকি ও অন্য সংখ্যালঘু আদিবাসীরা মেইতেইদের তফসিলি জাতিগোষ্ঠীর স্বীকৃতির বিরোধিতা করে আসছে; কিন্তু বিজেপি মণিপুরে ক্ষমতা গ্রহণ করার পর থেকেই মেইতেইদের তফসিলি জাতিগোষ্ঠী হিসাবে স্বীকৃতির দাবি আরও জোরালো হয়। বিজেপিও এ দাবিকে সমর্থন জানায়। উল্লেখ্য, মণিপুরে বিধানসভা নির্বাচনে এ মেইতেইদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরেই বিজেপি জয়লাভ করে ক্ষমতায় বসে।
ভারতের সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, মণিপুরের আজকের পরিস্থিতির জন্য এককভাবে নরেন্দ্র মোদির বিজেপির রাজনীতিই দায়ী। তারা মনে করেন, ঘৃণা আর বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়ে বিভাজনের রাজনীতিকে হাতিয়ার করে ক্ষমতা লোভের তাড়নায় বেপরোয়া হয়ে উঠলে তার পরিণতি যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে, মণিপুর সবচেয়ে জ্বলন্ত উদাহরণ। তাদের ভাষায়, মেইতেই জনগোষ্ঠী হিন্দু, অপরদিকে কুকিরা খ্রিষ্টান। বিজেপি ধর্মের ভিত্তিতে এ দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে ক্ষমতা দখল করে মণিপুরে। এ ঘৃণার রাজনীতি বিজেপিকে ক্ষমতায় বসিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সর্বনাশ ডেকে এনেছে মেইতেই ও কুকিদের সম্পর্কের মধ্যে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে, এ দুই সম্প্রদায় পুরোপুরি বিপরীত মেরুতে চলে গিয়ে একে অন্যের চিরশত্রুতে পরিণত হয়েছে।
গত বছরের মে মাস থেকেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে মণিপুরে। কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে দফায় দফায় আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণে দিন দিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। গত ১৯ মাস ধরে ঘৃণা ও বিদ্বেষে জ্বলছে গোটা রাজ্যে। ফলে, সমতল থেকে সব কুকি জনজাতি উচ্ছেদ হয়ে পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে। ঠিক একইভাবে পাহাড় থেকে মেইতেইরা পালিয়ে সমতলে চলে গেছে। পরিস্থিতি এমনই ভয়াবহ, কুকি সম্প্রদায়ের বিধায়কমন্ত্রী, সরকারি কর্মচারী, পুলিশ, শিক্ষক, ব্যবসায়ীরা রাজধানী ছেড়ে পার্বত্যাঞ্চলে চলে গেছেন। কাগজে-কলমে একটি রাজ্য হলেও মণিপুর বস্তুত দুটি রাজ্যে পরিণত হয়েছে। মণিপুরের চুরাচাঁদপুর, ফেরজওয়াল, কাংপোকপি ও টেংরোপাল জেলাগুলো নিয়ে একটি, যার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কুকি, কুকি-জোমি ও নাগা জনজাতিরা। সেখানে পৃথক প্রশাসন চালায় কুকি-জোমিরা। এসব জেলায় সরকারি চাকরিতে কোনো মেইতেই নেই। কারণ কুকি-জোমিরা এমন রাজ্য চায় না, যেখানে মেইতেইরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হোক। ইম্ফলে কার্যত কোনো কুকি-জোমি নেই এবং কুকি-জোমি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে কোনো মেইতেইও নেই। মেইতেইরা মণিপুরের পরিচয় ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা চায়। এসব নিয়েই মূলত মণিপুরে সম্প্রদায়গত বিভেদ গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে।
১৯৪৭ সালে স্বাধীন হলেও তিন বছর পর প্রজাতন্ত্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে ভারত। এ সময়ের মধ্যে ভারত ভূখণ্ডের ভেতর অবস্থিত অনেক রাজ্য ও ঔপনিবেশিক অঞ্চল তাদের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়। কিন্তু এ যুক্ত হওয়ার পক্ষে অনেক রাজ্য বা অঞ্চলের নাগরিকদের সায় ছিল না। কিছু কিছু রাজ্য রাজাদের ইচ্ছায় এবং কিছু অঞ্চলের নেতারা নব্য ভারত সরকারের সামরিক হুমকির মুখে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার দলিলে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। ফলে স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে সেসব রাজ্যে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাশ্মীর সমস্যা। কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে তিনবার যুদ্ধ হয়েছে। তারপরও কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হয়নি। কাশ্মীরকে ভারতমুক্ত করতে এখনো সেখানে সশস্ত্র আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। কাশ্মীরের সশস্ত্র আন্দোলনকারীরা নিজেদের স্বাধীনতাকামী সংগ্রামী দাবি করলেও ভারত তাদের জঙ্গি আখ্যা দিয়ে আসছে। ২০১৯ সালে মোদি সরকার পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের রক্ষাকবচ, ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরকে দুটি কেন্দ্রীয় শাসন অঞ্চলে ভাগ করে; একটি কাশ্মীর ও অপরটি লাদাগ, যা নতুন করে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার সূত্রপাত করে। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে কাশ্মীর ভারতের অন্যতম রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল রাজ্যে পরিণত হয়ে আছে। অতি সম্প্রতি কানাডার সঙ্গে কূটনৈতিক বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে ভারত। কানাডায় অবস্থানরত খালিস্তান আন্দোলনের এক নেতাকে হত্যার অভিযোগে উঠেছে ভারতের বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও ভারতের একই ধরনের ইস্যুতে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। খালিস্তান আন্দোলনের আরও এক নেতাকে হত্যার চেষ্টা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছে। ফলে এ হত্যাচেষ্টায় সঙ্গে জড়িত ‘র’-এর এক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করতে বাধ্য হয় ভারত। খালিস্তান আন্দোলনের এসব নেতার মূল লক্ষ্য একটি স্বাধীন খালিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর মধ্যেও অনুরূপ অস্থিরতা বিরাজ করছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নাগাল্যান্ডেও নাগা বিদ্রোহের উত্থান ঘটে। তারা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক পরিষদ বা এনএসসিএন গঠন করে এবং তাদের কার্যক্রম মণিপুরেও ছড়িয়ে দেয়। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য স্বাধীনতাকামী রাজ্যগুলোর মধ্যে আসাম, নাগাল্যান্ড ও মিজোরাম অন্যতম। যদিও ভারত সরকার আলোচনার মাধ্যমে এসব রাজ্যের সমস্যার সমাধান করেছে। তবে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এ বিষয়ে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করেন। তারা মনে করেন, এ ধরনের সমাধান তুষের নিচে আগুন চাপা দেওয়ার মতো। কারণ, নাগাল্যান্ডে আপাতত শান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করলেও সেখানকার আন্দোলনকারীরা যে পৃথক রাষ্ট্র গঠনের ধারণা থেকে একেবারেই সরে গেছেন, তার নিশ্চয়তা কতটুকু? ভারতের মোদি সরকার, মণিপুরের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যদি পরিপক্বতার পরিচয় দিতে না পারে, তাহলে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। দিনের পর দিন যেভাবে কুকি গোরিলা যোদ্ধারা অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জামে সজ্জিত হচ্ছে, তাতে অদূরভবিষ্যতে মণিপুরের পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নেয়, তা এখনই কিছু বলা যাবে না।
ঊষার আলো-এসএ