UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ১৫ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রাসায়নিক প্রয়োগের শঙ্কা আমে : হোচঁট খাচ্ছেন ক্রেতারা

মো. আশিকুর রহমান
মে ১৪, ২০২৫ ৯:৪৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঋতুভেদে শুরু হচ্ছে জ্যৈষ্ঠ মাস, আজ বুধবার জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথমদিন। দেশী ফলের উৎস বা বাহন হিসাবে পরিচিতি বহন আসছে এই জ্যৈষ্ঠ মাস। সাধারণত এই মাসেই বাজারে আম, জাম, কাঠাল, লিটু, জামরুল সহ সব বাহারী দেশি ফল হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। সম্প্রতি সময়ে খুলনার বাজারে আপেল, আঙ্গুর, বেদানা, মালটা, খেজুর, পেয়ারা, আনারস, কলাসহ নানা ধরনের ফলের মাঝে উঁকি মারছে রসালো আম। বর্তমানে খুলনার বাজারে সাতক্ষীরা জেলা শহর থেকে আসা হিমসাগর, গোপালভোগ, গোবিন্দ ভোগের পাশাপাশি কিছু স্থানীয় এলাকার গুটি আম দৃশ্যমান হচ্ছে। জ্যৈষ্ঠ মাস পড়তে না পড়তে খুলনার পাইকারী বাজার থেকে শুরু করে ফলের দোকানসহ ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীরা বিক্রি শুরু করেছে আম। তবে ফলের বাজারে আসা আমের ক্রেতাদের মাঝে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, বাজারে আসা এসব আম কি আসলেই পরিপক্ক? নাকি রাসায়নিক প্রয়োগ করে পাঁকানো হচ্ছে এসব আম? বর্তমান বাজারে দৃশ্যমান এসব আম কেনার প্রবল আগ্রহ ও ইচ্ছা থাকলেও অনেক ক্রেতারাই রাসায়নিক প্রয়োগের শঙ্কা নিয়ে হোঁচট খাচ্ছেন আম কিনতে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কৃষি বিভাগ বিভিন্ন জাতের আম সংগ্রহের সময়সীমা নির্ধারণ করেছে সেনুসারে সকল প্রকার গুটি আম ১৫ মে, গোপালভোগ ২০ মে, লক্ষনভোগ/লক্ষনা ও রানীপছন্দ ২৫ মে, হিমসাগর/ক্ষিরসাপাত ২৮ মে, ল্যাংড়া ৬ জুন, আ¤্রপালি ১৫ জুন, ফজলী ১৫ জুন, আশ্বিনা ১০ জুলাই, বারী আম-(৪) ১০ জুলাই। অনেক সময় চাষী বা ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় আমে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথি প্লাস, ইথোফেন, ইথোলিন রাসায়নিক পদার্থ স্প্রেসহ ধোয়া ব্যবহার করে আম পাঁকিয়ে বাজার জাত করে থাকেন, যা মানব দেহের জন্য ক্ষতির কারণ।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে সম্প্রতি সময়ে ৩ টি জাতের আমের দেখা মিলছে, হিমসাগর, গোপালভোগ ও গোবিন্দভোগ। এছাড়া স্থানীয় এলাকার কিছু গুটি আমেরও দেখা মিলছে বাজারে। বর্তমান বাজারে দৃশ্যমান ৩ টি জাতের আম খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলা হতে যশোরের স্থানীয় এলাকার ব্যাপারীরা খুলনা পাইকারি আড়ৎ বা বাজারগুলোতে এনে এসব আম বিক্রি করছেন। খুচরা ফল বিক্রেতারা জানিয়েছেন, পাইকারী আমের বাজার হতে মানভেদে প্রতি মণ হিমসাগর আম কেনা লাগছে ২৪০০-৩০০০ টাকা দরে, মানভেদে প্রতি মণ গোপালভোগ ২০০০-২৪০০ টাকা দরে এবং মানভেদে প্রতি মণ গোবিন্দভোগ ২০০০-২৪০০ টাকায় দরে কেনা লাগছে। যা খুচরা বাজারে হিমসাগর প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকা, গোপালভোগ ৭০-১০০ টাকা ও গোবিন্দ ভোগ প্রতি কেজি ৭০-১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় এলাকার গুটি আম প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা দরে, বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দৌলতপুর বাজারের ফল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী ও রতন।
মঙ্গলবার (১৩ মে) খুলনা নগরীর ডাকবাংলা, সোনাডাঙ্গা, নিরালা, গল্লামারি, ২৫০ শষ্যা হাসপাতাল সম্মুখ, বয়রা, বৈকালি, খালিশপুর, দৌলতপুর, ফুলবাড়ীগেট, শিরোমনি, আটরা ও ফুলতলা এলাকার ফল ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলার হিমসাগর, গোপালভোট ও গোবিন্দ ভোগ আম বিক্রি করছেন। তবে আমে রাসায়নিক প্রয়োগে পাকাঁনো হচ্ছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। তারা সুস্পষ্ট জানিয়েছেন আমে রাসায়নিক প্রয়োগ করে পাকানো হচ্ছে কিনা তারা এ ব্যাপারে অবগত নন।
খুচরা ফল ব্যবসায়ী মোহাম্মাদ আলী জানান, ফলের ব্যবসা করি কয়েক বৎসর যাবৎ। পাইকারী বাজার থেকে ফল কিনে নিয়ে আসি। খরচ-খরচা বাদে সামান্য লাভে বিক্রি করি। যে সময় যে দামে কিনি, তা থেকে সামান্য লাভে বিক্রি করি। এ বছর ইতোমধ্যে বাজারে সাতক্ষীরা জেলা শহর হতে আম আসা শুরু করেছে। বর্তমানে বাজারে হিম সাগর, গোপালভোগ ও গোবিন্দভোগ আম পাওয়া যাচ্ছে। খুচরা বাজারে বর্তমানে হিমসাগর প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকা, গোপালভোগ ৭০-১০০ টাকা ও গোবিন্দ ভোগ প্রতি কেজি ৭০-১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় এলাকার গুটি আম প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারী ফল ব্যবসায়ী মোঃ আব্দুল কুদ্দুস জানান, তিন জাতের আমের দেখা মিলছে। গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ আর গুটি আম। এই জাতের আম খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলা হতে যশোর জেলার স্থানীয় অঞ্চল গৌরিঘোনা, চুকনগর, কেশবপুর, মনিরামপুর এলাকার স্থানীয় ব্যাপারীরা সরাসরি খুলনার পাইকারি বাজারে নিয়ে আসে। গত ৫ দিন ধরে এই সিজিনের আমের কেনাবেচা শুরু হয়েছে। বর্তমানে পাইকারি বাজারে মানভেদে হিমসাগর প্রতি মন বিক্রি হচ্ছে ২০০০- ২৮০০ টাকা, গোপালভোগ আমের মণ বিক্রি হচ্ছে ১৮০০- ২৬০০ টাকা, টাকায় , গোবিন্দভোগ বিক্রি হ্েচ্ছ ১৮০০- ২৬০০ টাকা, গুটি আম বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১০০০- ২০০০ টাকা।
আম কিনতে আসা ক্রেতা সিগ্ধা রহমান জানান, বাজারে প্রচুর আমের দেখা মিলছে। কিন্তু কিনতে ভয় পাচ্ছি। বোঝার উপর নেই কোনটা ফরমালিন দিয়ে পাঁকানো আর কোনটা ফরমালিন ছাড়া ? যদিও কিনি কিছু দিন পরে কিনবো। এখন ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় আম পরিপক্ক হওয়ার আগেই বাজারে কৃত্রিম উপায়ে পাকিয়ে বিক্রি করছে।
অপর ক্রেতা মফিজুর রহমান জানান, দু’দিন আগে ৮০ টাকা দরে ৫ কেজি আম কিনলাম। দোকানদার মিষ্টি বলে দিলো। বাড়ীতে গিয়ে দেখি অধিকাংশ আমই টক। তাছাড়া একদিন রাখতেই মুখের কাছে পচন ধরেছে। এতে মনে হলো এই আম হয়তোবা কেমিক্যাল দিয়ে পাঁকানো হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খুলনা অঞ্চল) খুলনার অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, কৃষি বিভাগ সংগ্রহের সময়সীমা নির্ধারন করা হয়েছে। তবে এ নির্ধারিত সময়ের আগে বাজারে আসা আমে রাসায়নিক ব্যবহার করে আম পাঁকানো হয়ে থাকে। যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতির কারণ। কাঁচা আমে প্রচুর পরিমানে ‘আয়রণ’ ও ভিটামিন ‘সি’ থাকে এবং পাঁকা আমে ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘ বি’ তে সমৃদ্ধ থাকে। তাছাড়া পাঁকা আমে প্রচুর পরিমানে পরিমানে খনিজ পদার্থ থাকে। যে কারণে আমের স্থান পৃথিবীর যে কোন ফলের উপরে। তবে আম যদি রাসায়নিকে পাঁকানো হয়, তা শরীরের ভেতরের অর্গান যেমন- ফুসফুস, কিডনি, লেবারসহ পরিপাক তন্ত্রের ক্ষতি সাধন করে থাকে, প্রেসার বাড়ায় এবং পেটের নানা রোগ দেখা দেয়। তবে বর্তমানে আম পাঁকার আগে চাষীরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় আমে রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করে থাকে। তবে এখন ভোক্তারাও অনেক সচেতন হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মাদ সেলিম জানান, যদি কোনো বাগান মালিক বা ব্যবসায়ী রাসায়নিক প্রয়োগ করে আম পাঁকানো, বাজারজাতকরণ কাজে লিপ্ত থাকেন, তদন্তপূর্বক তাদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

ঊআ-বিএস