UsharAlo logo
সোমবার, ৫ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বাড়তি চাপ

ঊষার আলো রিপোর্ট
মে ৪, ২০২৫ ৫:০৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রোহিঙ্গা সংকট লঘু হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু সংকট দিন দিন ঘনীভূত হচ্ছে। বস্তুত রোহিঙ্গা সংকটের শেষ কোথায়, এটা একটা মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন হয়ে পড়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির জান্তা সরকারের সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘর্ষ যতই তীব্র হচ্ছে, ততই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। দুই পক্ষের সংঘর্ষের জাঁতাকলে পড়ে বিপর্যস্ত রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে ঢুকছে বাংলাদেশে সীমান্ত পেরিয়ে। একটা হিসাবে দেখা যায়, প্রতি মাসে গড়ে ৬ হাজারের মতো অনুপ্রবেশ ঘটছে। বর্তমান পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। একদিকে বাড়তি রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থলের সংকট, অন্যদিকে মানবিক করিডরসংক্রান্ত জাতিসংঘের আহ্বান, দু’য়ে মিলে বাড়ছে উদ্বেগের মাত্রা। সব মিলিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ আবারও আন্তর্জাতিক চাপ ও চক্রান্তের শিকার হয় কিনা, সেই প্রশ্নও দেখা দিয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যেতে পারে। এ ব্যাপারে মতামতও দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। যেমন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম বলেছেন, নতুন করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং ‘খাদ্য সহায়তা’র নামে মানবিক করিডর চালু করার প্রস্তাবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও বিপর্যয়ের দিকে যেতে পারে। করিডরের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে এটি কেবল মানবিক ইস্যুই থাকবে না, বরং বাংলাদেশের কৌশলগত নিরাপত্তার জন্য তা বড় হুমকি হয়ে পড়বে।

ওদিকে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান স্পষ্ট করেই বলছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা সরকারের সঙ্গে আরাকান আর্মির যুদ্ধের তীব্রতা বাড়লে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বড় আকার ধারণ করবে। রোহিঙ্গা পরিস্থিতির সবশেষ চিত্র হলো, আগের ১০ লাখ ৩৬ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সঙ্গে নতুন ১ লাখ ১৫ হাজার যোগ হয়ে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা সংখ্যা এখন ১১ লাখ ৫১ হাজার। সংখ্যাটা বিশাল। এত বিপুলসংখ্যক আশ্রিত রোহিঙ্গার জীবন নির্বাহে সহায়তা করা বাংলাদেশের পক্ষে এক কঠিন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। এই গুরুদায়িত্ব আমরা আর কতদিন পালন করতে পারব, তা বলা মুশকিল। উপরন্তু মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া মানবিক করিডরের আহ্বানে সাড়া দিলে নতুন কোনো বিপদ দেখা দিতে পারে কিনা, সে প্রশ্নও রয়েছে।

২০১৭ সালে ব্যাপক হারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সময় থেকেই আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পৌনঃপুনিক আহ্বান জানিয়ে এসেছি, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে তারা যেন আমাদের সহযোগিতা করেন। কিন্তু প্রতিবারই আমাদের উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। মিয়ানমার, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকও হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আমরা পুনর্বার এ সংকট থেকে আমাদের উদ্ধারের জন্য সংশ্লিষ্ট সব দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে আবেদন জানাই। মানবিক করিডরের বিষয়টিও যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান এখন আমাদের অন্যতম চাওয়া।

ঊষার আলো-এসএ