ঊষার আলো রিপোর্ট : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পরোয়ানাভুক্ত আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’ প্রচারে নিষেধাজ্ঞাদেশ আরোপ করেছেন। ‘বিদ্বেষমূলক’ বক্তব্য সংক্রান্ত দেশি-বিদেশি আইনের ওপর শুনানি নিয়ে ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। এই ‘বিদ্বেষমূলক’ বক্তব্য কী, তা নিয়ে কথা হয়েছে প্রকিউশন টিমের সঙ্গে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে এই নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করার কথা জানান প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আল নোমান।
প্রসিকিউশনের মতে, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) যেসব বলছেন তা হেইট স্টাক। সেগুলো বন্ধেই এ আবেদন করা হয়েছে।’
ওই আবেদনের ওপর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানি হয়।
শুনানিকালে প্রসিকিউশন থেকে ট্রাইব্যুনালের সামনে ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনসহ দেশি-বিদেশি আইন রেফারেন্স ও সংজ্ঞা তুলে শুনানি করা হয়। এমনকি সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যমে ফাঁস হওয়া শেখ হাসিনার কিছু ফোনালাপ সম্পর্কেও ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করা হয়।
পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’ প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেন। সেইসঙ্গে তিনি আগে যতো বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, তা সব মাধ্যম থেকে সরাতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দেন আদালত।
পরে ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’ প্রসঙ্গে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম জানিয়েছেন, এই ট্রাইব্যুনালের অধীনে চলমান বা তদন্ত চলমান কোনো মামলার আসামি বিদ্বেষমূলক কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না, যাতে করে এই মামলা তদন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা সাক্ষীরা ভীতিগ্রস্থ হন। কিছু মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে মামলার আসামি শেখ হাসিনার বক্তব্য ও ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে।
যেখানে তিনি বলেছেন, ‘২৮৭টি মামলা হয়েছে, মানে ২৮৭ জনকে মার্ডার করার লাইসেন্স পেয়েছে। তোমাদের বাড়িঘর পোড়াচ্ছে, তাদের কি বাড়িঘর নেই?’ এসব শব্দ দিয়ে মূলত মামলার ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
তামিম আরও বলেন, ‘যেসব ভুক্তভোগী ও সাক্ষীরা আমাদের কাছে এসে জবানবন্দি দিয়ে গেছেন, তাদের কিন্তু ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দিতে হবে। শুধু তাই নয়, বিদ্বেষমূলক বক্তব্যকে সারা বিশ্বের সব আইনেই ক্রিমিনাল অপরাধ হিসেবে ধরা হয়। যেটি করা হচ্ছে সেটি বন্ধের জন্য; ইতিমধ্যে যেসব প্রচার-প্রকাশ হয়েছে সেগুলোসহ সব বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার বন্ধে আমরা আবেদন করেছিলাম। ট্রাইব্যুনাল আমাদের আবেদন শুনেছেন। আমাদের ট্রাইব্যুনালের আইন, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় আইন সম্পর্কে শুনেছেন, সব শুনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশ দিয়েছেন যেন ভবিষ্যতে বিদ্বেষমূলক কোনো বক্তব্য প্রচার বা প্রকাশ না পায়। যা ইতোমধ্যে প্রকাশ বা প্রচার হয়েছে তাও সরিয়ে ফেলতে বলেছেন আদালত। আমরা একজন আসামির ক্ষেত্রেই এই আবেদন করেছিলাম।’
গত ১৭ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগের বিচার কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিনেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
ঊষার আলো-এসএ