ঊষার আলো প্রতিবেদক : ২৮ অক্টোবর’২১ বৃহষ্পতিবার, করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রদানের গণ কার্যক্রম। সরোজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় নির্দিষ্ট সময়ের ৩০ থেকে ৬০ মিনিট পর শুরু হয়েছে কার্যক্রম। দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, টিকাদান কর্মী দেরীতে আসায় টিকা প্রদান শুরু করা যায়নি। আর সকাল থেকে অপেক্ষামান টিকা প্রত্যাশীরা পরেন বিপাকে। এছাড়াও নারী ও পুরুষের টিকা প্রদান একই স্থানে হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
সকাল ৮টা নগরীর ২০নং ওয়ার্ডের শেখ পাড়া বাজার সংলগ্ন আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সেন্টারে গিয়ে দেখা যায় কেয়ারটেকার টিকা প্রদান কার্যক্রমের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ০৮টা ১৫ মিনিটে একজন স্বাস্থ্য কর্মী এসে টিকার বক্স ও কাগজপত্র দিয়ে আবার রিক্সায় চলে যান। একই কেন্দ্রে সকাল ০৯টা ৪৫মিনিটে গিয়ে দেখা যায় টিকা প্রত্যাশীরা বসে আছেন। শুরু হয়নি টিকা কার্যক্রম। কেন্দ্রে দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবী রিমা আক্তার জানান, টিকাদান কর্মী আসতে দেরী হওয়ায় এখনও কার্যক্রম শুরু করাযায়নি। টিকাদান কর্মীর সাথে ফোনে কথা হয়েছে তিনি আসছেন পথে।
একই ওয়ার্ডের ৪নং শেখ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০ টায় গিয়ে দেখা যায় কেবল একজন ব্যাক্তিকে টিকা দানের মধ্যদিয়ে শুরু হবে কার্যক্রম। কেন এত দেরী জানতে চাইলে কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবী ও বিদ্যালয়ের সভাপতি শেখ সিদ্দিকুল আলম বলেন, টিকাদান কর্মী আসতে দেরী করায় এই অবস্থা। এই সময়ে কেন্দ্রে অপেক্ষামান একজন বৃদ্ধা জানান সকাল সাড়ে আটটা থেকে টিকা নেওয়ার অপেক্ষায় বসে আছেন তিনি। ডাক্তাররা আসতে দেরী করেছে, আর আসার পরে আবার নাস্তা করেছে তাই দেরী হয়েছে। একই অভিযোগ যুবক জুয়েল হোসেন এরও । তিনি বলেন, সকাল সকাল টিকা দিয়ে কাজে যাব তা আর হলো না। দেড় দুই ঘন্টা দাঁড়ানোর পর কেবল টিকা পেলাম। আজকে ভীড় নাই কেন্দ্রে কিন্তু টিকাদান কর্মীদেরজন্য দেরী হয়ে গেল। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে অনেকটা তেড়ে এসে বিরক্তিকর ভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন আর এক যুবক ছাব্বির। তিনি বলেন, পুরুষ ও মহিলা একই রুমে কিভাবে টিকা কার্যক্রম চলে। তিনি বলেন অত্যন্ত কাঁপড় টাঙ্গিয়ে হলেও পুরুষ ও নারীদের আলাদা বুথ করা প্রয়োজন কেন্দ্রে।
সোয়া ১০টার দিকে নগরীর ১৯নং ওয়ার্ডের গোবরচাকার ন্যাশনাল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখাযায় টিকা দান চলছে। অপেক্ষামান রয়েছেন ২০ থেকে ৩০ জন টিকা প্রত্যাশী। কখন থেকে টিকা প্রদান শুরু হয়েছ জিজ্ঞাসা করলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টিকা প্রত্যাশীরা জানান আধাঘন্টা-২০ মিনিট আগে শুরু হয়েছে। কেন দেরীতে শুরু এই প্রশ্নে তারা বলেন টিকা দান কর্মী আসতে দেরী করেছে। এখনও দুই জনের একজন আসেনি আর একজন টিকাদান শুরু করেছেন। এই কেন্দ্রের টিকাদান কর্মী সামসুন্নাহার দিপ্তীর নিকট টিকা প্রত্যাশীদের অভিযোগের ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, একজন কর্মী আসতে দেরী করেছেন এই মাত্র তিনি এসেছেন। এ সময় তার পাশে একজন টিকাদান কর্মী দ্রুত এসে ব্যাগ রেখে বসেন। তখন ঘরির কাঁটায় বাজে সাড়ে ১০টা। তবে টিকা কার্যক্রম বেশিক্ষন দেরী হয়নি। নারী পুরুষের ঝামেলার কারনে একটু দেরী হয়েছে বলেন তিনি।
পরে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বিভিন্ন বুথে আজ গণটিকার কার্যক্রম যথাসময়ে শুরু হয়নি। কিছু কিছু কেন্দ্রে সঠিক সময়ে শুরু হয়েছে। আবার কিছু কিছু কেন্দ্রে সকল প্রস্তুতি থাকলেও টিকা প্রত্যাশী দেরীতে আসায় দেরীতে শুরু হয়েছে এমনও আছে।
এ বিষয়ে খুলনা জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ নিয়াজ মোহাম্মদ এর কাছে জানাতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, দেরীতে শুরু করলেও সমস্যা নেই। নির্দিষ্ট সময়ের পরেও টিকা প্রত্যাশী থাকলে তাদের সন্ধ্যা পর্যন্ত টিকা প্রদান করা হবে। তারপরও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যেহেতু টিকা প্রদান কার্যক্রমটি সিটি কর্পোরেশনের আওতায় হয়ে থাকে এ কারনে তিনি কেসিসি’র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করার অনুরোধ করেন। এবং তিনিও বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনকে অবহিত করবেন বলে জানান।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ এ কে এম আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা সব সময়ই টিকাদান কর্মীদের নয় টার আগে কেন্দ্রে পৌছানোর কথা বলি। গত রাতেও আমি প্রত্যেককে এই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছি যাতে সকাল ০৯টাতেই কার্যক্রম শুরু হয়। সকালে অবশ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্যাস্ত থাকায় তিনি সব কেন্দ্রের বিষয়টি দেখতে পারেননি। তবে অভিযোগটি আমলে নিয়ে তা সমাধান এবং দায়িত্ব অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
খুলনা মহানগরীতে বৃহষ্পতিবার ৩৫ হাজার মানুষকে করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রদান করা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসের ২৮ তারীখ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষ্যে এই ৩৫ হাজার মানুষকে গণ টিকার মাধ্যমে সিনোফার্ম এর প্রথম ডোজ প্রদান করা হয়।