UsharAlo logo
সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাতক্ষীরায় অর্থকষ্টে ভারত ফেরত যাত্রীরা

usharalodesk
মে ৮, ২০২১ ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো ডেস্ক : যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফেরা এই পাসপোর্ট যাত্রীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে সাতক্ষীরা শহরের চারটি আবাসিক হোটেলে। ভারতে গিয়ে চিকিৎসা ও অন্যান্য প্রয়োজনে তাদের অনেকেরই টাকা ফুরিয়ে গেছে। তাই তারা অর্থের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে জানিয়েছেন। সাতক্ষীরায় কোয়ারেন্টিনে থাকা ভারত ফেরত ১৪১ বাংলাদেশি অর্থকষ্টে পড়েছেন।এদিকে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হোটেল ভাড়াসহ সব খরচ যাত্রীদেরই বহন করতে হবে।
এদিকে, ভারতে মহামারি করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার সেখান থেকে আসা পাসপোর্ট যাত্রীদের সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন হোটেলে রাখার খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জেলার সাধারণ মানুষ।
ভারত থেকে আসা এসব বাংলাদেশি নাগরিকদের কয়েকজন জানান, সেখান থেকে করোনার পরীক্ষা করে নেভেটিভ সনদ নিয়ে তাদের এ দেশে আসতে হয়েছে। চট্টগ্রামের মীর সরাইয়ের সুমন রহমান বলেন, আমার চাচা আমিনুর রশিদের হার্টের অপারেশনের জন্য চেন্নাই গিয়েছিলাম। সেখান থেকে প্রায় এক মাস পরে ফিরেছি। আসার আগে আমাদের করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে আসতে হয়েছে। চাচার চিকিৎসা শেষে আমাদের কাছে খুব বেশি টাকা নেই।
তিনি বলেন, আবাসিক হোটেলে আনার পর হোটেল ভাড়া ও খাওয়া খরচ নিজেদের বহন করতে হচ্ছে। এর ফলে অনেকেই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছেন। হোটেল খরচ প্রতিরাতে দুই হাজার টাকা দিতে হবে শুনে আমরা নেমে যাচ্ছিলাম, পরে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি এসে আমাদের ভাড়া নিয়ে চিন্তা করতে নিষেধ করেছে। এক হাজার টাকা ভাড়া নিলেও আমাদের পক্ষে দেয়া সম্ভব না।
তিনি আরও জানান, তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভারতে গিয়েছিলেন ডাক্তার দেখাতে। সে দেশে চিকিৎসার পর তাদের কাছে আর কোনও টাকা নেই। এখন তারা অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এখন কিছু হলে দায়ভার কে নেবে, এ প্রশ্ন তাদের? তাদের স্ব-স্ব জেলায় পাঠিয়ে সেখানে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করাসহ স্বজনদের কাছে খবর দেওয়ার দাবি জানান তারা।
শুক্রবার (৭ মে) দুপুরে সরেজমিন শহরের টাইগার প্লাস ও আল কাশেমে গিয়ে দেখা যায়, হোটেলের প্রবেশ পথে দুই জন আনসার সদস্যকে পাহারায় রাখা হয়েছে। হোটেল থেকে কেউ যেন বাইরে যেতে না পারেন। সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ডা. জয়ন্ত তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন নিয়মিত। কোয়ারেন্টিনে থাকাদের অধিকাংশই ভারতে গিয়েছিলেন চিকিৎসা করাতে। গত ৫ মে সন্ধ্যায় দেশে আসা এসব যাত্রীর মধ্যে ৫০ জনকে আবাসিক হোটেল উত্তরায় রাখা হয়। বাকি ৯১ জনের মধ্যে ৪১ জনকে হোটেল টাইগার প্লাস, ২০ জনকে হোটেল হাসান এবং ৩০ জনকে হোটেল আল কাশেমে রাখা হয়। তাদের প্রত্যকেরই পাসপোর্ট সদর থানায় জমা রাখা হয়েছে। তাদের সবার বাড়ি সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। আগামী ১৯ মে পর্যন্ত তাদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, বেনাপোল দিয়ে দেশে ফেরা এই ১৪১ বাংলাদেশি এখানে কীভাবে থাকবেন সে বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে বিশেষ পাস নিয়ে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশি হাইকমিশনে তারা বন্ড দিয়ে এসেছেন। প্রশাসন যেখানে তাদের থাকার ব্যবস্থা করবেন সেখানেই তাদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে এবং তারা নিজ খরচে থাকবেন। তারা সেভাবেই সেখান থেকে বন্ড দিয়ে এসেছেন।
তিনি আরও জানান, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে তাদের বেনাপোল থেকে সাতক্ষীরায় আনা হয়েছে। বেনাপোল ও যশোরে প্রায় এক হাজার ভারত ফেরত বাংলাদেশি কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। বাকিদের সাতক্ষীরাসহ আশপাশের জেলায় পাঠানো হচ্ছে। তবে, এখানে যারা রয়েছেন তাদের সুব্যবস্থাপনার জন্য জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছে। এছাড়া অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সেখানে নিয়োগ করা হয়েছে। তারা যাতে বাইরে না যেতে পারেন সে বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তারা ভেতরে থাকলে তাদের যে খাদ্য খরচ সেটিও তাদের নিজেদেরই বহন করতে হবে।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল বলেন, ভারত থেকে আসা এসব পাসপোর্ট যাত্রীদের অবশ্যই কোয়ারেন্টিন প্রয়োজন। কিন্তু ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাদের অর্থ ফুরিয়ে গেছে। তাই অর্থের অভাবে অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে জেনেছি। হোটেলগুলোতে আবাসনের ব্যবস্থা না করে যদি তাদের যুব উন্নয়ন অধিদফতরের ভবন, পিটিআই অথবা কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হোস্টেলে রাখা যেতো তবে অর্থ খরচ কম হতো।

(ঊষার আলো-এমএনএস)