মোঃ আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা : ২ আগস্ট মঙ্গলবার জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র পিসি রায়ের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও সরকারিভাবে পালিত হচ্ছে বিজ্ঞানীর জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান। তবে এবারের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। ফলে জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানকে ঘিরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছে নানান কর্মসূচি।
।। অনুষ্ঠানে থাকছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি।।
কর্মসূচি অনুযায়ী এ বছরের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান প্রশাসন সহ গুরুত্ব পেয়েছে সর্বমহলে। এ উপলক্ষে সোমবার (০১ আগস্ট) সকালে পাইকগাছা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় ও প্রেস ব্রিফিং এর আয়োজন করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ আহমেদ।
অনুষ্ঠানে এমপি বাবু বলেন, নির্বাচনী এলাকার উর্বর ভূমিতে বিজ্ঞানী পিসি রায়ের মত বরেণ্য ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করে আমাদের ধন্য করেছেন। বিজ্ঞানী পিসি রায় অত্র এলাকা কিংবা বাংলাদেশের গর্ব নয়, তিনি ছিলেন বিশ^ নন্দিত বিজ্ঞানী। এমপি বাবু আরো বলেন, মাননীয় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর আগমনের মধ্য দিয়ে বিজ্ঞানী পিসি রায় জাতীয়ভাবে অনেক বেশি গুরুত্ব পাবে। বিজ্ঞানীর বসতভিটা সংরক্ষণ সহ পর্যটনের অনেক সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। বিজ্ঞানীর স্মৃতি বিজড়িত দেশের প্রথম বালিকা বিদ্যালয় সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এখন থেকে বিজ্ঞানীর কর্মময় জীবন সম্পর্কে সাধারণ মানুষ সহ তরুণ প্রজন্ম অনেক বেশি জানতে পারবে। শোকাবহ আগস্টে বিজ্ঞানীর জন্মবার্ষিকী হওয়ায় জাতীয় শোক দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জন্মবার্ষিকীর সকল কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে বলে এমপি বাবু সাংবাদিকদের জানান।
উল্লেখ্য, বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল¬চন্দ্র পিসি রায় ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ তীরের রাড়–লী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা হরিশ্চন্দ্র রায় চৌধুরী ও মাতা ভূবন মোহিনী দেবী। তিনি একাধারে ছিলেন শিক্ষাবিদ, শিল্পপতী, রসায়নবিদ, সমাজসেবক, সমাজ সংস্কারক, সমবায় আন্দোলনের পুরোধা ও রাজনীতিবিদ। তিনি কলিকাতার মানিক তলায় ৮শ টাকা পুজি নিয়ে বেঙ্গল কেমিক্যাল এন্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ঔষধ শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে ঐ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শাখা প্রশাখায় লাখো কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছে। পিসি রায় দেশের সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনায় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কাপড়ের মিল ও জন্মভূমি রাড়–লীতে একমাত্র সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। বিজ্ঞানীর পিতা হরিশ্চন্দ্র রায় জন্মস্থান রাড়–লীতে ১৮৫০ সালে স্ত্রী ভূবন মোহিনীর নামে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। যেটি দেশের প্রথম বালিকা বিদ্যালয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বিজ্ঞানী পিসি রায় একাধারে তিনি ২০ বছর কলিকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়ন শাস্ত্রের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। বৃটিশ সরকার তাকে ১৯৩০ সালে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন। এছাড়া একই বছর লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৩৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের মহিশুর ও বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মান সূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে। বিজ্ঞানী পিসি রায় ১৯৪৪ সালের ১৬ জুন পরলোক গমন করেন। চিরকুমার এ বিজ্ঞানী জীবনের অর্জিত সকল সম্পদ মানব কল্যাণে দান করে গেছেন।