ঊষার আলো ডেস্ক : ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা নিয়ে ’মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন’ নামের এই আয়োজন।
ঊষার আলোর পাঠকদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের আজকের দিনে (৮ মে) ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার বিবরণ তুলে ধরা হল-
পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহার, ত্রিপুরা ও মেঘালয়- এ পাঁচ সীমান্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বাংলাদেশের শরণার্থী সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে যাওয়ার প্রাক্কালে ৮ মে মহাকরণে (রাইটার্স বিল্ডিং) এক জরুরি বৈঠকে বসেন। মুখ্যমন্ত্রীরা সিদ্ধান্ত নেন, শরণার্থীদের বিষয়টিকে শুধু সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোর সমস্যা হিসেবে না দেখে জাতীয় সমস্যা হিসেবে গণ্য করার জন্য তাঁরা কেন্দ্রকে অনুরোধ জানাবেন। এ দাবির পাশাপাশি তাঁরা একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব প্রণয়ন করেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায়, আসামের মুখ্যমন্ত্রী মহেন্দ্রমোহন চৌধুরী, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী কর্পুরী ঠাকুর, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্রলাল সিংহ ও মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী উইলিয়ামসন সাংমা প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনা করে প্রস্তাবটি প্রণয়ন করেন।
প্রস্তাবের বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর বোঝা কমানোর যে আরজি মুখ্যমন্ত্রীরা করেছেন, তিনি তা বিবেচনা করছেন।
ভারতের সর্বোদয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ এক বক্তৃতায় জানান, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি কায়রো, রোম, মস্কো, বার্লিন, নিউইয়র্কসহ জাপান ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যাবেন।
ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য এই দিন থেকে কলকাতায় একটি দপ্তর চালু করে।
মুক্তিবাহিনীর প্রধান কর্নেল এম এ জি ওসমানী ৮ মে সন্ধ্যায় ভারত–বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী দিনাজপুরের ভজনপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তিনি উদ্দীপনা সঞ্চার করেন। ভারতের কদমতলায় তিনি মুক্তিবাহিনীর স্থানীয় অধিনায়কদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যুদ্ধের পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করে সে অনুসারে অধিনায়কদের নির্দেশনা দেন।
বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব ডা. টি হোসেন এবং বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির চেয়ারম্যান ডা. আসহাব–উল হক কুষ্টিয়া ও যশোর জেলার মুক্তাঞ্চল সফর করে এসে জানান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের ভেতরে মানুষ অসম্ভব সংকটে দিনযাপন করছে। অনেকে মারা যাচ্ছে। জাতিসংঘ ও রেডক্রসের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, কলকাতার মিশন অফিস ত্রাণসামগ্রী ও ওষুধপথ্য সাদরে গ্রহণ করবে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাঙালিদের বিভিন্ন অ্যাকশন কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকেরা লন্ডনে এক সভায় মিলিত হন। সভায় অ্যাকশন কমিটির কার্যক্রমে গতি আনার লক্ষ্যে একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন এবং বাংলাদেশ আন্দোলনের সাহায্যার্থে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ ফান্ড নামে একটি তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফান্ডের বোর্ড অব ট্রাস্টি হন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, সমাজকর্মী ডোনাল্ড চেসওয়ার্থ এবং কমন্স সভার লেবার পার্টির সদস্য জন স্টোনহাউস।
লন্ডনের উত্তরে নর্দাম্পটন শহরের ক্রিকেট গ্রাউন্ডের বাইরে প্রায় দুই শ প্রবাসী বাঙালি অবস্থান নিয়ে যুক্তরাজ্য সফররত পাকিস্তান ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদে কেন্দ্রীয় সিরাত কমিটি আয়োজিত এক সেমিনারে জামায়াতে ইসলামী নেতা গোলাম আযমসহ অন্য বক্তারা বলেন, ভারত তার গুপ্তবাহিনীর সহায়তায় এ দেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। কিন্তু মানুষ ও সেনাবাহিনী তাদের বিতাড়িত করেছে।
পাকিস্তানি সেনারা, তাদের কিছু বাঙালি সহযোগী এবং অবাঙালিরা মিলে ফরিদপুরের কানাইপুরে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায়। সেনাবাহিনীর অনুগামী বাঙালি ও অবাঙালিদের একটি সশস্ত্র দল গ্রামটির সিকদারবাড়িসহ আরও কয়েকটি বাড়ির ১৮ জনকে গলা কেটে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি চলে লুটপাট। অবশেষে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর সাত ও আট; মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি: যুক্তরাজ্য, আবদুল মতিন, সাহিত্যপ্রকাশ; পূর্বদেশ, ৯ মে ১৯৭১; আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা, ভারত, ৯ মে ১৯৭১
(ঊষার আলো-এমএনএস)