ঊষার আলো রিপোর্ট : পঞ্চগড়ে আবার কমলো তাপমাত্রা। সপ্তাহ ধরে অব্যাহত রয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বুধবার রেকর্ড হয়েছিল ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত শুক্রবার থেকেই ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়ায় শৈত্যপ্রবাহের কবলে বিপর্যস্ত উত্তরের এ জেলার সাধারণ মানুষ। সকালে তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়ার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।
ভোর থেকেই ঘন কুয়াশায় ঢাকা পুরো জেলা। উত্তর-পশ্চিম দিকে থেকে প্রবাহিত হিম বাতাসে বইছে প্রচন্ড শীত। এতে শীত দুর্ভোগে পড়েছে নানান শ্রমজীবী-কর্মজীবী ও হতদরিদ্র মানুষ। শীতবস্ত্রের অভাবে বাড়িতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা দেখা গেছে।
শীতের কারণে বিপাকে পড়েছেন পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিক, দিনমজুর থেকে শুরু করে ছোটখাটো যানবাহন ভ্যানচালক মানুষগুলো পড়েছেন। সকালে ঘন কুয়াশার কারণে কাজে যেতে পারছেন না অনেকে। তবে জীবিকার তাগিদে চা শ্রমিকরা চা বাগানে, পাথর শ্রমিকরা নদীতে ও দিনমজুররা ক্ষেত খামার করতে দেখা গেছে। শীতের দুর্ভোগ বেড়েছে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে। এসব মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য সরকার যে ত্রাণ দিয়েছে তা একেবারেই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
চা শ্রমিক রাজু, কাওসার ও জামাল জানান, গতকাল সকালে ঝকঝকে সকালে দিন দেখা গেলেও আজ ভোর থেকে ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাস। চা বাগানে কাজ করতে গেলে হাত-পা অবশ হয়ে আসে। এখন বাগানের পরিচর্যা চলছে। শীতের কারণে গাছের ফ্লাইং, কাটিং করতে খুব কষ্ট হয়। কিন্তু কী করবো, পেটের দায়ে আর পরিবারের কথা চিন্তা করে কাজে বের হতে হয় আমাদের।
পাথর শ্রমিক ইমরান, আরশেদ আলী ও আবু তাহের জানান, ঠান্ডায় নদীর পানি বরফের মত মনে হয়। তারপরেও আমাদের পাথরই জীবিকা। তাই কাজে বেড়িয়েছি। কদিন ধরে নদীর ঠান্ডা পানিতে কাজ করে জ্বর-সর্দিতে ভুগলাম। ক্ষুধার্ত পেটতো ঠান্ডা বুঝে না। কিন্তু পরিবারের কথা চিন্তা করে সকালেই পাথর তোলার সরঞ্জাম নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছি। একই কথা জানান কয়েকজন দিন মজুর ও নারী পাথর শ্রমিক।
জয়গুন, আছিয়া ও কদবানুসহ কয়েকজন নারী পাথর শ্রমিক জানান, তীব্র শীতের কারণে তাদেরও কাজে যেতে কষ্ট হচ্ছে। ঘর সংসার সামলিয়ে তাদেরকে জীবিকার তাগিদে কাজে যেতে হচ্ছে। শীতের কারণে তাদের অনেক সময় কাজে যেতে দেরি হলে মহাজনরা অনেক সময় কাজে নিতে চান না।
শীতের কারণে পড়ালেখা স্থবির হয়ে পড়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও। সকালে স্কুল শিক্ষার্থী তানিয়া, কাজল ও নাইমা খাতুন জানায়, কনকনে শীত। রাতে পড়তে পারি না শীতের কারণে। রাতে যেন তাপমাত্রা জিরোতে চলে আসে। সকালে কুয়াশা আর বাতাসের কারণে প্রাইভেট ও স্কুলে যাওয়াও কষ্ট হচ্ছে।
এদিকে শীতে প্রকোপে বেড়েছে নানান শীতজনিত রোগ। জ্বর, সর্দি-কাঁশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়েরিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।
চিকিৎসকরা বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোগীর চাপ বেড়েছে। এমনিতে শীত মৌসুমে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। শীতজনিত রোগ হিসেবে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট বেশি হয়ে থাকে। আর শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে কিছুটা হলেও সুরক্ষা মিলবে।
জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, জেলায় গতকালের চেয়ে তাপমাত্রা কমেছে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার উপর দিয়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মো.জহুরুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে এ পর্যন্ত চল্লিশ হাজার শীত বিতরণ করা হয়েছে। এ জেলার শীতার্ত মানুষের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও দানশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে।
ঊষার আলো-এসএ