UsharAlo logo
শুক্রবার, ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমি বোধহয় এক ইঞ্চি হলেও বেশি সুখী: ঋতুপর্ণা

ঊষার আলো
ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪ ৪:০১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিনোদন ডেস্ক: আগে প্রেম তার পর বিয়ে। এরপর সাতপাকে বাঁধা ২৫ বছরের সফর। ২৫তম বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি হলেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললেন ২৫ বছর একছাদে বসবাসের জীবনকাহিনি, যা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—

শুরুতেই বলি— নায়িকা জীবন খুব কঠিন। সেই জীবনের সঙ্গে অন্য পেশার কোনো মানুষের জীবন মেলানো আরও কঠিন। কোনোভাবে দুটি জীবন মিলে গেলে তার থেকে ভালো আর কিছুই হতে পারে না। ২৫ বছর ধরে সঞ্জয় চক্রবর্তী, মানে আমার স্বামীর সঙ্গে একছাদের নিচে কাটানোর পর আমাদের দাম্পত্য নিয়ে এটিই আমার উপলব্ধি।

সঞ্জয়কে সেই কত ছোট থেকে চিনি— তখন আমি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। ও ক্লাস টেনে পড়ে। তখন থেকে আমাদের বাড়িতে যাওয়া-আসা। ও বরাবরের মতো গুরুগম্ভীর। পড়াশোনায় বেশ ভালো। পরে বিদেশে পড়তে যায়। আমার বাবার একটাই চাওয়া— ছেলেকে শিক্ষিত হতে হবে। মায়ের দাবি— সেই সঙ্গে ভালো পরিবারেরও হওয়া যাই। সঞ্জয় তাই যখন বাড়িতে এসে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল, তখন আমার মা-বাবা দ্বিতীয়বার ভাবেননি। আরও কাণ্ড শুনবেন— যেদিন ও আমাদের বাড়িতে বিয়ের কথা বলতে এসেছিল, সেদিন আমি বাড়িতে ছিলাম না, শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলাম।

এই জায়গা থেকেই বলব— নায়িকার সঙ্গে ঘর করা খুব সহজ কথা নয়। সঞ্জয়ও একইভাবে প্রচণ্ড ব্যস্ত। তবু সে একা হাতে নিজের বাড়ি, আমার বাড়ি সামলে গেছে। তাই বলে কি মনোমালিন্য হয়নি? কথা কাটাকাটি হয়নি? রাগে-অভিমানে আমরা সাময়িক বিপরীত মেরুর বাসিন্দা হইনি?— সব হয়েছে। আবার সব মিটেও গেছে। আমার মায়ের সঙ্গে সঞ্জয়ের কী যে ভালো সম্পর্ক! মাকে মান্য করে। আবার বন্ধুর মতো ভালোবাসে। আজ তাই আমাদের খুব মনখারাপ। মা নেই, ২৫ বছরের উদযাপনও নেই। কলকাতাতেই আছি। কাছের কয়েকজন বলেছেন— দেখা করতে আসবেন, ব্যস! ওই পর্যন্ত।

আমার মা চোখে চোখে রাখত সঞ্জয়কে। আমার সঙ্গে যখনই ঝগড়া হয়েছে, মা-বাবা দুজনেই সঞ্জয়ের পক্ষে। উল্টে আমায় ধমক দিত—সঞ্জয়ের ভুল হতেই পারে না। শিক্ষিত, তোর থেকে বয়সে বড়। অভিজ্ঞতাও বেশি। ওর কথা শুনে চলবি। একদম ওর বিরুদ্ধে কিছু বলতে আসবি না।

সঞ্জয়ও তেমনি। রাগারাগি হলে মাকে সালিশি মানত। আরও একটা ব্যাপার ছিল। জামাইষষ্ঠীতে মা জামাইকে খাওয়াতে খুব ভালোবাসত। সঞ্জয় ফিশফ্রাই খেতে ভালোবাসে। কলকাতায় থাকলে নিজের হাতে ফ্রাই বেঁধে, ভেজে খাওয়াত। আমরা সিঙ্গাপুরে। মা বাঁধা ফিশফ্রাই বাক্সে ভরে পাঠিয়ে দিত। আমি যেন ভেজে ওকে খাওয়াই। ও আমেরিকায় অনেকটা সময় কাটিয়ে ফিরেছে। খাওয়াদাওয়া সে দেশের মতো হয়ে গেছে।

এদিকে মা তো জামাইয়ের জন্য রকমারি রান্না করেছে। সঞ্জয়ের খাওয়ার অভ্যাস বদলে গেছে জেনে আবার নিজে পাতলা করে স্ট্যু রেঁধে দিয়েছে। শুরুতে তাই জামাই শাশুড়িকে প্রায়ই অনুরোধ জানাত—যেন আসামিকে শাস্তি দেওয়া হয়। এত খাবার খাওয়া যায়? আমি এত খেতে পারি না।

কতবার এমন হয়েছে— মা সিঙ্গাপুরে মেয়ের কাছে গেছে। এদিকে মেয়ে অন্য কোথাও শুটিংয়ে ব্যস্ত। মায়ের মুখ ভার বলেন, তোমার তো আমার জন্য সময়ই নেই! সারাক্ষণ শুটিং। সঙ্গে সঙ্গে সঞ্জয় বলে উঠত— চিন্তা করবেন না ‘মিল’ (মাদার ইন ল)। আমি আছি, সঙ্গ দেব। দিতও তাই। এক বার হঠাৎ মায়ের দাঁতে ব্যথা। সঞ্জয় দায়িত্ব নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে সব করে দিল। শেষের দিকে আমরা মাকে ড্রেস পরাতাম। মা আর শাড়ি সামলাতে পারত না বলে। সঞ্জয় বলত— ঝটপট ড্রেস পরে আমার সঙ্গে ঘুরতে চলুন।

এতগুলো বছর পেরিয়ে মাঝেমধ্যে পেছন ফিরে দেখতে ইচ্ছে করে। বিনোদন দুনিয়ায় অনেকেই দম্পতি। তারা খুবই ভালো আছেন।ওদের দেখতে দেখতে তবু মনে হয়— আমি বোধহয় এক ইঞ্চি হলেও বেশি সুখী। কারণ একই পেশায় থেকে হাতের ওপরে হাত রাখা সহজ কথা নয়।

ঊষার আলো-এসএ