ঊষার আলো ডেস্ক :যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে রিপাবলিকান প্রাইমারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়েছেন নিকি হ্যালি। ২০২৪ সালের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এটি তাঁর প্রথম জয়। এর আগে তিনি তাঁর নিজ অঙ্গরাজ্য দক্ষিণ ক্যারোলাইনায় ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। তবে মার্কিন ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী, যিনি রিপাবলিকান প্রাইমারিতে কোনো জয় পেলেন।
নির্বাচনে মনোনয়নের দৌড়ে ট্রাম্প অবশ্য হ্যালির চেয়ে বেশি এগিয়ে আছেন এবং সম্ভবত নভেম্বরের নির্বাচনে তিনিই জো বাইডেনের মুখোমুখি হতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিবিসির অংশীদারি প্রতিষ্ঠান সিবিএস জানাচ্ছে, ওয়াশিংটন ডিসিতে রিপাবলিকান ১৯টি ভোটের সবগুলোই পেয়েছেন হ্যালি। এ নিয়ে সারা দেশে তিনি ৪৩ জন রিপাবলিকান প্রতিনিধির সমর্থন পেলেন। যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৪৭ জনের সমর্থন নিয়ে এখনো অনেক এগিয়ে রয়েছেন।
হ্যালির পক্ষে প্রচার-প্রচারণার জাতীয় মুখপাত্র অলিভিয়া পেরেজ-কিউবাস বলেছেন, ‘এতে আশ্চর্য হওয়ার মতো কিছু নেই যে ওয়াশিংটনের কর্মহীনতার সবচেয়ে কাছের রিপাবলিকানরা ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর সব বিশৃঙ্খলাকে প্রত্যাখ্যান করছে।’
ট্রাম্প রিপাবলিকান প্রচার-প্রচারণায় এখন পর্যন্ত প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের প্রাইমারি বা ককাসে আধিপত্য বিস্তার করে আছেন। এই সপ্তাহে সুপার টিউজডেতে আরো বেশিসংখ্যক প্রতিনিধির সমর্থন আদায়ের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন তিনি। সুপার টিউজডে বা মঙ্গলবার ভোটাররা যুক্তরাষ্ট্রের ১৫টি অঙ্গরাজ্য এবং মার্কিন টেরিটোরিতে তাঁদের প্রার্থী মনোনীত করবেন।
কে এই নিকি হ্যালি?
ভারতের পাঞ্জাব থেকে যাওয়া অভিবাসী মা-বাবার ৫১ বছর বয়সী মেয়ে নিকি হ্যালি মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রথমবারের মতো তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন চেয়েছেন। এখন বলতে গেলে তিনিই দ্বিতীয় প্রধান রিপাবলিকান প্রার্থী, যিনি প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দলের সমর্থন চাইছেন।
অন্যদিকে হ্যালি হলেন তৃতীয় ভারতীয়-মার্কিন, যিনি প্রেসিডেন্ট হতে চান। এর আগে তিনি সাউথ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর ছিলেন। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে, অর্থাৎ প্রায় ছয় বছর আগে হ্যালিকে জাতিসংঘে মার্কিন দূত পদে নিয়োগ করেছিলেন।
সম্প্রতি টুইটারে নির্বাচনী প্রচারের এক ভিডিও পোস্ট করে হ্যালি বলেন, ‘এখন পিছিয়ে থাকার সময় নয়। এখন সময় একটি শক্তিশালী ও গর্বিত যুক্তরাষ্ট্রের।’ অথচ গত বছর হ্যালি বলেছিলেন, হোয়াইট হাউসের লড়াইয়ে তিনি ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ করবেন না।
নিকি হ্যালি এর আগে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন ক্যাপিটলে হামলার সময় ট্রাম্পের আচরণের সমালোচনা করেছেন। দাঙ্গার পরের দিন এক বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘নির্বাচনের দিন থেকে তাঁর কার্যকলাপের জন্য ইতিহাসের পাতায় (ডোনাল্ড ট্রাম্পের) কঠোর বিচার হবে।’
তবে অধিকাংশ প্রাথমিক জরিপে দেখা যাচ্ছে, সাউথ ক্যারোলাইনায় ট্রাম্প এখনো যথেষ্ট জনপ্রিয়। ২০১৬ সালে সাউথ ক্যারোলাইনার বিজয়ে ভর করে তিনি হোয়াইট হাউসের পথে অগ্রসর হচ্ছেন। ফলে ওই অঙ্গরাজ্যে জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ থাকলেও নিকি হ্যালিকে কঠিন বাধা পেরিয়ে যেতে হবে বলে দৃশ্যত মনে হচ্ছে।
বর্তমান এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের ওপর জনমত জরিপকারী সংস্থা ট্রাফালগার গ্রুপের এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ফলাফলে ৪৩ শতাংশ ভোট নিয়ে ট্রাম্প প্রথম স্থানে এবং ১২ শতাংশ ভোট নিয়ে হ্যালি চতুর্থ স্থানে রয়েছেন।
হ্যালির আগে অন্য যে দুজন ভারতীয়-মার্কিন মনোনয়ন পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন, তাঁরা হলেন লুইজিয়ানার গভর্নর ববি জিন্দাল। তাঁর ২০১৫ সালের প্রথম প্রচেষ্টা বিশেষ কারো নজর কাড়তে পারেনি। এ ছাড়া আছেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, যিনি ২০২০ সালেও দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
পাঞ্জাব থেকে যুক্তরাষ্ট্র
নিকি হ্যালির মা-বাবা ভারতের পাঞ্জাব থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। সেখানে তাঁরা দুজনই শিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন। সেই সঙ্গে তাঁরা একটি পোশাকের বুটিক দোকানের মালিক ছিলেন।
বাবা অজিত সিং রানধাওয়া ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট অর্জন করেন এবং ভুরহিস কলেজে ২৯ বছর ধরে জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করার পর ১৯৯৮ সালে অবসর নেন। মা রাজ কৌর রানধাওয়া দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। সাউথ ক্যারোলাইনায় যাওয়ার পর তিনি শিক্ষায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং স্থানীয় ব্যামবার্গ পাবলিক স্কুলে সাত বছর ধরে শিক্ষকতা করেছেন।
ঊষার আলো-এসএ