UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বর্জ্যের সাগরে হাসপাতাল

usharalodesk
এপ্রিল ১৪, ২০২১ ১০:৪৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো ডেস্ক : বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন প্রায় চার টন করে ক্লিনিক্যাল বর্জ্য জমা হচ্ছে স্তূপাকারে। এক বছরে সে হিসেবে বর্জ্য জমেছে প্রায় দেড় হাজার টন। যার দুর্গন্ধে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী। কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারী থেকে রোগী ও তাদের স্বজনরা বিপাকে পড়েছেন। বর্জ্যের দুর্গন্ধে নাক চেপে থাকতে হয় সারাক্ষণ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গতবছর করোনার প্রকোপ শুরুর পর থেকে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) হাসপাতালের বর্জ্য নেয়া বন্ধ করে দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য বিসিসি কর্তৃপক্ষকে বারবার চিঠি দেয়া হলেও কাজ হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে করোনার বর্জ্য থেকে শুরু করে মেডিকেলের বর্জ্যে নানা রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকতেই নাকে বাড়ি দিলো বর্জ্যের গন্ধ। ওই বিভাগের পাশেই মেডিক্যাল বর্জ্যের বিশাল স্তূপ। মূল ভবনের উত্তর-পশ্চিম পাশেও একই চিত্র। করোনা ওয়ার্ডের সামনে উন্মুক্ত স্থানে করোনা ওয়ার্ডেরই বর্জ্য ফেলে বিষিয়ে তোলা হচ্ছে পরিবেশ। কুকুর-বিড়াল ও পাখিরা ওই বর্জ্য মুখে করে নিয়ে যাচ্ছে অন্যত্র। এতে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকিও বাড়ছে।
হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম বলেন, করোনার আগে প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ টন বর্জ্য বিসিসি কর্তৃপক্ষ পরিষ্কার করতো। মহামারি শুরুর পর থেকে বিসিসি কাজ করে দেয়ায় এখন হাসপাতালের আশপাশেই সব ফেলতে হচ্ছে। এখন আর বর্জ্য ফেলার জায়গাও নেই।
এর মাঝে হাসপাতালটিতে কর্মী সংকটও প্রবল। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, এক হাজার শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ঝাড়ুদারের ২৭০টি পদের মধ্যে আছেন ৭৮ জন। যার মধ্যে ১৫-২০ জন আবার শারীরিকভাবে অক্ষম। এমএলএসএস-এর ৪৪৮টি পদে কর্মরত ১৩৫ জন। এদের মধ্যেও অন্তত ২০ থেকে ২৫ জনের বর্জ্য অপসারণজনিত কাজের শারীরিক সক্ষমতা নেই। ঘাটতি জনবল দিয়ে হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. মনিরুজ্জামান জানান, গতবছর করোনার শুরুতে বিসিসি বর্জ্য নেয়া বন্ধ করে দিলে তাদের একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়। তাতে কোনও সাড়া মেলেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও চিঠি দিয়ে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়। গত কয়েক দিন আগে ওই চিঠির উত্তরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে।’
বিসিসির পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. রবিউল জানান, ‘হাসপাতালের বর্জ্য অনিরাপদ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে তা পরিষ্কার না করার জন্য সিটি করপোরেশনকে জানানো হয়েছিল। এ কারণে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্জ্য পরিষ্কারে সিটি করপোরেশন সহযোগিতা করতে পারছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই উদ্যোগ নিতে হবে।’
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ইনসিনারেটর মেশিন চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। তারা খোঁজ নিয়ে দেখেছেন এই মেশিন দেশের কোনও সরকারি হাসপাতালে নেই। এখন মন্ত্রণালয় এই মেশিন সরবরাহ করতে পারলে করবে, না হলে যেভাবে আছে সেভাবেই চলবে।’
এ ব্যাপারে সবুজ আন্দোলনের সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান বলেন, ‘এক বছর ধরে যেহেতু সিটি করপোরেশন বর্জ্য নেয়া বন্ধ করেছে, তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরই উদ্যোগী হয়ে যন্ত্র বা জনবলের দিকে দৃষ্টি দেয়া উচিত ছিল। ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ধ্বংসের জন্য হাসপাতালে মেডিক্যাল ইনসিনেরাটর, অটোক্লেভ বা দাহনযন্ত্রসহ আরও অনেক কিছুর প্রয়োজন। তরল বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য বিশেষ ট্রিটমেন্ট প্লান্টও প্রয়োজন। এসব দিকে আপাতত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কেই দৃষ্টি দিতে হবে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রক্তপুজ মিশ্রিত তুলা, গজ-ব্যান্ডেজ, ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, রক্তের ব্যাগ, এমনকি অস্ত্রোপচারের পর দেহ বিচ্ছিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গও পড়ে আছে খোলা আকাশের নিচে। সব মিলিয়ে আশেপাশে পরিবেশ অসহনীয় হয়ে উঠেছে। সহসা এ পরিস্থিতি বদলানোর সম্ভাবনাও নেই। দূষণ ক্রমে ছড়িয়ে পড়বে শহরেও।
হাসপাতালেরই একজন চিকিৎসক জানালেন, এই দূষণ শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে বড় সমস্যা করতে পারে। ধুলাবালির সঙ্গে সামান্য পারদ বা সিসা শরীরে ঢুকলে তা শ্বাসপ্রশ্বাস ও থাইরয়েড গ্রন্থির কাজে বিঘ্ন ঘটায়। দূষিত বাতাসের কারণে সাইনোসাইটিস ও অ্যালার্জিজনিত রোগের প্রকোপও বাড়ে। এসব বর্জ্যে নাইট্রোজেন অক্সাইড বেশি থাকে, যা মানুষের ফুসফুসকে দুর্বল করে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

(ঊষার আলো-এমএনএস)