UsharAlo logo
রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বানারীপাড়ায় দুই ভাইয়ের করুন নিয়তি!

pial
জুলাই ১৬, ২০২২ ৫:১৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রাহাদ সুমন,বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি : মানবজীবনের প্রকৃত বন্ধুই হচ্ছে মৃত্যু কিন্তু সেই মৃত্যু হতে হবে এবং হওয়া উচিত স্বাভাবিক। হত্যায় যেমনি মৃত্যুকে করে প্রশ্নবিদ্ধ, মুড়িয়ে দেয় নির্মমতার চাদরে, ঠিক তোমনি আত্মহত্যা কিংবা দূর্ঘটনায় ম্লান করে দেয় স্বাভাবিক মৃত্যুর ঔজ্জ্বল্যকে। জন্ম-মৃত্যু তো প্রকৃতসৃষ্ট মহান স্রষ্টার আরোপিত এক অমোঘ বিধান।

জন্মের পরিণতিই হলো মৃত্যু। তবে কিছু মৃত্যু পাখির পালকের মত হালকা আর কিছু মৃত্যু পাথরের চেয়েও ভারী। পিতার কাঁধে সন্তানের লাশের চেয়ে ভারী জগতে আর কিছু নেই। সেরকমেরই একজন অভাগা পিতা বরিশালের বানারীপাড়ার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের মহিষাপোতা গ্রামের রাজমিস্ত্রি ইয়াকুব আলী। দুটি মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় তিনি তার টকবগে যুবক বয়সের দুই ছেলেকে হারিয়েছেন। যারা তার সঙ্গে রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করে বাবা-মায়ের কষ্ট দূর করে সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে কেবল শুরু করেছিল। ইয়াকুব রাজের বড় ছেলে ইমরান হোসেন (১৬) বানারীপাড়া পৌর শহরের বন্দর বাজারের কাপড় পট্রিতে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ওসমান গনির নির্মানাধিন বিল্ডিংয়ের কাজ করার সময় অসাবধানতাবশত দোতলা থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়। দু’মাস পরে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় ২০১৬ সালের ৭ মে শনিবার দিবাগত রাত ৩টা ৫ মিনিটের সময় ইমরান মারা যায়। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পরে ছোট ভাই সায়েম বাবার সঙ্গে রাজমিস্ত্রির কাজ করছিল। বাবা-মা বড় ছেলেকে হারানোর শোক ছোট ছেলেকে ঘিরে যখন কিছুটা কাটিয়ে উঠছিলেন ঠিক তখনি আরেক দূর্ঘটনা তাদের সব স্বপ্ন-সুখ ভেঙ্গে তছনছ করে দেয় তাসের ঘরের মতন।

৯ জুলাই রাতে বরিশাল-বানারীপাড়া সড়কের গুয়াচিত্রা বাজার সংলগ্ন মসজিদের সামনে মাহিন্দ্রা-আলফা ও মটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে বন্ধু রাব্বীসহ মটরসাইকেল আরোহী মো. সায়েম (২০) গুরুতর আহত হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক সপ্তাহ লাইফ সাপোর্টে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে অবশেষে ১৫ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টা ৪০ মিনিটের সময় বাবা-মা,দুই অবুঝ বোন আর স্বজনদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে সায়েম চির অচেনার দেশে পাড়ি জমান।

শনিবার (১৬ জুলাই) সকাল ১০টায় জানাজা শেষে উপজেলার মহিষাপোতা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বড় ভাই ইমরানের কবরের পাশে সায়েমকে চির নিন্দ্রায় শায়িত করা হয়। দুই ভাইয়ের পাশাপাশি এ কবর শুধু স্বজনদেরই নয় কাঁদাচ্ছে প্রতিবেশীসহ সবাইকে। বুকের ধন দুই ছেলে ইমরান-সায়েমকে মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় অকালে হারিয়ে তাদের বাবা-মা পাগলপ্রায়। পরিবারসহ গোটা এলাকায় বিরাজ করছে শোকাবহ পরিবেশ। গভীর শোকাহত এ পরিবারকে শান্তনা জানানোর ভাষাও যেন হারিয়ে ফেলেছেন সবাই।

(ঊষার আলো-এফএসপি)