বেনারসি শাড়ি যে কত রকমের হতে পারে, তা নীতা আম্বানির শাড়ি দেখলে বোঝা যায়। তিনি যখনই বেনারসি শাড়ি পরে প্রকাশ্যে আসেন, তখনই শাড়ির নকশা দেখে বিস্মিত হন অনেকে। সেই শাড়ি দেখেই অনেকে প্রথম জানতে পারেন যে, বেনারসিতে এমন নকশাও হয়! কখনো জংলা কাজ, কখনো জালের কাজ, আবার কখনো ফুল-পাখি ও লতাপাতার নানা রঙের মিনা করা নকশা। এবার অবশ্য তিনি পরলেন শিকারগা বেনারসি শাড়ি।
শাড়ির নাম শিকারগা। নামেই যার পরিচয়। ওই ধরনের বেনারসি শাড়িতে শিকার করার ছবি বোনা হয় জরি দিয়ে। থাকে বন্য জন্তু ও পশুপাখির নকশাও। বেনারসি শাড়ি বোনার পুরোনো যেসব ধরন রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম শিকারগা। মনে করা হয়, ভারতে ইংরেজ শাসনের অনেক আগে মোগল আমলে শিকরগা বোনার চল শুরু। কারণ সেই সময়েই রাজাদের মধ্যে শিকারে যাওয়ার চল ছিল বেশি। বেনারসের শাড়ি শিল্পীদের বুননেও তার প্রভাব পড়েছিল। রেশমের শাড়িতে তারাও বুনতেন রাজারাজড়াদের শিকারে যাওয়ার ছবি। নীতার শাড়িতেও রয়েছে শিকারগার নকশা। সেই নকশা আবার বোনা হয়েছে ‘কড়াওয়া’ পদ্ধতিতে।
কড়াওয়া বুনন পদ্ধতি হলো বেনারসির সবচেয়ে কঠিন বুনন পদ্ধতি। ‘কড়াওয়া’ হিন্দি শব্দ। যার বাংলা করলে দাঁড়ায় কড়া বা কঠিন। হ্যাঁ, ওই বুনন পদ্ধতিটি সত্যিই কঠিন। কারণ এর প্রতিটি বুটি বোনা হয় হাতে। আলাদা আলাদা ভাবে। যেহেতু তাতের বদলে হাতেবোনা, তাই আলগা সুতা থাকে না।
সেই কাজ করতে সময় লাগে অনেক বেশি। নীতার শাড়িটিতে যেমন শিকারগা কাজের ঐতিহ্য মেনে রয়েছে তেড়ে যাওয়া সিংহের মোটিফ। শাড়ির প্রান্তে একহারা টকটকে লাল সীমারেখা। তার সঙ্গে রুপালি জরির সূক্ষ্ম কাজের ইঞ্চি পাড়। সেই পাড় ছুঁয়ে পর পর সোনালি সুতার সিংহের মোটিফ। তার কেশর বোনা রুপালি জরিতে।
বেনারসি শাড়ি মানেই বুটিদার বা নকশাদার শাড়ির কথা মাথায় আসে। নীতার বেনারসিটি একেবারেই তেমন নয়। বরং পাড়-ছোঁয়া সিংহগুলো ছাড়া গোটা শাড়ির জমি বুটিহীন। আঁচলে সূক্ষ্মতর কোনিয়া নকশা, যা আসলে কৌণিক নকশা যেমনটা দেখা যায় কাশ্মীরের শালের দুই প্রান্তে। নীতা বরাবরই ভারতীয় শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতার কথা বলে এসেছেন। হারিয়ে যাওয়া শিল্পকে নতুন করে তুলে আনার চেষ্টাও করেছেন। বছরখানেক আগেই বেনারসে গিয়ে সেখানকার শাড়ি শিল্পীদের সঙ্গে দেখা করে এসেছিলেন তিনি। কিনেছিলেন অনেক শাড়িও। মুম্বাইয়ের জিও কনভেনশন সেন্টারেও দেশের বিভিন্ন প্রদেশের শিল্পীদের শাড়ির কাজ প্রদর্শিত হয়। এবার বস্টনেও দেশের শাড়ি শিল্প তুলে ধরলেন নীতা।
ঊষার আলো-এসএ