আরিফুর রহমান,বাগেরহাট : বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গিলাতলা সরকারি বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র শোয়াইব সেখ (১৬) নিজ বাড়ীতে ঘরের আড়ার সাথে রশি নিয়ে আত্মহত্যা করেছে। স্কুলে বেয়াদবীর অভিযোগে তাকে নোটিশ করা ও অন্যায়ের জন্য প্রধান শিক্ষকের পা ধরে মাফ চেয়ে মাফ না পেয়ে শোয়াইব আত্মহত্যা করেছে। এ অভিযোগ করেছেন শোয়াইবের চাচা। এ ঘটনায় রামপাল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড হলেও পরিবার থেকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে শিক্ষকদের বিচার দাবী করা হয়েছে।
গত ১৫ মে রাতে শোয়াইব নিজ বাড়ীতে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করে। পরেরদিন সকালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। বিলম্বে প্রাপ্ত তথ্যমতে ঘটনা বিষয়ে জানা গেছে রামপাল উপজেলার গিলাতলা হাওলাদার পাড়া গ্রামের রুহুল সেখের ছেলে সোয়াইব শেখ স্থানীয় গিলাতলা সরকারি বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৯ ম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। তার বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ আসলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষরিত ১৪ মে/২০২২ তারিখ একটি কারণ দর্শনোর নোটিশ আসে তার বাড়ীতে। সোয়াইবের পরিবারের সদস্যরা নোটিশটি হাতে পেয়ে শোয়াইবের চাচা সাইফুল ইসলাম ভাতিজা সোয়াইবকে সাথে নিয়ে বিদ্যালয়ে যান। তারা লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে প্রধান শিক্ষকের পা ধরে ক্ষমা চান। এ সময় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক তাদের তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ করেন। এতে সোয়াইব ভেঙ্গে পড়ে এবং নিজ বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। বিষয়টি নিয়ে ওই এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে তার সহপাঠীরা শোয়াইবের বাড়ীতে যায় এবং মৌন প্রতিবাদ করে বিষয়টি সংবাদ কর্মীদের নজরে নেয়। তারা অভিযোগ করে বলে যে, প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কুমার পাল ও সহকারি শিক্ষক উজ্জ্বল পাল স্যার সোয়াইবকে মানুষিকভাবে চাপ প্রয়োগ করার কারণে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। তারা তদন্তসহ বিচার দাবী করে। একই অভিযোগ করেন সোয়াইবের চাচা সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন এটা আত্মহত্যা নয়, প্রধান শিক্ষক ও উজ্জ্বল বাবুর মানুষিক চাপ প্রয়োগের কারণে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। সোয়াইবের পিতা অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কুমার পালের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি আমার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় এর অনুমতিক্রমে নোটিশ করেছি। যা কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সব কিছু নিয়ম মেনেই। আমি ও শিক্ষক উজ্জ্বল বাবু তাদের সাথে অভিভাবক সুলভ আচারণ করেছি। এমন কোন কথা তাদের বলিনি যে তারা কষ্ট পায়। তবে ঘটনার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
এ ঘটনার বিষয়ে রামপাল থানার ওসি তদন্ত রাধে শ্যাম বলেন, অপমৃত্যু মামলা দায়ের পূর্বক লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাটের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। পরবর্তী ব্যবস্থা বিধি অনুযায়ী গ্রহণ করা হবে। ছাত্র আত্মহত্যার ঘটনার বিষয়টি রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কবীর হোসেন এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন শিশুদের প্রতি আমাদের মানবিক আচারণ করতে হবে। আমি খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো কেন কি কারণে ওই ছাত্র আত্মহত্যা করেছে ? এর জন্য কারো কোন গাফিলতি আছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।