ঊষার আলো রিপোর্ট : সীমানা জটিলতা সংক্রান্ত মামলার অবসান হওয়ায় প্রায় ১২ বছর পর দিনাজপুরের পার্বতীপুর পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। বুধবার (০২ নভেম্বর) সকাল ৮টায় শুরু হয়ে ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
জানা গেছে, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে সকাল থেকে কেন্দ্রে আসছেন ভোটাররা। বিশেষ করে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন তারা।
এদিকে পার্বতীপুর বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, কেন্দ্রে প্রবেশে ভোটারদের সহযোগিতা করছেন পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। তবে প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করায় কিছুটা সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে ভোটার এবং ভোট গ্রহণকারীদের। অন্যদিকে কিছু কিছু কেন্দ্রে স্থান সংকুলানের অভাবে হুড়োহুড়ির মধ্যে ভোট দিতে হচ্ছে ভোটারদের।
আর অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
দক্ষিণ দৌলতপুর মহল্লার ভোটার আজাদুল ইসলাম বলেন, মেশিনের মাধ্যমে ভোট হচ্ছে। প্রথমবারের মতো মেশিনে ভোট হওয়ায় সবাইকে বোঝাতে একটু সমস্যা হচ্ছে।
একই এলাকার সাজেদা বেগম নামে এক নারী ভোটার বলেন, দীর্ঘ দিন পর ভোট দিতে পারলাম। প্রথমবারের মতো মেশিনে ভোট দিলাম, কিছুটা ভয় লেগেছিল তবে দেখছি সহজই। পছন্দমতো প্রার্থীকেই ভোট দিছি।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, সীমানার জটিলতার কারণে প্রায় ১২ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে পৌরসভা নির্বাচন। এতে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী নারিকেল গাছ প্রতীকের এ জেড এম মেনহাজুল হক এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমজাদ হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নৌকা প্রতীকে। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪০ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরও ১৮ জন প্রার্থী।
পার্বতীপুর পৌরসভার মোট ভোটার রয়েছেন ৩৩ হাজার ৩৯৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১৬ হাজার ৯২৬ ও পুরুষ ভোটার ১৬ হাজার ৪৭০ জন। পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে ১৩টি কেন্দ্রে ১০৮টি বুথে ইভিএমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, পৌরসভার আয়তন বৃদ্ধির কারণে রামপুর ও পলাশবাড়ী ইউনিয়নের সঙ্গে সীমানা জটিলতায় একটি পক্ষ আদালতে মামলা করে। আর এ কারণে এত দিন পার্বতীপুর পৌরসভা নির্বাচন স্থগিত ছিল পরবর্তীতে উচ্চ আদালত থেকে মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
পার্বতীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত খান বলেন, দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপারসহ পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা, পার্বতীপুর থানা পুলিশ শান্তিপূর্ণ, সুন্দর পরিবেশে ভোটাররা যাতে তাদের ভোটারাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন।
দিনাজপুরের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রামানিক বলেন, নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা মাঠে রয়েছেন। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা কাজ করছেন। এছাড়া নিরাপত্তার জন্য মাঠে রয়েছেন প্রয়োজনীয় সংখ্যক আনসার সদস্য।
প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালে গড়ে উঠা পার্বতীপুর পৌরসভা ২০১৪ সালে ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা পায়। ২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারি পৌরসভাটিতে সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ২০১৬ সালের মধ্য সময়ে মেয়াদ শেষ হয়। সেই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী এ জেড এম মেনহাজুল হক মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়। এবারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক এ মেয়র। পৌরসভার আয়তন বৃদ্ধির কারণে রামপুর ও পলাশবাড়ী ইউনিয়নের সঙ্গে সীমানা-সংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি হলে এতদিন পার্বতীপুর পৌরসভা নির্বাচন স্থগিত ছিল।
ঊষার আলো-এসএ