UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

২৫১ জনের কমিটির অধিকাংশই নিষ্ক্রিয়

usharalodesk
অক্টোবর ৩, ২০২২ ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : দীর্ঘ ছয় বছর একই কমিটি দিয়ে চলছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগ। যদিও কমিটির মেয়াদ এক বছর। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর সম্মেলন হয়। এর তিন দিন পর ১৩ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি গঠন হয়। পরের বছর ১৯ জুন ২৫১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়। সেই হিসাবে ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর শেষ হয় কমিটির মেয়াদ।

এদিকে দীর্ঘদিন একই কমিটি থাকায় এবং নতুন কমিটি না হওয়ায় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নানা গ্রুপ তৈরি হয়েছে। নেতাকর্মীরা জড়াচ্ছেন সিট ও ভর্তি-বাণিজ্য। শিক্ষার্র্থী নির্যাতন, চাঁদাবাজি ও শিক্ষক লাঞ্ছিত করাসহ নানা ধরনের অপকর্ম চলছে ছাত্রলীগের নামে। এছাড়া নতুন কমিটি না হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব তৈরির পথও বন্ধ হয়ে আছে। ২৫১ জন নেতার মধ্যে রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন মাত্র ২০ জন। শৃঙ্খলার অভাবে তারাও নানা অপকর্মে জড়িয়েছেন।

জানা যায়, পূর্ণাঙ্গ কমিটির ৬৩ জন সহসভাপতির মধ্যে সক্রিয় রয়েছেন শুধু সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত, মেসবাহুল ইসলাম ও কাজী আমিনুল হক লিংকন। ১০ জন যুগ্মসাধারণ সম্পাদকের মধ্যে সক্রিয় আছেন শাহিনুর সরকার ডন। ১০ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে সক্রিয় আছেন মেহেদী হাসান মিশু, এনায়েত হক রাজু ও ইমতিয়াজ আহমেদ। এছাড়া সক্রিয় আছেন সহ-সম্পাদক হাসিবুল ইসলাম শান্ত, ধর্মবিষয়ক উপসম্পাদক তাওহীদ দুর্জয়, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল গালিব, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক হাসান মুহা. তারেক, কার্যনির্বাহী সদস্য আল মুক্তাদির তরঙ্গ এবং বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ আরও ৬ জন নেতাকর্মী। তবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বলতে যা বোঝায়, তা কেউই করেন না। সক্রিয়রা ফাঁকা মাঠে নানা অপকর্মে জড়িয়ে মাঝেমধ্যেই খবরের শিরোনাম হন। এখন রাবি শাখা ছাত্রলীগে চেইন অব কমান্ড বলতে কিছু নেই।

আরও জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বর্তমান সভাপতি গোলাম কিবরীয়া ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে উর্দু বিভাগে ভর্তি হন। তার শিক্ষাজীবন শেষ হয় ২০১৬ সালে। অপরদিকে শাখার সাধারণ সম্পাদক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি সেই বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করার আগে ড্রপআউট হন। পরে কমিটি হওয়ার পূর্বমুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে দুই বছর মেয়াদি সান্ধ্য কোর্সে ভর্তি হয়ে নেতৃত্বে আসেন। সে হিসাবে বর্তমানে তারও ছাত্রত্ব নেই। এছাড়া সক্রিয় অন্যদেরও ছাত্রত্ব নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক।

এদিকে বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত নতুন কমিটি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন পদপ্রত্যাশী সক্রিয় ছাত্রলীগ নেতারা। ইতোমধ্যে পদ পেতে দলবল নিয়ে প্রতিনিয়তই ক্যাম্পাসে মিটিং-মিছিল করতে দেখা যাচ্ছে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের। নতুন কমিটির জন্য বিভিন্ন নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপও করেছেন তারা। গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হতে প্রত্যেকেই তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন ক্যাম্পাসে।

রাবি শাখা ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ পদে আসার জন্য বর্তমান কমিটির সহসভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন, মেজবাহুল ইসলাম, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সরকার (ডন), সাংগঠনিক সম্পাদক এনায়েত হক রাজু, মেহেদী হাসান মিশু, সহ-সম্পাদক হাসিবুল ইসলাম শান্ত, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব, উপধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাওহীদ দুর্জয়, কার্যনির্বাহী সদস্য আল মুক্তাদির তরঙ্গ ও মাদার বখস হল শাখার সহসভাপতি সাজ্জাদ হোসেন চেষ্টা-তদবির করে চলেছেন। ক্যাম্পাসে তারা অনুসারীদের নিয়ে নিয়মিত মিছিল-মিটিংও করছেন।

জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনায়েত হক রাজু বলেন, বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনিচ্ছা এবং আন্তরিকতার অভাবে রাবি ছাত্রলীগের কমিটি হতে বিলম্ব হচ্ছে। আমাদের স্থানীয় রাজনৈতিক অভিভাবকরা চায় আমাদের কমিটিটা দ্রুত হোক। কিন্তু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আগে হল সম্মেলন করার নামে সময়ক্ষেপণ করছেন। আমাদের স্থানীয় রাজনৈতিক অভিভাবক এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ভাই ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ হল কমিটির তাগিদ দিলেও সেটা তারা সেটা করেননি। আমরা চাই, এ মাসের মধ্যে রাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হোক।

উপধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাওহীদ দুর্জয় বলেন, দীর্ঘদিন রাবি ছাত্রলীগের কমিটি হচ্ছে না। এটা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশার জন্ম দিয়েছে। সামনে এমন একটা সময় আসছে, যে সময়টাতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার। কিন্তু সেখানে আমাদের মধ্যকার অনেকের কোনো পদই নেই। আমরা সেখানে ঐক্যবদ্ধ থাকব কীভাবে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে কোনো পদ না পাওয়ায় অনেকে রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। তাই রাবি ছাত্রলীগের মেরুদণ্ড ঠিক রাখতে দ্রুত কমিটি গঠনের দাবি জানাচ্ছি।

সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, আমরা সম্মেলন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্দেশ দিলেই সম্মেলনের আয়োজন করব।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক এবং রাবি ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মেহেদী হাসান তাপস বলেন, চলতি মাসেই রাবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়ার কথা রয়েছে। এ মুহূর্তে আপা (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) দেশের বাইরে আছেন। দেশে ফিরলে আপার সঙ্গে পরামর্শ করে নতুন কমিটি দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ঊষার আলো-এসএ